করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরি বাজারে যে ৮ যোগ্যতা দরকার

ছবি: সংগৃহীত

লকডাউনে বাসার মধ্য থাকার সময়েই সবার মনে হচ্ছিল করোনা পরবর্তী বিশ্ব, জীবনযাপন কেমন হবে। আসলে অনেক কিছুই অজানা। কোভিড পরবর্তী পৃথিবী কেমন হবে কারও কোনো ধারণা নেই। তবে এটা ঠিক যে, আমরা যেমন জীবনে বা পৃথিবী যেভাবে চলছিল সেভাবে আর চলবে না। আমাদের কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। প্রয়োজন হবে আরও বেশি দক্ষতার।  

করোনা পরবর্তী চাকরি জীবনে সবচেয়ে বেশি যে দক্ষতাগুলোর প্রয়োজন, তা তুলে ধরা হলো—

ডেটা লিটারেসি

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জ্বালানি ধরা হয় ডেটাকে। প্রতিটি সংস্থার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক বাধাগুলোর প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে পূর্বাভাস দিতে সক্ষম এই ডেটা। কোনোও মহামারি চলার সময়ে বা তার পরেও গ্রাহককে সঠিক পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহে আরও বেশি সহায়তা করতে সক্ষম। যে  প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক প্রবণতাগুলো বুঝবে এবং গ্রাহকের পরিবর্তিত চাহিদাগুলো বুঝতে পারবে ভবিষ্যতের কোনো মহামারি আসার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক প্রতিক্রিয়াটি তারাই জানাতে সক্ষম হবে। কোনা প্রকার ডেটা না থাকলে কোনো সংস্থা প্রায় অকেজো হয়ে যাবে। ডেটা বুঝে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারলে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সময়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাই ডেটা লিটারেসি সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে আগের চেয়ে আরও বেশি আবেদনের জায়গা হবে।
খাপ খাওয়ানো এবং নমনীয়তা

খাপ খাওয়ানো এবং নমনীয়তা

একটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত, বিভিন্ন সংস্থা বা অফিসগুলো যেভাবে চলেছে এবং কাজ করেছে সেগুলো পরিবর্তন হতে চলেছে। বিশ্ব ইতিমধ্যে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল, তবে করোনা মহামারি এটিকে দ্রুত ত্বরান্বিত করছে। এবার কিছু কিছু কাজ ‘জীবনের জন্য’ হবে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে কেউ সফল হতে চাইলে চির চেনা কর্মস্থলগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হতে হবে। অভিযোজনের এই ক্ষমতার পাশাপাশি দক্ষতায় ক্রমাগত এগিয়ে যেতে হবে এবং নিজেকে হালনাগাদ করতে হবে প্রতিনিয়ত।

ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও ব্যবহার বাড়ানো

কারোনোভাইরাস পরবর্তী বিশ্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা। কোভিড-১৯ মহামারি সংস্থা বা অফিসগুলোতে নানাবিধ ডিজিটাল রূপান্তর ঘটবে। বাস্তবতাটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়্যালিটি এবং রোবোটিকসের ব্যবসাগুলোই ভবিষ্যৎ। আর মহামারির কারণে এই প্রযুক্তিগুলো কাজে লাগাতে পারলে সেই প্রতিষ্ঠান বা অফিস দুর্দান্ত অবস্থানে থাকবে। করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে কেউ কোনোও কারখানায়, প্রতিষ্ঠান বা অ্যাকাউন্টিং অফিসে কাজ করেন তবে এসব প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলোর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি সেগুলো কার্যকরভাবে করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন।

সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন

কোভিড মহামারি সময়ে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের গুরুত্ব আমরা ইতিমধ্যে দেখে ফেলেছি। কার্যত পরিষেবাগুলোর সরবরাহ কীভাবে সচল রাখা হয়েছিল সে উপায় বের করা হয়েছিল। স্বাস্থ্যসেবাসহ অনেক ব্যবসা ভার্চ্যুয়াল করা হয়েছে। নতুন প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ হয়েছে। যেমন, মার্সিডিজ এফ ওয়ান-এর রেসিং গাড়িগুলোর কারখানা শ্বাসযন্ত্র সচল রাখার সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করেছে। আর করোনা উত্তর বিশ্বে আবিষ্কারের জন্য নতুন দক্ষতা প্রয়োজন, নতুন পণ্য এবং কাজের পদ্ধতিও আলাদা প্রয়োজন। এ জন্য মানুষের সৃজনশীলতা অপরিহার্য হতে চলেছে আগামী বিশ্বে।

ছবি: সংগৃহীত

সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি

কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতি থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্নির্মাণের জন্য অপরিহার্য দক্ষতা হলো সংকটপূর্ণ সময়ে চিন্তাভাবনা। মহামারির সময়ে দেখা গেছে ফেক নিউজ এবং ভুল তথ্যের ছড়াছড়ির প্রবণতা দেখা গেছে। আমাদের নেতা, ব্যবসায়ী এবং সরকারগুলো দোষ অন্যর ঘাড়ে ছাপিয়ে মনোযোগ এবং যথাযথ তদন্তকে অন্য খাতে সরানোর চেষ্টা করেছে। তাই বিশ্বাসযোগ্য এবং বিভিন্ন উৎসের উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্যের মূল্যায়ন করতে পারে এমন লোকদের মূল্য বাড়বে। সমস্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো তথ্যটি জানা উচিত তা বুঝতে সংস্থাগুলোকে সমালোচনামূলক চিন্তাধারার লোকেদের ওপর নির্ভর করতে হবে।

ডিজিটাল এবং কোডিং দক্ষতা

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ে ডিজিটাল রূপান্তর উৎসাহ পেয়েছে। ডিজিটাল বিপণন, কোডিং, ওয়েব ডেভলভমেন্টসহ ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদারদের প্রয়োজন ও গুরুত্ব এখনকার চেয়ে আরও বেশি হবে। যে ব্যক্তিরা অর্থনৈতিক মন্দা বা মহামারির সময় ডিজিটাল ব্যবসা চালিয়েছেন তারা অবশ্যই পরবর্তী নিয়োগের তালিকায় থাকবেন। আর এখন সব কোম্পানি বা সংস্থাগুলো এখন ডিজিটাল ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল দক্ষতায় কাজ করার সুযোগগুলো অগণিত।

ছবি: সংগৃহীত

নেতৃত্ব

ভবিষ্যতে মেশিন বা যন্ত্রের সহায়তায় কাজের ক্ষেত্র বাড়বে। সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ চলাসহ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এ সময়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব দরকার। করোনভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে কাজ করা লোকের জন্য বিভিন্ন সময়ে যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দক্ষতা, পেশাদারি একটি সেরা দলকে সামনে এগিয়ে নিতে দরকার। সেই নেতা তার দলকে চাহিদা মোতাবেক সহযোগিতার জন্য উৎসাহিত করবে।

আজীবন শেখার প্রবণতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, আজকের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বলে যা বিবেচিত আগামী পাঁচ বছরে তা ৩৫ শতাংশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর করোনাভাইরাস উত্তর সময়ে বাস্তবতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক থাকার একমাত্র উপায়, জীবনভর শেখার মানসিকতা।
করোনা পরবর্তী কঠোর চাকরির বাজারের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরতে বিশেষজ্ঞ কাজের দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদারদের চাহিদা থাকবে। এরাই চাকরি খুঁজে পেতে সম্ভবত কম লড়াই করবেন। সুসংবাদটি হলো আপনার দক্ষতা বাড়ানো কখনই সহজ ছিল না। কারোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য দক্ষতা তৈরি করতে হবে। নিখরচায় ও অনলাইন কোর্স নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে হবে। তথ্যসূত্র: ফোর্বস