‘মিস ইন্ডিয়া’র ফাইনালিস্ট কেন সরকারি চাকরি করতে চান
ঐশ্বরিয়া শিওরান। ‘মিস ইন্ডিয়া’র ফাইনালিস্ট। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। সে লক্ষ্য তিনি পৌঁছেও গেছেন। ‘মিস ইন্ডিয়া’র একসময়ের ফাইনালিস্ট দেশটির প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির পরীক্ষায় হয়েছেন ৯৩তম। আর সারা দেশে এ পরীক্ষায় তিনিসহ ১৯৭ জন নারী উতরে গেছেন।
ঐশ্বরিয়ার বাড়ি দিল্লিতে। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলেন। তাই মডেলিংয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাকেও এগিয়ে নিয়েছেন। তার ফলও পেয়েছেন। আর নিজের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি ভারত পেল একজন সুন্দরী আইপিএস অফিসার।
ভারতে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা ইউপিএসসি নেয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা। ইউপিএসসি পরীক্ষা হয় তিনটি ধাপে। প্রিলিমিনারি, মেনস ও ভাইভা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস), ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস (আইএফএস), ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসসহ (আইপিএস) প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় ভারত।
২০১৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ঐশ্বরিয়া শিওরান। পরীক্ষা শেষে ফলাফলে তিনি সারা ভারতে ৯৩তম হন। নিজের এ সাফল্যর কথা তিনি টুইটার হ্যান্ডেলে জানিয়ে দেন। তিনি সেখানে সরকারি চাকরি করার স্বপ্নের কথাও জানান।
ঐশ্বরিয়া ২০১৬ সালের ‘মিস ইন্ডিয়া’র ফাইনালিস্ট। জনপ্রিয় এ মডেলে প্রমাণ করেছেন, রূপে তিনি লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী। তিনি বলেন, ‘ঐশ্বরিয়া রাইয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে মা নাম রেখেছিলেন ঐশ্বরিয়া। মা চাইতেন আমি “মিস ইন্ডিয়া” হই। ২০১৬ সালে “মিস ইন্ডিয়া” ফাইনালিস্টের ২১ জনের মধ্যেও এসেছিলাম।’
নিজের শখ মডেলিংয়ে। ২০১৪ সালে ‘দিল্লি টাইমস ফ্রেশ ফেস’ দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঐশ্বরিয়া শিওরানের। ‘ফ্রেশ ফেস’–এ অংশ নেওয়াটা হুট করেই। এ প্রতিযোগিতায় জেতার পর সবাই তাঁকে ‘মিস ইন্ডিয়া’তে অংশ নিতে বলেন। সেখান থেকেই মডেলিংয়ে হাতেখড়ি ঐশ্বরিয়ার। এররপর একাধিক ডিজাইনার ও ফ্যাশন উইকে অংশ নেন ঐশ্বরিয়া।
ইউপিএসসির ভাইভা নিয়ে ঐশ্বরিয়া শিওরান বলেন, ‘আমি তখন দিল্লির শ্রী রাম কলেজ অব কমার্সে পড়াশোনা করি। মায়ের সঙ্গে একদিন শপিং মলে গিয়েছিলাম। সেখানেই “ফ্রেশ ফেস”–এর ইভেন্ট হচ্ছিল, হঠাৎ করেই নাম লেখাই। সেখানে জয়ী হওয়ায় পরই “মিস ইন্ডিয়া”য় অংশ নিই। ইউপিএসসি ভাইভা বোর্ডের অনেকেই আমাকে চিনতে পেরেছিলেন।’
পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলেন ঐশ্বরিয়া শিওরান। বিতর্ক করতেন নিয়মিত। বিতর্ক ক্লাবের সদস্যও ছিলেন। তাঁর বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল। মডেলিংয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাকেও এগিয়ে নেন। ‘মিস ইন্ডিয়া’র ফাইনালিস্ট হওয়ার মডেলিং করেন শখের বশেই। এরপর মডেলিং থেকে নেন দুই বছরের বিরতি। এরপরই পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাজিমাত করেন। এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।
সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার পথে পরিশ্রম করেছেন। ছাড় দিয়েছেন অনেক কিছু। ‘মিস ইন্ডিয়া’র ফাইনালিস্টরা মডেলিংসহ বলিউডে ক্যারিয়ার গড়েছেন। সেটা নিয়ে তাঁর অবশ্য আক্ষেপ নেই। কারণ, তাঁর লক্ষ্য ছিল সরকারি কর্মকর্তা হওয়া। পড়াশোনার সময় মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন ঐশ্বরিয়া। নিয়মিত নিয়েছেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। ফলাফল ৯৩তম।
টুইটারের ঐশ্বরিয়া শিওরানের সফলতা নিয়ে অনেকে সরস কিছু মন্তব্য করলে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। তবে ঐশ্বরিয়ার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ভারতের প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তারাও। অধিকাংশের মতামত, সুন্দরীরা বুদ্ধিমান হন না, এটা যে সঠিক নয়, তা প্রমাণ করলেন তিনি।
ভারতের সে বছরের পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার প্রথম হয়েছেন প্রদীপ সিং। আর সারা ভারতে নারীদের মধ্য প্রথম হয়েছেন প্রতিভা ভার্মা। ২০১৯ সালে সারা ভারতে ৮২৯ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্য নারী ছিলেন ১৯৭ জন। ২০১৮ সালের চেয়ে নারীদের সরকারি চাকরি পরীক্ষায় নারীর অংশ গ্রহণের হার ও চাকরি পাওয়ার হার দুটোই বেড়েছে ভারতে। আর আগের বছরের চেয়ে ২০১৯ সালে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ নারী ইউপিএসসির তিন ধাপের প্রথম দুই ধাপ পেরিয়েছেন। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, দ্য প্রিন্ট ও পিটিআই