৩৪০০ পদে চাকরির জন্য আবেদন ১৭ লাখ

২০১৮ সালেও এই পদে ৩২ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন। প্রশাসনিক জটিলতায় ওই পরীক্ষা পরে স্থগিত করা হয়।
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

ভারতের গুজরাট রাজ্যে ৩ হাজার ৪০০ পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৭ লাখ চাকরিপ্রার্থী। আবেদনপত্রে ভুল থাকার কারণে ১ লাখ প্রার্থীর আবেদনপত্র বাতিল হওয়ার পর এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। আবেদনকারীর হিসাবে ১টি পদের বিপরীতে লড়বেন প্রায় ৫০০ প্রার্থী।

দেশটির লেবার অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালাতি মিনিস্টার নামের এই পদে গত ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৪০০ পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগামী জুলাইয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তালাতি মিনিস্টার ভারতের একটি প্রশাসনিক পদ। গ্রাম পঞ্চায়েতের সহায়তায় কর আদায় করা এই কর্মীর দায়িত্ব। এ পদের বেতন ১৯ হাজার ৯৫০ রুপি (২৩ হাজার ৭৭৯ টাকা)। যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পাস বা দশম ক্লাসের বোর্ড পরীক্ষা বা দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষায় পাস থাকলেই আবেদন যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগরের বাসিন্দা তেজস্বী প্যাটেল ২০১৯ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। গত তিন বছরেও তিনি কোনো চাকরি পাননি। তিনিও তালাতি মিনিস্টার পদে আবেদন করেছেন।

তেজস্বী প্যাটেল বলেন, ‘প্রকৌশলী হওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। পড়াশোনা এত সহজ ছিল না। কিন্তু পাস করার তিন বছর পরও আমি কোনো চাকরি পাচ্ছি না। আমার পক্ষে গুজরাটের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার সেই সামর্থ্য নেই। বাড়িতে পরিস্থিতিতে আরও খারাপ হচ্ছে। তাই প্রকৌশল পদে চাকরি খোঁজার বদলে এ পদে আবেদন করতে বাধ্য হয়েছি।’

যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা যে সবাই বেকার—এ কথা সত্য নয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের অনেকেই অন্য জায়গায় চাকরি করেন। জায়গা বদল করার জন্য তাঁরাও আবেদন করেছেন।
ব্রিজেশ মির্জা, কর্মসংস্থান মন্ত্রী

ময়ূর প্যাটেল নামের আরেকজনও এই পদে আবেদন করেছেন। তিনি ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ২০১৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা নেই বলে এত দিন কোনো চাকরি পাননি। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো উপায় না পেয়ে এই পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছি। পরিবারে অর্থনৈতিক চাপ কমাতে এই আবেদন করেছি।’

গুজরাটের ছাত্র নেতা যুবরাজ সিং জাদেজা বলেন, এটাই মূলত গুজরাটের আসল চিত্র। রাজ্যে এখন চরম বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। তরুণেরা চাকরি পাচ্ছেন না। এ কারণে দ্বাদশ শ্রেণি পাসের চাকরির পদে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও প্রকৌশলী পাস তরুণেরা আবেদন করছেন। ২০১৮ সালেও এই পদে ৩২ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন। প্রশাসনিক জটিলতায় ওই পরীক্ষা পরে স্থগিত করা হয়।

আরও পড়ুন

গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মনিশ দোশী বলেন, গুজরাট সরকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। রাজ্যের তরুণেরা বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

রাজ্যের কর্মসংস্থান মন্ত্রী ব্রিজেশ মির্জা বলেন, ‘যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা যে সবাই বেকার—এ কথা সত্য নয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের অনেকেই অন্য জায়গায় চাকরি করেন। জায়গা বদল করার জন্য তাঁরাও আবেদন করেছেন। রাজ্য সরকার সম্প্রতি ৯০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আর সবার দৃষ্টি থাকে মূলত সরকারি চাকরির দিকে। এ কারণে আবেদনকারীর সংখ্যা বিপুল মনে হয়।’

রাজ্য বিধান সভায় সম্প্রতি জানানো হয়, গত দুই বছরে রাজ্যে ১ হাজার ২৮৭ জন সরকারি চাকরি পেয়েছেন। রাজ্যে এখনো ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩৬ জন শিক্ষিত বেকার আছেন।