অ্যামাজনে ৫ লাখ কর্মীর কাজ করবে রোবট, কর্মসংস্থানে প্রভাবটা কেমন

ছবি: অ্যামাজনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রের ধরন বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যামাজন অদ্বিতীয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিয়োগদাতা। ১৫ লাখের বিশাল কর্মী বাহিনী খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির। তবে নতুন এক মোড় নিতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যামাজনের শীর্ষ নির্বাহীরা রোবটের মাধ্যমে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের কাজ প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।

রোবটের মাধ্যমে চাকরি প্রতিস্থাপন

২০১৮ সালের পর থেকে অ্যামাজনের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কর্মী সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ লাখে। কিন্তু কোম্পানির অটোমেশন টিমের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে রোবট ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নেবে। এতে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন এড়ানো যাবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি পণ্য প্যাকেজ ও সরবরাহে এতে সাশ্রয় করবে প্রায় ৩০ সেন্ট।

আরও পড়ুন

অটোমেশন ও ভবিষ্যতের লক্ষ্য

গত বছর বোর্ডকে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে অ্যামাজন কর্মকর্তারা বলেছেন, রোবোটিক অটোমেশন তাদের আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কর্মী যোগ না করেই ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দেবে। তাঁরা আশা করছেন, ২০৩৩ সালের মধ্যে পণ্যের বিক্রি দ্বিগুণ হবে অথচ জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

দ্রুত ডেলিভারির জন্য নকশাকৃত নতুন গুদামগুলোতে অ্যামাজন এমন কাঠামো গড়ে তুলছে, যেখানে মানুষের উপস্থিতি থাকবে ন্যূনতম। কোম্পানির রোবোটিকস বিভাগ দীর্ঘ মেয়াদে তাদের মোট কার্যক্রমের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অটোমেট করার লক্ষ্য স্থির করেছে।

তবে নথিতে দেখা যায়, কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় কোম্পানি ‘অটোমেশন’ বা ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শব্দগুলো এড়িয়ে চলে বরং ‘উন্নত প্রযুক্তি’ বা ‘কোবট’ (collaborative robot) শব্দ ব্যবহার করতে চায়—যা মানব-রোবট সহযোগিতার ভাবনা প্রকাশ করে।

আরও পড়ুন

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অ্যামাজনের মতো করে অটোমেশনকে কাজে লাগানোর এত বড় প্রণোদনা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই—বলছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও এমআইটির অধ্যাপক ড্যারন আসিমোগলু। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ নিয়োগদাতা কোম্পানিটি পরিণত হবে নেট চাকরিনাশক প্রতিষ্ঠানে, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান নয়।’

অ্যামাজনের প্রতিক্রিয়া

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর দেখা নথিগুলো অসম্পূর্ণ এবং তা কোম্পানির সামগ্রিক নিয়োগনীতিকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না বলে মন্তব্য করেছে অ্যামাজন। কোম্পানির মুখপাত্র কেলি ন্যানটেল বলেন, চলতি ছুটির মৌসুমে অ্যামাজন ২ লাখ ৫০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

অ্যামাজনের বিশ্বব্যাপী পরিচালন বিভাগের প্রধান উদিত মাদান বলেন, ‘একটি অংশে দক্ষতা বৃদ্ধিই পুরো প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে না। এটি কোনো নির্দিষ্ট কমিউনিটি কিংবা পুরো দেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা দেখতে হবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে।’

আরও পড়ুন

চাকরির ওপর প্রভাবটা কেমন—

যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র কয়েকটি কোম্পানির বেতনভুক্ত ৬ লাখের বেশি কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। ডেলিভারি কোম্পানি ফেডেক্সের আনুমানিক ৫ লাখ ৫০ হাজার কর্মচারী রয়েছেন।

মানুষের কাজ বা মজুরির ওপর রোবটের প্রভাব নিয়ে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় একটি রোবট ১ হাজার কর্মীর কাজ করেছে এবং এতে ওই কোম্পানির মজুরির পেছনে খরচ হ্রাস হয়েছে ০.৪২%। আর ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট করেছে। পাঁচ বছর পর ২০২৫ সালে এসে অনেক কোম্পানি রোবটে বিনিয়োগ করছে, মজুরির পেছনে খরচ কমাতে।

তবে অ্যামাজন এক ই–মেইল বার্তায় গণমাধ্যম সি–নেট–কে জানিয়েছে, ‘কর্মসংস্থান তৈরিতে আমাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবেই থাকবে, বিশেষ করে উচ্চ বেতনের পদের জন্য।’