বিশ্বের ৩০ কোটি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন যে কারণে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশ্বের ৩০ কোটি পূর্ণকালীন কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। নানা প্রতিষ্ঠান এখন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় বিভিন্ন কাজ করছে। আগে থেকেই অনেকের ধারণা ছিল, প্রযুক্তি মানুষের কাজ কেড়ে নেবে। আর এবার মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশ্বের ৩০ কোটি পূর্ণকালীন কর্মী চাকরি হারাবেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মোট কাজের এক-চতুর্থাংশ কাজ করে ফেলতে পারে। এ ছাড়া এর কারণে নতুন চাকরি ও উত্পাদনশীলতাও বৃদ্ধি হতে পারে। আর বিশ্বব্যাপী উত্পাদিত পণ্য ও পরিষেবার মোট বার্ষিক মূল্য ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি এখনো বহুলাংশে মানুষের ওপর নির্ভরশীল। জেনারেটিভ এআইয়ের কনটেন্টকে এখন মানুষের তৈরি কনটেন্ট থেকে আলাদা করা যায়। এটাই সবচেয়ে বড় অগ্রগতি বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

যুক্তরাজ্য সরকার এআইয়ে বিনিয়োগের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। বলা হচ্ছে, শেষমেশ এটি অর্থনীতির উত্পাদনশীলতা চালনা করবে। এ কারণে জনসাধারণকে এর প্রভাব সম্পর্কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তিমন্ত্রী মিশেল ডোনেলান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এআই যুক্তরাজ্যে পরিপূরকভাবে কাজ করছে, এতে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। চাকরি কেড়ে নেওয়ার পরিবর্তে এআই অন্যদের পাশাপাশি ভালো কাজ করছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআইয়ের প্রভাব সেক্টর ভেদে আলাদা আলাদা হবে—প্রশাসনিক কাজের ৪৬ শতাংশ ও আইনি পেশার ৪৪ শতাংশ কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হতে পারে। আর শুধু নির্মাণ খাতের ৬ শতাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ৪ শতাংশ কাজ এআই করতে পারবে।

এর আগে বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এআইয়ের মাধ্যমে ছবি আঁকার কারণে নিজেদের কর্মসংস্থানের ক্ষতি হতে পারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বেশ কয়েকজন শিল্পী।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দ্য অক্সফোর্ড মার্টিন স্কুলের ফিউচার অব ওয়ার্ক ডিরেক্টর কার্ল বেনেডিক্ট ফ্রে বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে জেনারেটিভ এআইয়ের কারণে কত সংখ্যক কর্মী চাকরি হারাবেন, তা জানার কোনো উপায় নেই।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত অনিশ্চিত ছিল। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যদ্বাণীকে খুব বড় করে দেখার কিছু নেই।
টরস্টেন বেল, দ্য রেজলুশন ফাউন্ডেশন থিঙ্কট্যাংকের প্রধান নির্বাহী

ইতিমধ্যে সৃজনশীল জগতে অনেক কাজই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করে দিচ্ছে। ছড়া লেখা, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল, বইয়ের অডিও ভাষ্য তৈরি—এসব কাজের জন্য মানুষের প্রয়োজন পড়ছে না।

কার্ল বেনেডিক্ট বলেন, সাংবাদিকেরা এ ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। এতে এই চাকরিতে মজুরি কমে যাবে। তিনি বলেন, জিপিএস প্রযুক্তি ও উবারের মতো প্ল্যাটফর্ম আসায় হঠাৎ লন্ডনের সব রাস্তায় চলাচলের ভাড়া কমে যায়। এই পেশায় টিকে থাকতে অন্য চালকেরাও নিজেদের মজুরি কমিয়ে নিয়েছিলেন। মজুরি কমে গেলেও এই পেশায় থাকা চালকের সংখ্যা কিন্তু কমেনি।

কার্ল বেনেডিক্ট আরও বলেন, আগামী কয়েক বছরে জেনারেটিভ এআই সৃজনশীল কাজের বিস্তৃত ক্ষেত্রে একই রকম প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষণার উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০ শতাংশ কর্মী এমন পেশায় আছেন, ১৯৪০ সালে যেসব পেশার অস্তিত্ব ছিল না। অন্য আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮০–এর দশক থেকে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার চেয়ে দ্রুত কর্মীদের কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। আর জেনারেটিভ এআই যদি আগের তথ্যপ্রযুক্তি অগ্রগতিগুলোর মতো হয়, তাহলে এটি অদূর ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান হ্রাস করতে পারে।

এআইয়ের প্রভাব সেক্টর ভেদে আলাদা আলাদা হবে—প্রশাসনিক কাজের ৪৬ শতাংশ ও আইনি পেশার ৪৪ শতাংশ কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হতে পারে। আর শুধু নির্মাণ খাতের ৬ শতাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ৪ শতাংশ কাজ এআই করতে পারবে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক দ্য রেজলুশন ফাউন্ডেশন থিঙ্কট্যাংকের প্রধান নির্বাহী টরস্টেন বেল বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত অনিশ্চিত ছিল। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যদ্বাণীকে খুব বড় করে দেখার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি কীভাবে বিকশিত হবে বা এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করে এটিকে একীভূত করবে, তা আমরা জানি না। এর অর্থ এই নয় যে এই আমাদের কাজের পদ্ধতিতে ব্যাঘাত ঘটাবে না। আমাদের উচ্চ উৎপাদনশীল কাজ ও সস্তা পরিষেবা থেকে সম্ভাব্য জীবনমানের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। পাশাপাশি যদি পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থা ও অর্থনীতির ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’