নন–ক্যাডারের ‘নতুন পদ্ধতি’ নিয়ে হতাশায় চাকরিপ্রার্থীরা

৬ দফা দাবিতে মানববন্ধন হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েছবি: সংগৃহীত

নন–ক্যাডার নিয়োগের নতুন পদ্ধতি নিয়ে হতাশায় আছেন বিসিএস নন–ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) যদি ৪০তম বিসিএস থেকে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে, তাহলে কেবল ৪০তম বিসিএসসের নন–ক্যাডার প্রার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, পরের ৪১, ৪৩, ৪৪তম বিসিএসে যাঁরা নন–ক্যাডার তালিকায় থাকবেন, তাঁরাও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই জনস্বার্থে এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, পিএসসির প্রতি তাঁদের আস্থা আছে। তাঁরা মনে করেন, পিএসসি বেকারবান্ধব। সবার সুবিধার কথা চিন্তা করে পিএসসি নতুন পদ্ধতিতে নন–ক্যাডার নিয়োগ থেকে সরে আসবে। যদি নতুন পদ্ধতি চালু করতেই হয়, তাহলে তা চলমান বিসিএস থেকে না করে ৪৫তম বিসিএস শুরুর সময় থেকে চালু করার আহ্বান জানান তাঁরা। ৪০তম বিসিএসের কয়েকজন নন–ক্যাডার চাকরিপ্রার্থী বলেন, করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে ৪০তম বিসিএসের প্রার্থীদের। অনেক দিন ধরে তাঁরা এই বিসিএসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এরপর যদি নতুন পদ্ধতি তাঁদের ওপর প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তাঁরা আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন।

আরও পড়ুন

৬ অক্টোবর চাকরিপ্রার্থীরা নন–ক্যাডার নিয়োগের নতুন পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ছয় দফা নিয়ে প্রথমবারের মতো পিএসসির সামনে মানববন্ধন করেন। পরে তাঁদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। গত বৃহস্পতিবার ‘৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রত্যাশী ও চাকরিপ্রার্থী বেকার ছাত্রসমাজ’-এর ব্যানারে সকাল ১০টা থেকে একযোগে দেশের ৮ বিভাগের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে ১৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে জানানো ছয় দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করছেন

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত সমাবেশে যে ছয় দফা দাবি জানানো হয়, সেই দাবি দ্রুত সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) মেনে নিতে আহ্বান জানানো হয়। পিএসসি যদি ছয় দফা দাবি আগামীকাল রোববারের মধ্যে মেনে না নেয়, তাহলে সারা দেশে লাগাতার কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

চাকরিপ্রার্থীদের ছয় দফা দাবি

প্রার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো, বিজ্ঞপ্তির পর ৪০ থেকে ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারি নন-ক্যাডার পদ বিভাজনের মাধ্যমে পদসংখ্যা নির্ধারণের বেকারবিরুদ্ধ ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল, ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের পদ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসকে দেওয়ার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ইতিহাসের দীর্ঘকালীন ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা, যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিএসসি ৩৪ থেকে ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই একই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, ‘যার যা প্রাপ্য, তাকে তা-ই দেওয়া হবে’—পিএসসির এমন বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বেকারত্ব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করে বেকারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং গত এক যুগে পিএসসি যে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও বেকারবান্ধব প্রতিষ্ঠান ছিল, সে ধারা অব্যাহত রাখা।

পিএসসি যা বলছে

বিসিএস নন-ক্যাডার পদে চাকরিপ্রার্থীদের মানববন্ধনের পর নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য নতুন কোনো নিয়ম করা হয়নি। নন-ক্যাডার নিয়োগের পদ উল্লেখ করার বিধিটি সরকার ২০১০ সালে করে। সেটি ২০১৪ সালে সরকারই সংশোধন করে। পিএসসি সরকারের সেই বিধি অনুসরণ করে। এ নিয়োগবিধি আগে যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে। বর্তমান কমিশন নন-ক্যাডার নিয়োগবিধিতে কোনো পরিবর্তন করেনি। কমিশন নিজেদের কোনো সিদ্ধান্ত চাকরিপ্রার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে না, বরং সরকারের বিধিতে যা বলা আছে, সেটিই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে তারা।

৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অপেক্ষমাণ নন-ক্যাডার প্রার্থীরা নন-ক্যাডারে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আগের নিয়মে চাকরি পাওয়ার দাবি জানিয়ে ৬ অক্টোবর পিএসসির সামনে মানববন্ধন করেন। পরে তাঁরা পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গেও দেখা করে তাঁদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি বলছে, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার ২০১০ সালের বিধি ২০১৪ সালে সংশোধন করে। সরকারের ওই বিধিতে বলা আছে, বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২৮ থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসেও পদসংখ্যা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি, তাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী যেটা বলবে, সেটাই করা হবে। যেহেতু বিধিতে পদ উল্লেখ করার কথা বলা আছে, তাই ৪৫তম বিসিএস থেকে পিএসসি পদ উল্লেখ করার জোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেখানে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডারের পদ উল্লেখ থাকার জন্য কাজ করা হচ্ছে। ক্যাডার যেমন পছন্দ করা যাবে, তেমনি নন-ক্যাডারের পদও পছন্দ করার সুযোগ রাখা হবে।

পিএসসি সূত্র জানায়, বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীরা মনে করছেন পিএসসি নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এটি ঠিক নয়। পিএসসি কেবল সরকারের বিধি বাস্তবায়ন করার কাজ করছে। অনেকে মনে করতে পারেন, নন-ক্যাডারে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের মধ্যে পদ ভাগ করলে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদ কমে যাবে। কিন্তু যাঁর যা প্রাপ্য, তার বাইরে তো দেওয়া যাবে না। যদি ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদ সবাইকে দেওয়া হয়, তাহলে অন্য বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরাও তা-ই চাইতে পারেন। কিন্তু তা দেওয়া সম্ভব হবে না। যাঁর যেটুকু প্রাপ্য, তা যাতে নিশ্চিত হয়, সে চেষ্টাই করছে পিএসসি।