জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক প্রিয়া দাশ

প্রিয়া দাশ
ছবি: সৌরভ দাশ

‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির কিছুদিন যেতে না যেতেই হতাশ হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছিল, জীবনের সব শেষ। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ। পরে মনস্থির করলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েই ভালো ক্যারিয়ার গড়ব। রুটিনমতো পড়াশোনা শুরু করলাম। কঠোর পরিশ্রমের পর পেলাম স্বপ্নের বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের চাকরি।’ এভাবে নিজের সফলতার কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা প্রিয়া দাশ। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ১৮১ জন। তাঁদের মধ্যে একজন তিনি।

প্রিয়া দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও যে বিসিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের চাকরির মতো আকর্ষণীয় চাকরিগুলো পাওয়া যায়, তা আমার অনেক সহপাঠী ভাবতে পারতেন না। তাঁরা সর্বোচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির স্বপ্ন দেখতেন। আমি মানতে পারতাম না। বড় স্বপ্ন দেখতে তো দোষের কিছু নেই।’

চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক পাস করেন প্রিয়া দাশ। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। সেখানে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন। শান্তা বলেন, ‘যেহেতু স্বপ্ন ছিল বড়, তাই স্নাতকের তৃতীয় বর্ষ থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিই। প্রথমে বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছিল। বিশেষ করে গণিতে। নিয়মিত অনুশীলন করার পর সবকিছু সহজ হতে থাকে।’

প্রিয়া দাশ বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কম সুযোগ-সুবিধা পান। কিন্তু তারপরও এখানকার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনার মাধ্যমে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য প্রথমে নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা করলে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব।

সহকারী পরিচালক পদে সাধারণত তিন ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ধাপগুলো হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। তিনটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রিয়া দাশ শান্তা। তিনি বলেন, ‘সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেতে হলে গণিত ও ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। তাই আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, সেটা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো গণিত ও ইংরেজিতে বেসিক জ্ঞান থাকার পাশাপাশি প্রশ্নের ধরন বোঝা।’

চাকরির প্রস্তুতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় শুরু করলে সফল হওয়া অনেক সহজ বলে জানান প্রিয়া দাশ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বা চতুর্ষ বর্ষ থেকে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এটা করলে আপনি মানবিক, বিজ্ঞান না ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে পড়েছেন সেটার পার্থক্য আর থাকে না। কারণ, স্নাতক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির প্রাথমিক প্রস্তুতিও আপনার রপ্ত হয়ে যাবে। পরে আর হতাশ হতে হবে না।’

সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেতে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো আগে সমাধান করার পরামর্শ দেন শান্তা। তাঁর মতে, ‘আগের প্রশ্নগুলো শুরুতেই সমাধান করলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। তাহলে বোঝা যায় আপনি কোনটা পড়বেন আর কোনটা বাদ দেবেন। এ ছাড়া পরীক্ষার সময় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কোন প্রশ্নের উত্তর কীভাবে করলে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা শেষ করা যাবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা হয়ে যায়।’