বিসিএস ভাইভায় যেসব প্রশ্ন বন্ধ হয়েছে ও যে প্রশ্ন বন্ধ করবে পিএসসি

বিসিএস ভাইভার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। মডেল: ইয়াসফি ও হাদী
ছবি: খালেদ সরকার

বিসিএসের ভাইভায় যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, তা প্রয়োগ করা শুরু করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বিসিএসের ভাইভায় গৎবাঁধা প্রশ্ন থেকেও সরে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিএসসি। তবে সবকিছু এক দিনেই পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মনে করে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান। পিএসসি মনে করে সংস্কার হতে সময় লাগে, তারাও সংস্কার শুরু করেছে। ফল পেতে কিছু সময় লাগবে।

বিসিএসের ভাইভায় এখন থেকে আর দেশের নাম, মুদ্রার নাম বা রাজধানীর নাম জিজ্ঞেস করা হয় না বলে জানিয়েছে পিএসসি সূত্র। ভাইভায় বেশ কিছু সংস্কারের অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্রমান্বয়ে গ্রামের বাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়, কোন বিষয়ে পড়ছেন-এগুলো প্রশ্নও করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের। চাকরি-প্রার্থীর ধর্ম কী জানতে চাইলেও প্রার্থীর প্রতি একধরনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করে পিএসসি। তাই ধর্ম নিয়ে বলাও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু সংস্কার আনার কথা ভাবছে পিএসসি।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের সামনে প্রার্থীর রোল নম্বর ছাড়া যেন আর কিছুই না থাকে, তা করার চেষ্টা করছি। কেননা প্রার্থী কোথা থেকে পড়েছেন, কোন জেলায় বাড়ি, ধর্ম কী, কোন বিষয় থেকে পাস করেছেন-এই প্রশ্নের উত্তরগুলো জানা বোর্ডের সদস্যদের জন্য জরুরি নয়। এসব প্রশ্নের উত্তর ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের প্রভাবিত করতে পারে। যেমন বোর্ডের সদস্য এমন একটি জেলার, ভাইভা প্রার্থীও ওই জেলার বা ভাইভা বোর্ডের সদস্য-এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন, প্রার্থীও ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। এর ফলে বোর্ডের সদস্যরা দুর্বলতা দেখান। আবার উল্টোও হতে পারে। বোর্ডের সদস্য হয়তো কোনো জেলার মানুষকে পছন্দ করেন না। তিনি জেনে গেলেন প্রার্থী ওই জেলার, তাহলেও প্রার্থীর নম্বরে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। যে প্রশ্নগুলো শুধু ভাইভা প্রার্থীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করে, সেগুলো করতেই ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে সংস্কার শুরু হয়ে গেছে। পুরোপুরি সংস্কার হতে সময় লাগবে।

ছবি: সংগৃহীত

ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের সৃজনশীল প্রশ্ন করতে জোর দেওয়া হবে বলে জানায় পিএসসি। এ জন্য বোর্ডের সদস্যদের পড়ালেখা করে আসতে হবে। কোনো প্রার্থীকে প্রশ্ন করার পর যাচাই করা হবে, তিনি কতটা সঠিকভাবে উত্তর দিলেন, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা পারদর্শী, যা উত্তর দিলেন তার গভীরতা কতটা, পরিসংখ্যান দেখিয়ে উত্তর দিলেন কি না, ঘাবড়ে গেলেন কি না-এসব। কোনো প্রার্থী সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও যদি শুধু স্মার্টভাবে সব কথার জবাব দেন, সে জন্যও তিনি নম্বর পাবেন। কোচিং থেকে শিখিয়ে দেবে উত্তর আর সেই উত্তর এসে ভাইভা বোর্ড গড়গড় করে বলে যাবেন আর বোর্ডের সদস্যরা গদগদ হয়ে ভালো নম্বর দেবেন-এই দিন শেষ হচ্ছে। মেধাবী যাঁরা, দক্ষ যাঁরা-তাঁরাই বিসিএস ক্যাডার হবেন বলেও জানায় পিএসসি।

আরও পড়ুন

পিএসসি সূত্র জানায়, ভাইভা প্রার্থীরা যেসব সনদ নিয়ে আসেন, তা ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা শুধু দেখেন। যাচাই করার কোনো ক্ষমতা তাঁদের নেই। তাই এই সনদ নিয়ে আসা নিরর্থক। তবে সামনে ভাইভা এমন হবে, সেখানে প্রার্থীকে কোনো কাগজ আনতে হবে না। প্রার্থীর কাগজ আগেই পিএসসি ভেরিভাই করবে। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের কাগজপত্র যাচাই করে দেখার উপায় আছে। এটি দেখতে বোর্ড প্রতি কাগজে পাঁচ টাকা করে নেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে যাতে যাচাই করার পদ্ধতি থাকে, তা করা গেলে বোর্ডে আর সনদ যাচাই করার প্রয়োজন পড়বে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে পিএসসি এই চাহিদার কথা জানিয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রকল্প চালুও করা হবে বলে জানায় পিএসসি।

আরও পড়ুন

এদিকে ৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে। পিএসসি জানিয়েছে, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে এ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বের এ মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১২ অক্টোবর। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নেবে পিএসসি।

আরও পড়ুন