বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্নে পরিবর্তন আনছে পিএসসি

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
ফাইল ছবি

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় বেশ কিছু পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে। প্রার্থীকে হেয় বা খাটো করা হয় এমন প্রশ্ন আর করা হবে না। এ ছাড়া প্রার্থীর ব্যক্তিগত বেশ কিছু প্রশ্ন আর না করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি।

পিএসসি সূত্র জানায়, অনেক সময় প্রার্থীকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু কিছু প্রার্থী সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে অনেক পরীক্ষক বলেন, তিনি কী পড়াশোনা করেছেন যে এটা জানেন না! ‘আপনি এটা জানেন না আর বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসেছেন?’ এতে প্রার্থী মন খারাপ করতে পারেন বা ঘাবড়ে যেতে পারেন। এমন কোনো কথা আর বলা যাবে না।

প্রার্থী যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে তাঁকে ভাইভা বোর্ডে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার কারণে হেয়, খাটো কিংবা কটাক্ষ করা যাবে না। প্রশ্নের উত্তর বলতে না পারার কারণে তিরস্কারও করা যাবে না। এ ছাড়া প্রার্থীকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করা যাবে না, তাঁকে ‘আপনি’ বলতে হবে।

সম্প্রতি পিএসসির সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সভায় বলা হয়, প্রার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাঁর ধর্ম কী, কোন জেলায় তাঁর বাড়ি—এমন প্রশ্ন করা যাবে না। যেসব প্রশ্নে প্রার্থীর প্রতি কোনো সদস্যের ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় কিংবা ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্নের উত্তরে তাঁর প্রতি প্রভাব বিস্তার করে—এমন প্রশ্নও করা যাবে না।

মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে প্রার্থীকে স্বাভাবিক আচরণ করার পরিবেশ তৈরি করার বিষয়টিও সভাতে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রার্থী কতটা জানেন, সেটি বের করে আনতে হবে। যে প্রশ্নে প্রার্থী ঘাবড়ে গিয়ে তাঁর স্বাভাবিক আচরণ ব্যাহত হতে পারে—এমন প্রশ্ন করা যাবে না।

পিএসসি সূত্র জানায়, ভাইভা বোর্ডে যেসব পরীক্ষক থাকেন, তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দ বা অপছন্দ থাকে। যেমন কোনো পরীক্ষক তাঁর জেলার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা সমধর্মের কোনো প্রার্থীকে পেলে তাঁর প্রতি দুর্বলতা তৈরি হতে পারে, এমনকি নিজ জেলার না বা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের না এমন প্রার্থীর প্রতি নেতিবাচকও হতে পারেন। এগুলো যাতে না হয়, সে জন্য প্রার্থীকে জেলা, ধর্ম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না।

প্রার্থীর স্বাভাবিক আচরণ বোর্ডে আনার জন্য প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখানো যাবে না। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে, সেটির উত্তর কী সেটাও বলে দেওয়া যাবে না। অনেক সময় প্রার্থীকে ভয় দেখালে বা প্রশ্ন না পারলে এমন কথা বলা হয়, যাতে প্রার্থী তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়ে ফেলতে পারেন—এমন প্রশ্ন করা যাবে না। প্রার্থীর আচরণ স্বাভাবিক করতে সমর্থন দিতে হবে।

জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা পিএসসিকে এমন একটি স্থানে নিয়ে যেতে চাই, যাতে এ নিয়ে মানুষের প্রশ্ন না থাকে। এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ জন্য সব পরীক্ষায় আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।

এরই অংশ হিসেবে ভাইভা বোর্ডেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। বোর্ডে প্রার্থীর রোল নম্বর ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। যাতে তাঁর ব্যক্তিগত কোনো তথ্য কোনো পরীক্ষককে প্রভাবিত করতে না পারে। তবে এই পরিবর্তনগুলো এক দিনে আসবে না। সময় লাগবে। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।’