পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের দাবি

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে কয়েক শ চাকরিপ্রার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদে ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে কয়েক শ চাকরিপ্রার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন। পিটিআইয়ের সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া পাঁচ বছর ধরে আটকে আছে এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া চার বছর ধরে আটকে আছে বলে জানান মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রার্থী বলেন, ‘পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অনেকের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকে এই দুই চাকরির আশায় অন্য চাকরিতে আবেদন করেননি। কারণ, আমাদের মধ্যে অনেকে ইনস্ট্রাক্টর পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আবার অনেকে পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। দীর্ঘদিনেও নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। দুই পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হোক।’

বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে কোটা সুবিধা চেয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মামলার কারণে দুই পদেই নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে আছে। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চাকরি করেন। তাই অধিদপ্তর যদি তাঁদের ডেকে মামলা তুলে নিতে বলে, তাহলে আমার মতো কয়েক হাজার বেকারকে আর চাকরির জন্য পথে দাঁড়াতে হয় না।
যদুপতি বর্মন, চাকরিপ্রত্যাশী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যদুপতি বর্মন বলেন, ‘বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে কোটা সুবিধা চেয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মামলার কারণে দুই পদেই নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে আছে। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চাকরি করেন। তাই অধিদপ্তর যদি তাঁদের ডেকে মামলা তুলে নিতে বলে, তাহলে আমার মতো কয়েক হাজার বেকারকে আর চাকরির জন্য পথে দাঁড়াতে হয় না।’

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ঈদে আমিন বলেন, ‘এর আগে ২০১৪ সালেও পিটিআই সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অথচ এবার মামলার অজুহাতে আমাদের পাঁচ বছর ধরে ঘোরানো হচ্ছে। আগে পরীক্ষা নেওয়া হলেও এবার কেন নেওয়া হচ্ছে না?’

আরও পড়ুন

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাছাই পরীক্ষা ও জুন মাসে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৪৫৬ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

অপর দিকে পিটিআইয়ের অধীন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১ হাজার ৬৪৭ জনের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু প্রায় এক বছর শেষ হতে চললেও এখনো লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।

পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১ হাজার ৬৪৭ জনের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু প্রায় এক বছর শেষ হতে চললেও এখনো লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি।

বর্তমানে সারা দেশে ৬৭টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পিটিআইগুলোয় ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স করানো হয়। যেটির মেয়াদ ১৮ মাস। প্রাথমিক ও প্রাক্-প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। দেশে বর্তমানে ৬৭টি পিটিআই রয়েছে। প্রতিটি পিটিআইয়ে ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১৭টি। এর মধ্যে সাধারণ ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১২টি। কিন্তু বর্তমানে একেকটি পিটিআইয়ে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর আছেন।