চাকরির পরীক্ষা কেন্দ্রে ঘড়ি নেই, থাকলেও নষ্ট—কী করবেন চাকরিপ্রার্থীরা

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

‘সবশেষ যে দুটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম, সেই দুটি কেন্দ্রেই ঘড়ি ঠিক ছিল না। চাকরির অল্প সময়ের পরীক্ষা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তর দিতে হয়। এই অবস্থায় যদি ঘড়ি ঠিক না থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতায় একধাপ পিছিয়ে যেতে হয়।’ নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রের ঘড়ি ঠিক না থাকায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তরুণ মইনুল ইসলাম। তবে নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কেন্দ্রের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।

এই অভিযোগ যে শুধু মইনুলের তা নয়, সাম্প্রতিক সময় এ নিয়ে অনেক চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, নিয়োগ পরীক্ষায় হাতঘড়ি নিয়ে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা হয়। কোনো কোনো পরীক্ষায় হাতঘড়ি নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। এই অবস্থায় পরীক্ষা কেন্দ্রের দেয়াল ঘড়িই একমাত্র সম্বল। সেটিও যদি ঠিক না থাকে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে ঘড়িই থাকে না।

পরীক্ষা কেন্দ্রে ঘড়ি ঠিক না থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরীক্ষার হলে। এতে কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষা ভালোর বদলে খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগকর্তাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা তরুণ শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি সম্প্রতি একটি চাকরির পরীক্ষা দিতে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে যান। হাতে ঘড়ি ছিল না। পরে দেয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন সেই ঘড়ি বন্ধ। পরে তিনি কর্তব্যরত এক পরীক্ষককে সময় জিজ্ঞাসা করলে ওই পরীক্ষক বিরক্তি প্রকাশ করেন।

শফিকুল বলেন, কম সময়ের মধ্যে অনেক উত্তর দিতে হয়। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বের হতে হয়। আবার তাড়াহুড়া করতে গেলেও বিপদ। এই অবস্থায় পরীক্ষা কেন্দ্রের ঘড়ি ঠিক না থাকলে এর চেয়ে বড় দুর্ভোগ আর হয় না।

সবশেষ যে দুটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম, সেই দুটি কেন্দ্রেই ঘড়ি ঠিক ছিল না। চাকরির অল্প সময়ের পরীক্ষা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তর দিতে হয়। এই অবস্থায় যদি ঘড়ি ঠিক না থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতায় একধাপ পিছিয়ে যেতে হয়।
মইনুল ইসলাম, চাকরিপ্রার্থী

মাহামুদা হক নামের একজন চাকরিপ্রার্থী অভিযোগ করেন, তিনি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে ঘড়ি ছিল না। আবার আরেকটিতে ঘড়ি নষ্ট ছিল। ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের চারতলার একটি কক্ষে ঘড়ি ছিল না। মিরপুরের আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখেন ঘড়ি নেই। হাতেও ঘড়ি ব্যবহার করতে না দেওয়ায় তিনি বেকায়দায় পড়ে যান। এ জন্য তিনি পরীক্ষার সময় ম্যানেজও করতে পারেননি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে ৪৩টি কক্ষ রয়েছে। এখানে পরীক্ষা নেওয়ার সময় শুধু পিএসসি ঘড়ি সরবরাহ করে। তিনি জানান, এসব ঘড়ি ডিজিটাল। অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় বা ব্যাটারি খারাপ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তাঁরাই সেসব ঘড়ি মেরামত করেন। তবে অন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ঘড়ি সরবরাহ করে না। ঘড়ি নষ্ট থাকলে পরীক্ষার্থীদের যে দুর্ভোগ হয় সেটি স্বীকার করে তিনি বলেন, পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত, তা না হলে প্রার্থীদের ভুগতে হবে।

পরীক্ষার নির্দেশনায় যা থাকে

পিএসসির নির্দেশনায় বলা হয়, পরীক্ষায় বই, ঘড়ি, মুঠোফোন, অলংকার ও কোনো ধরনের ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ। পরীক্ষা কেন্দ্রে বইপুস্তক, সব ধরনের ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক/ ক্রেডিট কার্ড সদৃশ কোনো ডিভাইস, গয়না, ব্রেসলেট ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধসামগ্রীসহ কোনো প্রার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। পরীক্ষা কেন্দ্রের গেটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে প্রবেশপত্র এবং মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে মুঠোফোন, ঘড়ি, ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ নিষিদ্ধসামগ্রী তল্লাশির মধ্য দিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে হবে। পরীক্ষার সময় প্রার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শপত্রসহ আগেই কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো প্রার্থীর কাছে এসব নিষিদ্ধসামগ্রী পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্তসহ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪-এর বিধি ভঙ্গের কারণে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলসহ ভবিষ্যতে কর্ম কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ওই প্রার্থী অযোগ্য ঘোষিত হবেন।

পরীক্ষা নেওয়ার সময় শুধু পিএসসি ঘড়ি সরবরাহ করে। এসব ঘড়ি ডিজিটাল। অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় বা ব্যাটারি খারাপ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তাঁরাই সেসব ঘড়ি মেরামত করেন। তবে অন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ঘড়ি সরবরাহ করে না।
শিক্ষক, কিশলয় বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

ব্যাংকের চাকরি পরীক্ষার নির্দেশনায় বলা হয়, পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ছাড়া অন্য কোনো কাগজ সঙ্গে আনতে পারবেন না। প্রবেশপত্র ছাড়া যেকোনো কাগজ, বই, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক/ ক্রেডিট কার্ড সদৃশ কোনো ডিভাইস, গয়না, ব্রেসলেট ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখানে ইলেকট্রনিক ঘড়ি নিষিদ্ধ। তবে অন্য ঘড়ি নিতে পারবেন প্রার্থীরা। কিন্তু অনেকেই ইলেকট্রনিক ঘড়ি ব্যবহার করেন, যা পরীক্ষার সময় খুলে ফেলতে হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নির্দেশনায় বলা আছে, প্রবেশপত্র ব্যতিরেকে কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মুঠোফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়ি জাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিকস হাতঘড়ি বা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, যোগাযোগ যন্ত্র বা এই জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যদি কোনো পরীক্ষার্থী উল্লেখিত দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন, তবে তাঁকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার কক্ষে অবস্থানের সময় অবশ্যই উভয় কান উন্মুক্ত রাখতে হবে।

চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খোঁজ নিয়ে কেন্দ্রের সমস্যা সমাধান করা উচিত। বিশেষ করে ঘড়ির জন্য কারও পরীক্ষা খারাপ হোক বা বিঘ্ন হোক, এটি কাম্য নয়। ঘড়ির জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকা ও তাঁর সঠিক ব্যবহার করাও প্রয়োজন।
সমর চন্দ্র পাল, পিএসসির সাবেক সদস্য

সমাধানের পথ কী

পিএসসির সাবেক সদস্য সমর চন্দ্র পাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি পরীক্ষার আগে পিএসসি যেমন কেন্দ্রে কেন্দ্রে কোনো ঘড়িতে সমস্যা আছে কি না, তা খোঁজ নেয়। এভাবে অন্য চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খোঁজ নিয়ে কেন্দ্রের সমস্যা সমাধান করা উচিত। বিশেষ করে ঘড়ির জন্য কারও পরীক্ষা খারাপ হোক বা বিঘ্ন হোক, এটি কাম্য নয়। ঘড়ির জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকা ও তাঁর সঠিক ব্যবহার করাও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।