মন খারাপ থাকলে ছুটি মিলবে যে প্রতিষ্ঠানে

মন খারাপের কারণে বার্ষিক ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে চীনের চেইন সুপারমার্কেট পাং ডং লাই
প্রতীকী ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

শরীর খারাপ! অফিসে বসের কাছে বিষয়টি জানিয়ে অসুস্থতাজনিত ছুটি নিতে পারেন। ওই দিন আর অফিস যাওয়ার হ্যাপা নেই। কিন্তু মন যদি ভীষণ খারাপ হয়, যদি এই পরিস্থিতিতে অফিস যেতে ইচ্ছা না করে, তাহলে? না, এ ক্ষেত্রে কোনো উপায় নেই। মন যতই খারাপ থাকুক না কেন, কর্মীদের অফিসে যেতেই হবে। এবার এ বিষয়ে কর্মীদের সুখবর দিয়েছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, মন খারাপ থাকলে কর্মীরা অফিস থেকে ছুটি নিতে পারবেন।

চীনের হেনান প্রদেশের চেইন সুপারমার্কেট পাং ডং লাই কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে গত মার্চের শেষের দিকে এ ঘোষণা দিয়েছে। সুপারমার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইয়ু ডংলাই কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেছেন, মন খারাপের কারণে কর্মীরা চাইলে বার্ষিক ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ দিনের ছুটি নিতে পারবেন।

ডংলাই বলেছেন, ‘আমি চাই প্রত্যেক কর্মীর স্বাধীনতা থাকুক। প্রত্যেকেরই এমন সময় আসে, যখন তাঁদের মন খারাপ থাকে। আপনাদের যদি মন খারাপ থাকে, তাহলে কাজে আসার দরকার নেই। কর্মীরা এ ধরনের ছুটি চাইলে, কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করতে পারবে না। এই ছুটি নাকচ করা প্রতিষ্ঠানের নীতির লঙ্ঘন হবে।’ তিনি চান, কর্মীরা নিজেরাই স্বাধীনভাবে নিজেদের বিশ্রামের সময় নির্ধারণ করুক। তাঁদের সবার জন্য কাজের বাইরে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ থাকুক।

কর্মীদের ওভারটাইম কাজ করা অনৈতিক এবং এটা সুযোগের অপব্যবহারও।
ইয়ু ডংলাই, চেইন সুপারমার্কেট পাং ডং লাই–এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান

‘মন খারাপজনিত ছুটির’ এই ধারণাটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অধিকাংশ ব্যবহারকারী এই ছুটির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।

চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম উইবোতে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, এ রকম একজন ভালো বস ও এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম সারা দেশে প্রচার করা উচিত। আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমি পাং ডং লাইয়ে চাকরি নিয়ে যেতে চাই। আমার ধারণা, সেখানে আমি আনন্দ ও সম্মান পাব।’

চীনে কর্মক্ষেত্রে উদ্বেগ নিয়ে ২০২১ সালে করা এক জরিপে বলা হয়েছে, চীনে ৬৫ শতাংশেরও বেশি কর্মী কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি ও অসন্তুষ্ট বোধ করেন। অল্প মজুরি, জটিল আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক এবং ওভারটাইম সংস্কৃতি কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক আবেগের প্রধান কারণ।

ডংলাইয়ের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের জন্য কর্মঘণ্টা মাত্র সাত ঘণ্টা। কর্মীরা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও বছরে ৩০ থেকে ৪০ দিনের বার্ষিক ছুটি ও চীনা নববর্ষে পাঁচদিনের ছুটি পেয়ে থাকেন।

গত বছরের মার্চে ডংলাই এক বক্তব্যে কর্মীদের দীর্ঘ কর্মঘণ্টার সুপারিশ করায় চীনা কর্তাদের নিন্দা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কর্মীদের ওভারটাইম কাজ করা অনৈতিক এবং এটা সুযোগের অপব্যবহারও।’

ডংলাইয়ের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের জন্য কর্মঘণ্টা মাত্র সাত ঘণ্টা। কর্মীরা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও বছরে ৩০ থেকে ৪০ দিনের বার্ষিক ছুটি ও চীনা নববর্ষে পাঁচদিনের ছুটি পেয়ে থাকেন।

প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ডংলাই বলেন, ‘আমরা বড় হতে চাই না। আমরা চাই, কর্মীরা সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করুক। পাং ডং লাইয়ের দর্শন হলো—স্বাধীনতা ও ভালোবাসা।’

পাং ডং লাইয়ের কর্মীদের গড় মাসিক বেতন প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৭২১ টাকা (৯৭০ মার্কিন ডলার)। চীনের স্থানীয় গণমাধ্যম লিংকশপ ডটকমের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে চীনে কোনো স্টোরের নতুন কর্মীদের গড় বেতন ছিল প্রায় ৫৫ হাজার ২৭৭ টাকা (৩ হাজার ৫৬৬ ইউয়ান)।