চ্যাটজিপিটির কারণে যেসব খাতে চাকরি কমবে

প্রযুক্তি দুনিয়ায় এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’। এর মতো করিতকর্মা প্রযুক্তি সাম্প্রতিক সময়ে খুব কম দেখা গেছে। চ্যাটজিপিটির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে অনেক খাতে কর্মসংস্থান কমবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, চ্যাটজিপিটির মূল প্রভাব পড়বে দাপ্তরিক, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা–সম্পর্কিত (হোয়াইট-কলার চাকরি) কাজের ক্ষেত্রগুলোয়।

যেসব চাকরিতে নতুনত্বের প্রয়োজন নেই, সেসব চাকরি কেড়ে নেবে এই প্রযুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক পেংচেং শি নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, চ্যাটজিপিটি হোয়াইট-কলার চাকরিজীবীদের জায়গা দখল করতে শুরু করেছে। চ্যাটজিপিটির কারণে আগামী দিনে যেসব চাকরিতে মানুষের প্রয়োজন কমে আসতে পারে, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

গ্রাহকসেবা

চ্যাটজিপিটির প্রধান বৈশিষ্ট আগে ব্যবহৃত কোটি কোটি প্রশ্ন ও উত্তরকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো উত্তরটি দেওয়া। তাই গ্রাহকসেবার মতো কিছু খাত যেখানে ইতিমধ্যেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেসব ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখবে। মানুষের চেয়েও দ্রুত উত্তর দিতে পারবে চ্যাটজিপিটি। ফলে এ খাতে মানুষের কর্মসংস্থান কমবে।

কনটেন্ট লেখা ও সম্পাদনা

বিভিন্ন বিষয়ে কনটেন্ট লিখে ও সম্পাদনা করে চ্যাটজিপিটি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্রাউজারভিত্তিক বিভিন্ন এক্সটেনশনসহ অনেক সফটওয়্যার চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করে দ্রুত কনটেন্ট তৈরি করে দিচ্ছে। কোনো একটি বিষয়কে স্পষ্ট করে চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানিয়ে দেয়, তার বিবরণে কতটি অধ্যায় বা প্যারা থাকা উচিত, সেগুলোর নাম বা হেডলাইন কী হবে, এমনকি কোনো অধ্যায় বা প্যারার বর্ণনায় কী লেখা উচিত, সবকিছুই চ্যাটজিপিটি করে দিচ্ছে। ফলে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান ভাবতে শুরু করেছে কীভাবে ১০ জনের কাজ ২ জন দিয়ে করানো যায়।

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট

চ্যাটজিপিটি দক্ষতার সঙ্গে কোড করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, সঙ্গে ধারা বর্ণনাও লিখে দিচ্ছে। চ্যাটজিপিটি হয়তো পুরো একটি সফটওয়্যার প্রকল্প করে দিতে পারছে না, কিন্তু প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় স্বাধীন কোড ব্লক লিখে দিতে পারছে। ফলে একজন মোটামুটি দক্ষ প্রোগ্রামার বা টিম লিডার চাইলেই টিমে স্বাভাবিকের চেয়ে কমসংখ্যক সদস্য দিয়েই অনেক কাজ করতে পারবেন।

ওয়েবসাইট ও গ্রাফিক ডিজাইন

ইতিমধ্যেই চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে মোটামুটি মানের ওয়েবসাইট তৈরি করা যাচ্ছে। ফলে দক্ষ পেশাজীবী যাঁরা যাচাই বা মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন, তাঁদের বাইরে জুনিয়র পর্যায়ের লোকবল লাগবে না। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর চিন্ময় হেজের মতে, এই কাজের পেশাজীবীরা যাঁরা সাধারণ পর্যায়ের কাজ করে থাকেন, তাঁরা শিগগিরই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বেন।

শিক্ষকতা

একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে নির্দিষ্ট সময় যতটুকু পড়াতে পারেন, চ্যাটজিপিটি তার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য উপস্থাপন করতে পারে। অধ্যাপক পেংচেং শি’র মতে, ‘চ্যাটজিপিটি ইতিমধ্যেই ক্লাসে পড়াতে পারছে। যদিও তার জানায় কিছু কিছু ভুল আছে কিন্তু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা সহজেই উন্নতি করা সম্ভব।’

আর্থিক ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাত

বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, তথ্য–উপাত্ত যাচাই, আর্থিক বিশ্লেষণ, চাকরির প্রার্থী বাছাই ও নিয়োগপ্রক্রিয়া ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রগুলোয় যে লোকবল দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, সেগুলো নিমিষেই করতে পারে চ্যাটজিপিটি।

সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, ফোর্বস ম্যাগাজিন ও বিজনেস ইনসাইডার।