নন–ক্যাডার বিধি সচিব কমিটিতে পাস, পিএসসিতে আসার অপেক্ষা

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
ফাইল ছবি

নন-ক্যাডার নিয়োগের সংশোধিত বিধি পাস করেছে সচিব কমিটি। এখন সেখান থেকে বিধিটি মতামতের জন্য সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠানোর কার্যক্রম চলমান বলে জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর নন–ক্যাডার বিধি সচিব কমিটি পাস করেছে। এখন এটির বিষয়ে মতামতের জন্য সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠানো হবে। এরপর সেখান থেকে মতামত এলে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।

এদিকে পিএসসি সূত্র বলছে, প্রায় ২০ দিন আগে সচিব কমিটি নন–ক্যাডার বিধিমালা পাস করলেও সেটি এখনো মতামতের জন্য পিএসসিতে পাঠানো হয়নি। পাঠানো হলে এক দিনের মধ্যেই পিএসসি তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তৈরি আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপন এলেই পিএসসি ৪০তম বিসিএসসহ অন্য বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু করতে পারবে।

এদিকে ৯ মাসেও ওই বিধি আটকে থাকার কারণে নিয়োগ না পাওয়ার হতাশা প্রকাশ করেছেন নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা। ৪০তম বিসিএসের একাধিক নন–ক্যাডার চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘আমাদের অনেক দিন ধরে নন–ক্যাডারের তালিকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই সময়ে আগের সব বিসিএসে নন–ক্যাডারের তালিকা প্রকাশ করা হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তালিকা প্রকাশের পরও অনেক সময় লাগে নিয়োগ হতে। এটাও মাথায় রাখতে হবে সরকারকে। বেকারজীবনে একটি চাকরি যে কত জরুরি, সেটা কেবল আমরাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, পিএসসি নন-ক্যাডার নিয়োগের বিধি সংশোধন করার জন্য একটি বিধিমালা সচিব কমিটিতে পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পরিবর্তন হওয়ার কারণে এটি ঝুলে যায়। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের সংশোধিত বিধি পাস না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়োগ দিতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন বিধি সংশোধন হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা চূড়ান্ত করা হলে পরবর্তী নন-ক্যাডার নিয়োগ দিতে পারবে পিএসসি। ওই বিধি পাস হওয়ার পরই পিএসসি দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪০তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ নন-ক্যাডারদের বিভিন্ন পদে সুপারিশের তালিকাও প্রকাশ করতে পারবে।

প্রায় ২০ দিন আগে সচিব কমিটি নন–ক্যাডার বিধিমালা পাস করলেও সেটি এখনো মতামতের জন্য পিএসসিতে পাঠানো হয়নি। পাঠানো হলে এক দিনের মধ্যেই পিএসসি তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তৈরি আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপন এলেই পিএসসি ৪০তম বিসিএসসহ অন্য বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু করতে পারবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বিধি ২০১৪ সালে সংশোধন করা হয়েছে। বিধিতে বলা আছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২৮তম বিসিএস থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার বিধি সংশোধন করে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। এখন একইভাবে ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এটি করা হলে আবার বিধি সংশোধন করতে হবে। তাহলে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা যাবে।

পিএসসি সূত্র জানায়, গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হচ্ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হতো। সেখান থেকে পাঠানো পদের চাহিদা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো। নতুন আরেকটি বিসিএসের ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত শূন্য পদের চাহিদা এলে পিএসসি অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ করত।

এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কত শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

গত বছরের ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ আগের নিয়মেই দেওয়ার দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা ছয় দফা দাবি নিয়ে পিএসসির সামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছিলেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান আগের নিয়মেই নন-ক্যাডার নিয়োগ হোক। না হলে তাঁরা অনেকেই চাকরি পাবেন না। চার বছরে বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস পাস করে চাকরি না পাওয়া অনেক কষ্টের বলেও জানান অনেক চাকরিপ্রার্থী।