চাকরি পেলেন ছেলেসহ ১৩ জন, ‘জজের মা’ মমতাজ বেগমের চোখে আনন্দাশ্রু

প্রতীকী ছবি

নওগাঁর মমতাজ বেগমের জীবনে আজ ফিরে এসেছে স্বস্তি। ছেলের সাফল্যে গর্বে তাঁর বুক ভরে যাওয়ার যে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছিল, আজ তা আনন্দাশ্রু হয়ে ফিরে এসেছে। ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে একটি খবর প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল—‘জজের মা ডাক শোনার আনন্দ মিলিয়ে গেল কান্নায়’। এই খবর নওগাঁর এই মায়ের হাহাকারকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিল। ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন মাহমুদুল হোসেন মুন্না। কিন্তু পুলিশি নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে মুন্নাসহ ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে গেজেট থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেশজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।

আরও পড়ুন

কান্না থামল, স্বস্তি ফিরল

২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে ১৭তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে ছেলের নাম দেখেন মমতাজ বেগম। সেই দিন থেকেই পাড়া-প্রতিবেশীরা তাঁকে ‘জজের মা’ বলে ডাকতে শুরু করেন। এটা ছিল তাঁর সারা জীবনের কষ্টের অন্যতম প্রাপ্তি। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত গেজেটে ছেলের নাম না দেখে তিনি বাক্‌রুদ্ধ হয়ে যান।

মমতাজ বেগম তখন প্রথম আলোকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তাঁদের চোখের জলের কি কোনো মূল্য নেই?’ টিউশনি করে পড়াশোনা করেছিলেন মাহমুদুল মুন্না। নবম শ্রেণি থেকে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনিও এই অন্যায্য পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছিলেন না।

আরও পড়ুন

প্রতিবাদের ফল

মাহমুদুল হোসেন মুন্নাসহ মোট ১৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কারণ হিসেবে পুরোনো ‘নেতিবাচক’ পুলিশি প্রতিবেদনকে দায়ী করা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিশিষ্টজন ও ছাত্রসংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। তাঁরা ১৩ জনকে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও এ পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি পুলিশি প্রতিবেদনের প্রচলিত ধারা বদলানোর অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুন

মন্ত্রণালয়ের নতুন বিজ্ঞপ্তি: চাকরি পেলেন ১৩ জন

সব উদ্বেগ ও প্রতিবাদের পর আজ সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, আইন মন্ত্রণালয় একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সপ্তদশ বিজেএস পরীক্ষা–২০২৪–এ উত্তীর্ণ ১৩ জন প্রার্থীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে সিভিল জজ (শিক্ষানবিশ) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তাঁদের ৬ষ্ঠ গ্রেডে নিয়োগ ও বিভিন্ন জেলায় পদায়ন করা হয়েছে।

নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় মাহমুদুল হোসেন মুন্নার নাম আছে। তাঁকে ঠাকুরগাঁওয়ে পদায়ন করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে চাকরি ফিরে পেয়েছেন তানসেনা হোসেন মনীষা, সাইমন সৈয়দসহ বাকি প্রার্থীরা। এই খবর মমতাজ বেগমের কাছে পৌঁছানোর পর তাঁর দীর্ঘদিনের দুঃখ, ক্ষোভ ও হতাশা দূর হয়ে গেছে। দীর্ঘ ৯ মাস পর নওগাঁর মমতাজ বেগম আবার বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছেন। এখন পাড়া-প্রতিবেশীরা তাঁকে ‘জজের মা’ বলে ডাকছেন। সেই ডাক আর কান্নায় মিলিয়ে যাচ্ছে না। তা এখন শুধু অবিমিশ্র আনন্দের সুর।

আরও পড়ুন