পিএসসির সামনে নন-ক্যাডার প্রার্থীদের আন্দোলন চলছেই

ছয় দফা দাবিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আন্দোলন করেছেন নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

ছয় দফা দাবিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা। আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। আগের পদ্ধতিতে নন-ক্যাডার নিয়োগসহ তাঁদের দাবিগুলো মেনে নিতে পিএসসির প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। এর আগে একই দাবিতে ৬ অক্টোবর পিএসসির সামনে, ১৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছিলেন তাঁরা।

গতকাল রোববার লাগাতার কর্মসূচির প্রথম দিনে আন্দোলন করেছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা জানান, গতকাল সারা দিন আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় তাঁরা মোমবাতি প্রজ্বলন করে আন্দোলন করে। একপর্যায়ে পুলিশ এসে তাঁদের পিএসসির গেট থেকে সরে যেতে বলেন। পরে তাঁরা গেট থেকে সরে গিয়ে রাতে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ তাঁদের চলে যেতে বলে। গতকালের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তাঁরা আজকেও পিএসসির সামনে আন্দোলন শুরু করেছেন।

পিএসসির সামনে আন্দোলনকারীরা আজও জমায়েত হয়েছেন
ছবি: সংগৃহীত

একজন চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, আগের নিয়মে নন-ক্যাডার নিয়োগে কোনো সমস্যা হয়নি। অনেকে নন-ক্যাডার থেকে চাকরি পেয়েছেন। আগের বছরগুলোয় নন-ক্যাডার নিয়োগে পিএসসি যে নিয়ম অনুসরণ করেছে, তাতে পিএসসি বেকার বান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়ম থেকে সরে এসে পিএসসি তরুণদের বেকারত্ব বাড়ানোর মতো কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন এই চাকরিপ্রার্থী। সে জন্য ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত আগের নিয়মে নন-ক্যাডার নিয়োগের পদ্ধতি বহাল চান তাঁরা।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘যখন ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের প্রথম তালিকা প্রকাশ করার কথা, তখন পিএসসি নন-ক্যাডারের নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে। অন্য বিসিএসগুলোয় এই সময়ে নন-ক্যাডাররা নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছিলেন। আমরা চাই পিএসসি আগের সেই নিয়ম মেনেই নন-ক্যাডার নিয়োগ অব্যাহত রাখুক।

আমরা এ নিয়ে কোনো বৈষম্য দেখতে চাই না।’ চাকরিপ্রার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, বিজ্ঞপ্তির পর ৪০ থেকে ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুসারে পদসংখ্যা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাতিল, ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ, যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিএসসি ৩৪ থেকে ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই একই প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত সমস্যার সমাধান এবং গত এক যুগে পিএসসি যে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও বেকার বান্ধব প্রতিষ্ঠান ছিল, সে ধারা অব্যাহত রাখা।

চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পিএসসি নিজেদের কোনো সিদ্ধান্ত চাকরিপ্রার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে না বরং সরকারের বিধিতে যা বলা আছে, সেটিই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

নীতিমালা অনুসারে নিয়োগ দেওয়া না-দেওয়া পিএসসির ইচ্ছা অনুসারে হবে না। এখন সরকার যদি নীতিমালার বাইরে গিয়ে নন-ক্যাডার নিয়োগে পিএসসিকে নির্দেশ দেয়, তাহলে তাঁরা সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন। নীতিমালা অনুসরণ করা বা না-করা সরকারের এখতিয়ার বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।