সরকারি চাকরিতে বয়সে ছাড়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে

প্রতীকী ছবি: আনিস মাহমুদ, সিলেট

করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সে ৩৯ মাস ছাড় দেয় সরকার। এবার এ ছাড়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। করোনার পর কাঙ্ক্ষিত বড় নিয়োগ না আসায় বয়সের এ ছাড় তেমন কোনো কাজে আসেনি। এ কারণে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সব চাকরির নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩ দফায় মোট ৩৯ মাস ছাড় দেওয়া হয়। বিসিএস ছাড়া সরকারি সব চাকরির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য ছিল। বয়সে এ ছাড়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন।

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২১ মাস ছাড় দিয়ে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সরকারি সব চাকরির আবেদনে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩৯ মাস ছাড় দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, যেসব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ/স্বায়ত্তশাসিত/জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ছাড়া) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব দপ্তর/প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সর্বোচ্চ বয়সসীমার মধ্যে থাকলে ওই প্রার্থী আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

আরও পড়ুন

যেসব মন্ত্রণালয় বা অধীন প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিয়োগে ২৫ মার্চের আগে নিয়োগের জন্য ছাড়পত্রসহ প্রস্তুতি নিয়েও করোনার কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৫ মার্চ নির্ধারণ করতে বলেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা ৩০ বছর। এ নিয়মের কারণে যাঁদের বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ৩০ বছর হয়েছিল, তাঁরাও নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ পান। তবে নিয়মিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মেই সবকিছু হয়েছে। কারণ, বিসিএসের কোনো বিজ্ঞপ্তি করোনার কারণে আটকে যায়নি।

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২১ মাস ছাড় দিয়ে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সরকারি সব চাকরির আবেদনে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩৯ মাস ছাড় দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমার মতো চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বয়সে ছাড় দিয়েছিল ৩৯ মাস। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় দেড় বছর নিয়োগ পরীক্ষা ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ তেমন একটা হয়নি। এ সময়ে সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আর তেমন বড় কোনো বিজ্ঞপ্তিও আসেনি।’

মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার পর যেসব প্রতিষ্ঠানের বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আশা করেছিলাম, সেগুলো আসেনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালকসহ (এডি) বিভিন্ন পদের বিজ্ঞপ্তি আসেনি। ২০১৮ সালের পর থেকে সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক পদে নতুন কোনো বিজ্ঞপ্তি নেই। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন পদ ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদেও দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নেই।’

২০২০ সালের ২৫ মার্চ যাঁদের চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হয়েছিল, তাঁরা বয়সে ছাড় পেলেও করোনার কারণে যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পরীক্ষা আটকে ছিল, তাঁরা পাস করার পর চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, যাঁদের বয়স শেষ হয়েছিল, তাঁদের বয়সে ছাড় দেওয়াটা যৌক্তিক। কিন্তু যাঁরা করোনার কারণে দেড় থেকে দুই বছর হারিয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিটা কীভাবে পুষিয়ে দেওয়া হবে?

২০২০ সালে আমার স্নাতক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে পরীক্ষা শেষ হয়। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর আমার নষ্ট হয়। এই দুই বছর আমাকে কীভাবে পুষিয়ে দেবে সরকার?
আবু জাফর, চাকরিপ্রার্থী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২০ সালে আমার স্নাতক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে পরীক্ষা শেষ হয়। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর আমার নষ্ট হয়। এই দুই বছর আমাকে কীভাবে পুষিয়ে দেবে সরকার? বরং পাস করার পর তেমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাইনি। ২০২৩ সালের ৬ মাস চলে যাচ্ছে। এখনো বড় কোনো সার্কুলার নেই। তাহলে করোনার কারণে আটকে থাকা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো আর কবে প্রকাশ করা হবে?’