বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনবল চেয়েছে সৌদি আরব, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ২ লাখ ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ জনবল চেয়েছে। শ্রমবাজারে কর্মীদের পেশাগত দক্ষতার উন্নতির জন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে দুই দেশ দক্ষতা যাচাইকরণ কর্মসূচি চালু করে। এ কর্মসূচির অধীন সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে চায়।

আর সৌদি আরবের শ্রমবাজারে শূন্য পদ পূরণের জন্য বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত আছেন এ দেশের নিয়োগকারীরা। গত সোমবার নিয়োগকারীরা বলেছেন, তাঁরা সৌদি আরবের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিতে আগ্রহী।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ২ লাখ ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে দেশটিতে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ধারা অব্যাহত আছে। সে সময় সৌদি আরবের নিয়োগকর্তারা এশিয়ার দেশগুলো থেকে অর্ধেকের বেশি অভিবাসী কর্মীদের নিয়োগ দেয়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান আরব নিউজকে বলেন, ‘এই বছরের শুরুর দিকে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরব আরও দক্ষ জনবল চেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সারা দেশে আমাদের ১৫০ টির বেশি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।’

চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের শীর্ষ উত্স ছিল সৌদি আরব। এ সময় শ্রমিকেরা প্রায় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এনেছিলেন।

শামীম আহমেদ চৌধুরী জানান, এটি একটি বিশাল কাজ, যার জন্য আরও অবকাঠামো নির্মাণ, প্রশিক্ষক নিয়োগ করা ইত্যাদি প্রয়োজন। তাই এটি সম্পাদন করতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করতে এবং এ সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন।

শামীম আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘সৌদি আরবের নিয়োগকর্তারা আমাদের অভিবাসীদের ওপর বেশি নির্ভর করে। কারণ, দেশটিতে আমরা প্রায় ৪৫ বছর ধরে অভিবাসীদের পাঠাচ্ছি। এতে সৌদি আরবে আমাদের অভিবাসী কর্মীদের জন্য ভালো ব্র্যান্ডিং তৈরি হয়েছে। এখন কর্মীদের প্রস্তুত করা উচিত এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজের ওপর দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’

চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের শীর্ষ উত্স ছিল সৌদি আরব। এ সময় শ্রমিকেরা প্রায় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এনেছিলেন।

এই বছরের শুরুর দিকে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরব আরও দক্ষ জনবল চেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সারা দেশে আমাদের ১৫০ টির বেশি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মহাসচিব

আবদুল মোতালেবের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি সৌদি আরবে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২৯ বছর বয়সী মোতালেবের চাচাতো ভাই কয়েক বছর ধরে জেদ্দায় কাজ করছেন। এবার তিনি তাঁর সেই ভাইয়ের মতোই সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করতে চান।

আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা (কাজিন) কিছু দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। এতে নাকি আরও ভালো আয় করা যাবে।’

মোতালেব এখন দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্স করছেন। আর তিন মাসের মধ্যে তিনি এ কোর্সের সনদ পাবেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছি। ওয়েল্ডিং শিখছি। কারণ, নতুন শহর নির্মাণের জন্য সৌদি আরবের অনেক দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।’

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ২ লাখ ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে দেশটিতে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ধারা অব্যাহত আছে।

২৪ বছর বয়সী নাজমুল আহসানও কাজের জন্য সৌদি আরবে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আমার নিজ শহরে আমার জন্য খুব বেশি কাজের সুযোগ নেই। তাই আমি ভেবেছি, একজন অভিবাসী কর্মী হিসেবে চাকরি খোঁজা হলো সবচেয়ে ভালো সুযোগ। আর সৌদি আরব আমার প্রথম পছন্দ।’

নাজমুল আহসান বলেন, এ জন্য তিনি ঢাকায় একটি বিদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ সংস্থাই তাঁকে সৌদি আরবে চাকরি নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি আরবে রাজমিস্ত্রির চাকরি পেয়েছি বলে জানানো হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাসেই ভিসা পেয়ে যাব।’