চাকরির অফার পাচ্ছেন সেই সন্তোষ

মায়ের সঙ্গে সন্তোষ রবি দাস
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরের চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেওয়া সন্তোষ রবি দাস চাকরি পেতে যাচ্ছেন। চাকরি দিতে আগামীকাল রোববার বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তাঁকে ডাকা হয়েছে। একটি স্কুলে খণ্ডকালীন চাকরি পাচ্ছেন তিনি।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কাল বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সন্তোষকে ডাকা হয়েছে। কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাল বিকেলে ডিসি স্যার সন্তোষের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেবেন।

এ বিষয়ে সন্তোষ রবি দাস বলেন, আজ সকালে কমলগঞ্জের ইউএনও তাঁকে ফোন দিয়ে চাকরির জন্য আবেদনপত্র তৈরি করতে বলেন। কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বরাবর একটি আবেদনপত্র তৈরি করতে বলা হয় তাঁকে।

কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল সন্তোষ রবি দাসের আমাদের স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদানের কথা রয়েছে। খণ্ডকালীন শিক্ষকের যে সম্মানি তাঁকে সেই সম্মানি দেওয়া হবে। যত দিন পর্যন্ত তিনি কোনো ভালো চাকরি না পান, ততদিন পর্যন্ত তিনি আমাদের এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে পারবেন।’

সন্তোষ রবি দাস
ছবি: সংগৃহীত

চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন সন্তোষ রবি দাস। তাঁর সেই ভাইরাল পোস্টের সূত্র ধরে চাকরি দিতে অনেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কেউ তাঁর চাকরি নিশ্চিত করেনি বলেন জানান সন্তোষ।

সন্তোষ রবি দাস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি দিতে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কবে থেকে যোগদান করতে পারব। অনেকে সেলসে চাকরি করার অফার দিচ্ছে। কিন্তু আমার ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও কোর্স করা আছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং বা রিসার্চ বিষয় চাকরির কথা কেউ বলেনি।’

ভাইরাল পোস্টের সূত্র ধরে চাকরি দিতে অনেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কেউ তাঁর চাকরি নিশ্চিত করেনি বলেন জানান সন্তোষ।

সন্তোষ রবি দাস আরও বলেন, ‘চাকরিটা আমার প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে চা শ্রমিকদের মজুরি যদি না বাড়ে তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চা শ্রমিকদের অনাহারে থাকতে হবে। আমি পোস্টটি দিয়েছিলাম আমার মাসহ সব চা শ্রমিকের করুণ অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাকে চাকরি দিয়ে চা শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনটা যেন ভিন্নখাতে না নেওয়া হয়।’

মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক চা–শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবি দাসের। জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারান। মা চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা।

২০০৭ সালে সন্তোষ রবি দাস যখন ক্লাস ফাইভে পড়েন তখন তাঁর মায়ের মজুরি ছিল ৮৮ টাকা। পঞ্চম শ্রেণির পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য বিনা মূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পান। তখন তাঁর মা সামান্য আয়ের একটা অংশ থেকে তাঁকে টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দিতেন।

এই মুহূর্তে চা শ্রমিকদের মজুরি যদি না বাড়ে তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চা শ্রমিকদের অনাহারে থাকতে হবে। আমি পোস্টটি দিয়েছিলাম আমার মাসহ সব চা শ্রমিকের করুণ অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাকে চাকরি দিয়ে চা শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনটা যেন ভিন্নখাতে না নেওয়া হয়।
সন্তোষ রবি দাস

২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হন। তখন তাঁর মা ১০২ টাকা করে মজুরি পেতেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দেন মা।

এইচএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ের টাকা জোগাতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আবার তাঁর মাকে ঋণ নিতে হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সন্তোষ। এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সন্তোষ।