৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবি, পিএসসির বক্তব্য

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ। স্টেশন বাজারসংলগ্ন রেললাইন, রাজশাহী, ২৩ নভেম্বরছবি: প্রথম আলো

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ থেকেই শুরু হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে প্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্য পিএসসি এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পিছিয়ে ‘যৌক্তিক সময়ে’ নেওয়ার দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন কিছু চাকরিপ্রার্থী। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে বিক্ষোভ-অবস্থানের পর তাঁদের কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের কয়েকটি স্থানে। গত শনিবার ও গতকাল রোববার (২২ ও ২৩ নভেম্বর) রাজশাহী-ময়মনসিংহে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে। টানা কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পরীক্ষা পেছানো না হলে অনশনের হুঁশিয়ারিও দেন প্রার্থীরা। এরপর পিএসসির পক্ষ থেকে বলা হলো, লিখিত পরীক্ষা শুরুর তারিখটি পূর্বঘোষিত। অনেক আগেই এ বিসিএসের রোডম্যাপ (রূপরেখা) প্রকাশ করা হয়েছিল। পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতিও শেষ। এখন তা পেছানো সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন

গতকাল রোববার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি বলেছে, ‘৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। কমিশন লক্ষ করছে যে এ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য কতিপয় প্রার্থী আন্দোলন করছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নিকট আবেদন-নিবেদন করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন, এমনকি একটি সংগঠিত কার্যক্রমের আওতাধীনে কেউ কেউ অনশন–ধর্মঘটও করছেন। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গেও একাধিকবার দেখা করেছেন, সমাবেশ করেছেন এবং কখনো কখনো কমিশন অফিস ঘেরাও করেছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে তাঁদের বোঝানো হয়েছে যে কমিশন গত ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে এবং প্রার্থীরা বিগত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে প্রার্থিতার আবেদন করেছেন। আবেদনকারীরা গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ভিত্তিতে কমিশন ১০ হাজার ৬৪৪ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করেছে।

গত ৩ জুন কমিশন এক নোটিশে জানিয়েছিল, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর, ২০২৫-এ শুরু হবে। প্রায় ছয় মাস আগেই ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষা শুরুর তারিখ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। সুতরাং, লিখিত পরীক্ষার জন্য মাত্র দুই মাস সময় প্রদান করা হয়েছে—এরূপ প্রচারিত তথ্য মোটেই সঠিক নয়।

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা দেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।
ছবি: প্রথম আলো

লিখিত পরীক্ষার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথাসময়ে যেন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রার্থীর এমন দাবি সম্পর্কেও কমিশন অবহিত আছে। কমিশন মনে করে, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি একজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনের পাঠাভ্যাসের সঙ্গে অন্তর্গতভাবে সম্পৃক্ত এবং এ পরীক্ষার প্রস্তুতিকাল কোনোভাবেই পরীক্ষার আগের দুই–চার মাস নয়। বিসিএস পরীক্ষার আবেদন পেশ করার পর প্রার্থীরা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক পরীক্ষা প্রদানে প্রস্তুত থাকবে—কমিশন এমনটিই আশা করে। পরীক্ষা প্রদানে গড়িমসি বা অনীহা কোনোভাবেই একজন যথার্থ সরকারি চাকরি-প্রার্থীর নিকট থেকে প্রত্যাশিত শৃঙ্খলাবোধের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আরও পড়ুন

পরীক্ষাগুলোর জট ও জটিলতা নিষ্পত্তির ভার কমিশনের ওপর ন্যস্ত। এরূপ জট ও জটিলতা থেকে বের হয়ে আসা কমিশনের একটি বড় অগ্রাধিকার ছিল। দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশ করা বর্তমান কমিশনের অন্যতম প্রাধিকার। এ লক্ষ্যে কমিশন গত মে-জুন মাসে বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষার একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে। এ রোডম্যাপের আওতায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ও ফলাফল প্রকাশিত হয়ে আসছে। বিগত ছয় মাস সময়ে দুটি বিশেষ বিসিএস (৪৮ ও ৪৯) অনুষ্ঠিত হয়েছে, অনেক নন-ক্যাডার পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কোনো পরীক্ষা পেছানো হলে কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসরণ করা অসম্ভব হবে এবং কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম চালানো মুশকিল হবে। বোধগম্য কারণেই কমিশন পরীক্ষা পেছানোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং কমিশন বিশ্বাস করে যে কমিশনের এরূপ অবস্থান যথার্থ ও সময়োপযোগী। এমতাবস্থায়, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রার্থীদের প্রতি কমিশনের অনুরোধ হচ্ছে, তাঁরা যেন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি মোতাবেক ২৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবি। শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার–সংলগ্ন রেললাইনে
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন