অস্ট্রেলিয়ার গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসায় এগিয়ে বাংলাদেশিরা

শিক্ষা, কর্ম ও উন্নত ভবিষ্যতের আশায় প্রতিবছর লাখো অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে চানছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বাসযোগ্য দেশগুলোর একটি। শিক্ষা, কর্ম ও উন্নত ভবিষ্যতের আশায় প্রতিবছর লাখ লাখ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে চান।

দেশটির বিভিন্ন পেশার দক্ষ কর্মীর অভাব দূর করতে এবং প্রগতি ও উন্নয়নে অংশ নিতে বিভিন্ন নতুন ভিসা চালু করে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। এ ধারাবাহিকতায় গত বছর নভেম্বরে গ্লোবাল ট্যালেন্ট ইনডিপেনডেন্ট (জিটিআই) নামের নতুন একটি ভিসা চালু করে দেশটির সরকার। দেশটির কৃষি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য, তথ্যবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি খাতে উচ্চতর দক্ষ পেশাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে এ ভিসা চালু করা হয়েছে। আর যোগ্যতা ও প্রমাণাদি সঠিক থাকলে এ ভিসায় মনোনীত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই কর্ম ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত সময়ে বাংলাদেশের নাগরিকেরা এ ভিসায় আবেদন করার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

কি এই জিটিআই ভিসা

উচ্চ দক্ষ ও মেধাবী ব্যক্তিদের অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প সংস্থা, রাজ্য এবং আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য আকৃষ্ট করতে নতুন এ জিটিআই প্রোগ্রাম চালু করেছে অভিবাসন বিভাগ। লন্ডন, সাংহাই, সিঙ্গাপুর, বার্লিন এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো বড় শহরগুলোতে গ্লোবাল ট্যালেন্ট কর্মকর্তা রয়েছেন। এই কর্মকর্তারা জিটিআই প্রোগ্রামের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের আমন্ত্রণ জানাবেন। অভিবাসন বিভাগ এমন ব্যক্তিদের সন্ধান করছে, যাঁরা মনোনীত সাতটি খাতের মধ্যে যেকোনো একটিতে দক্ষ এবং এমন বেতন পাওয়ার যোগ্য উচ্চ আয়ের বলে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া নির্ধারিত বিষয়ে ডক্টরেট, মাস্টার্স বা স্নাতকে উচ্চ ফলাফলপ্রাপ্তরাও আমন্ত্রণ পেতে পারেন এ ভিসায়।

গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসায় বাংলাদেশিরা আমন্ত্রণ পেয়েছেন অনেক বেশি
ছবি: সংগৃহীত

ভিসা কতজন পাবেন

বিশ্বব্যাপী সার্বিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে আগে যেখানে ৫ হাজার ছিল, এবার ২০২০–২১ অর্থবছরে ১৫ হাজার ভিসা মঞ্জুর করার কথা রয়েছে।

কোন পেশায় পাওয়া যাবে মনোনয়ন

জিটিআই ভিসায় কোনো পেশা নির্দিষ্ট করা নেই। তবে সাতটি খাত বা বিষয়ে উচ্চ দক্ষতা থাকার কথা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো হলো কৃষি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও তথ্যবিজ্ঞান।

বেতনের আবশ্যিক শর্ত

জিটিআই ভিসায় আবেদন করার আমন্ত্রণ পেতে বেশ কয়েকটি আবশ্যিক শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো আবেদনকারীকে এটা ব্যাখ্যা করতে হবে যে, যে পেশায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে, সে পেশায় অস্ট্রেলিয়ায় তিনি এক বছরে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ অস্ট্রেলীয় ডলার বা তার বেশি বেতন পেতে পারবেন।

বাংলাদেশিরা তুলনামূলক বেশি পাচ্ছেন এ ভিসা

পূর্বাপর ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায়, এই সময়ে ইরানি নাগরিকেরা সর্বাধিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এই সময়কালে ইরানের নাগরিকদের মোট ৫৩৯টি আমন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এই সময়ের মধ্যে ৩৮৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক ভিসা আবেদন করার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তারপর ভারতের ২৬৫ এবং চীনের ২১৮ জন নাগরিক পেয়েছেন এ আমন্ত্রণ।

আবেদনের পদ্ধতি

আবেদনের জন্য প্রথমে অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগ্রহ জানিয়ে আবেদন করতে হবে। প্রার্থীর সব তথ্য বিবেচনা করে যোগ্য মনে হলে এ ভিসায় আবেদন করার জন্য একটি বিশেষ শনাক্তকরণ নম্বর প্রদান করা হবে। এরপর আবেদনকারীর একজন নমিনেটরের প্রয়োজন পড়বে। তবে এ নমিনেটরকে আলাদা কোনো ভিসা আবেদন করতে হবে না। এমনকি নমিনেটরকে আবেদনকারীকে কোনো চাকরিও দিতে হবে না। এ নমিনেটর সাধারণ অর্থে আবেদনকারীর যোগ্যতা বিবেচনা করতে সহায়ক হবেন। আবেদনকারীর নির্বাচিত বিষয়ে কর্মরত যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হতে পারে। নমিনেটরকে অবশ্যই অস্ট্রেলীয় নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বিশেষ শনাক্তকরণ নম্বর এবং নমিনেটর নিয়ে আবেদনকারীকে ডিস্টিংগুইশড ট্যালেন্ট ভিসায় আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারী অস্ট্রেলিয়ার বাইরে কিংবা ভেতরে অবস্থানরত সবাই সাবক্লাস ৮৫৮ ভিসায় আবেদন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, এ ভিসায় উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার বা মেধাবীদেরই চায় অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। তাই আবেদনকারী যে একজন উচ্চতর দক্ষতার পেশাদার এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ার জন্য সম্পদ, সেটা আবেদনপত্রের সঙ্গে দেওয়া কাগজপত্রে স্পষ্ট থাকতে হবে। এ ভিসা পেতে অস্ট্রেলিয়ার কোনো চাকরির অফার থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে। তবে তেমন কোনো আবশ্যিক শর্ত নেই। এ ছাড়া এ ভিসায় স্কিল অ্যাসেসমেন্টেরও কোনো আবশ্যিকতা নেই। এ ভিসায় পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ রয়েছে। সতর্কতার সঙ্গে ভিসা আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

*লেখক: অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইনজীবী। [email protected]