করোনায় ৮ কোটি চাকরি নাই হয়ে গেল এশিয়া থেকে

করোনার প্রভাবে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ৮ কোটি ১০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন
ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে টালমাটাল বিশ্ব। অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। করোনার টিকা বাজারে আসার খবরে অনেক কিছু স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু করোনার প্রভাবে এরই মধ্য এ বছরে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ৮ কোটি ১০ লাখ চাকরি নাই হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন এসব মানুষ। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের চেয়ে এ বছর কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে প্রায় সব দেশেই।

গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘এশিয়া প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক ২০২০: ন্যাভিগ্যাটিং দ্য ক্রাইসিস টুওয়ার্ডস আ হিউম্যান-সেন্টার্ড ফিউচার অব ওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।

চাকরি হারানোর পাশাপাশি দারিদ্র্যও বেড়েছে
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোয় করোনা মহামারির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। চাকরিতে যাঁরা ছিলেন, এমন লাখো মানুষের কর্মঘণ্টা কমেছে, আবার অনেকে পুরো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এক হিসাবে দেখা যায়, এ অঞ্চলে ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর্মঘণ্টা কমেছে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে কমেছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। করোনা সংকটের আগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে বেকারত্বের হার গত বছরের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে।

আইএলওর সহকারী মহাপরিচালক এবং এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক চিহোকো আসাদা মিয়াকাওয়া বলেন, এই অঞ্চলের শ্রমবাজারে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে কোভিড-১৯। কয়েকটি দেশের সরকার করোনা মহামারি ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলেও অনেক দেশই সামাজিক নিরাপত্তা ঘাটতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে খুব একটা সহায়তা করতে পারেনি। ফলে, শ্রমিকেরাও কাজে ফিরতে পারেননি। পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাতে থাকা বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।

চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হয়েছেন নারীরা
ছবি: সংগৃহীত

চাকরি হারানোয় পুরুষের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা বেশি

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরুষের চেয়েও নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি। কারণ, তাঁরাই বেশি চাকরি হারিয়েছেন। এ ছাড়া তরুণেরা চাকরি হারিয়েছেন বা কর্মঘণ্টা কমার কারণে কমেছে বেতনও। চাকরিহারা তরুণের সংখ্যা ৩ থেকে ১৮ গুণ পর্যন্ত বেশি আগের বছরের তুলনায়। এসব কারণে সার্বিকভাবে শ্রমিকদের আয় কমেছে ১০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি অব্যাহত থাকলে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়বে। আরও ২ কোটি ২০ লাখ থেকে আড়াই কোটি মানুষ শ্রমজীবী হয়েও দারিদ্র্যে পড়বে আয় কমার কারণে। আইএলওর মতে, ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে দিনে আয় করেন—এমন মানুষের সংখ্যা এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে বেড়ে ৯ কোটি ৪০ লাখ থেকে ৯ কোটি ৮০ লাখ হবে এ বছর।

তরুণ কর্মীদের জন্য নতুন চাকরির প্রতিযোগিতাটি আরও কঠিন হতে পারে
ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আইএলও আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সারা এল্ডার বলেছেন, এই প্রতিবেদনে অন্যান্য কর্মী বা শ্রমিকের তুলনায় যুবক ও নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে কাজ হারানোর স্পষ্ট চিত্র দেখানো হয়েছে। বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তরুণ কর্মীদের জন্য নতুন চাকরির প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হতে পারে। যখন তাঁরা নতুন চাকরির সন্ধান করবেন বা করছেন, এমনও হতে পারে যে তাঁদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তা মিলবে না। কয়েক লাখ নারীকে চড়া মূল্য দিতে হবে। কারণ, যাঁরা শ্রমশক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁদের আবার চাকরিতে ফিরে আসতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।