কোভিড: বাড়িতে কাজে আগ্রহী চাকরিজীবীরা

বাসায় বসে কাজ করতে চান কর্মীরা
ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ এর নয়া বাস্তবতায় এখনো চলছে হোম-অফিস। যেমন ফরাসি দেশেই করোনার ঝক্কি সামলে অফিসে ফিরতে পেরেছেন ৮৪ শতাংশ কর্মী। যুক্তরাজ্যে এ হার ৪০ শতাংশের নিচে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে এ তথ্য। আবার টুইটার কর্তৃপক্ষ মনে করছে, তাদের সব কর্মী সব সময়ের জন্যই ঘরে থেকে কাজ করুন—এটাই তারা চায়। কিন্তু এর বিপরীতে মতো ব্যক্ত করেছেন নেটফ্লিক্সের প্রতিষ্ঠাতা রিড হ্যাস্টিংস। কর্মকর্তারা যা-ই ভাবুন না কেন, ঘরে থেকে যাঁরা কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন অনেক চাকরিজীবী। এতে ভালো লাভ হচ্ছে নিয়োগ সংস্থাগুলোরও।

একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গণপরিবহন এড়াতে চাইছেন অধিকাংশ অফিসগামীযাত্রী। পরিবর্তে তাঁরা বাড়ি বসে অফিসের কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ভারতের নয়াদিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দারাবাদ, কলকাতা, আমদাবাদ ও পুনে শহরের বাসিন্দাদের উপরে এ সমীক্ষা চালানো হয়।

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েট চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (অ্যাসোচ্যাম) এবং প্রাইমাস পার্টনার্স সংস্থা যৌথভাবে এ গবেষণা করেছে। সেখানে সমীক্ষায় দেখা গেছে, চাকরিজীবীদের এক-চতুর্থাংশ বাড়ি থেকে অফিসের সব কাজ করতে আগ্রহী। অথবা নিজ সংস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের সময়ে রদবদল করার নীতিতে বিশ্বাসী। ডাউন উঠে যাওয়ার পরে ১৮% চাকরিজীবী পুরোপুরি বাড়ি থেকে কাজ করতে বেশি আগ্রহী। আর ৫৬% আংশিকভাবে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করায় আগ্রহী। ২৬ শতাংশ অফিসে গিয়ে কাজ করতে চান।

গবেষণায় অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে লকডাউন পর্বে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করেছেন ৭৯%, ছুটিতে বাড়ি থেকে কাজ করেছেন ১১% এবং অফিসে গিয়ে কাজ করেছেন ১০% চাকরিজীবী।

অফিসের কাজ বাসায় করলে যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয়
ছবি: সংগৃহীত

গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মীরা বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করায় লাভবান হয়েছে অফিস বা কোম্পানি। এর ফলে অফিস ব্যবস্থা বাবদ অর্থ বাঁচছে। এ অর্থ কর্মীদের সুবিধায়, প্রশিক্ষণে ও গবেষণায় ব্যয় করা যাচ্ছে। তা ছাড়া দেশের যে কোনোও অংশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতেও অসুবিধা হচ্ছে না। এর উদাহরণ হিসেবে মহারাষ্ট্রের পুনের একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ইন্দোর, ভূপাল,  বিজয়ওয়াড়া, চণ্ডীগড়, পাটনা ও নাসিক থেকে ১১২ জন কর্মী নিয়োগ করেছে। এসব কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা দেওয়ায় কোনোও সমস্যা হয়নি।

আর কর্মীরা বাসায় বসে কাজ সারাতে অফিসে নতুন কর্মীর বসার জন্য কোনো ব্যবস্থাপনাও করতে হয়নি। এতে খরচও কমেছে ওই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণপরিবহন পরিষেবা অনেকাংশে চালু হলেও ভারতে ৭৩ শতাংশ চাকরিজীবী এখনো বাড়ি থেকেই কাজ করতে চান। এর মূল কারণ কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভীতি।

প্রাইমাস পার্টনার্স সংস্থার সিইও নিলয় ভার্মা বলেন, যাত্রীদের আস্থা ফিরে পেতে স্বাস্থ্য নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে গণপরিবহন গুলোকে। সেই সঙ্গে যুক্ত করতে হবে প্রযুক্তিগত সহায়তা, যা যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করবে। তবে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে গিয়ে বেসামাল সংস্থাগুলো কী ভাবে ভবিষ্যতে পরিবহন সেবা সচল রাখতে পারবে, তা এখনো গবেষণার বিষয় বলে জানানো হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

প্রাইমাস পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সহ প্রতিষ্ঠাতা দেবরুপ ধর বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে অফিস ব্যবস্থাপনা ও শিল্পে নানা পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে অফিস ও কর্মী ব্যবস্থাপনায় নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে সংস্থাগুলোকে। তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস