প্রশ্নপত্র ফাঁস: আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির তিনজন বহিষ্কার ও পূবালী ব্যাংক কর্মকতা বরখাস্ত

পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির তিন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় পূবালী ব্যাংকের একজন প্রিন্সিপাল অফিসারও বরখাস্ত হয়েছেন।

আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বহিষ্কৃত তিন কর্মী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান মো. মোক্তারুজ্জামান, ল্যাব সহকারী মো. পারভেজ মিয়া ও অফিস সহকারী মো. দেলোয়ার হোসাইন। পূবালী ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া প্রিন্সিপাল অফিসারের নাম মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ঢাকার ইমামগঞ্জ শাখায় কর্মরত ছিলেন। মোক্তারুজ্জাম ও মোস্তাফিজুর রহমান বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে।

আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সামছুল হক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশে প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তিনজনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার নাম এসেছে। গতকাল বুধবার অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তাঁদের বরখাস্ত করা হয়। মো. মোক্তারুজ্জামান পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। বাকি দুজন কোথায় আছেন, তা আমরা জানি না। তাঁদের খোঁজা হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আসায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যে–ই অপরাধ করুক না কেন, তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। তাঁর কাছে এ বিষয়ে আরও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

গত শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন চাকরিপ্রত্যাশী। একাধিক প্রার্থীর দাবি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তরপত্র ফেসবুকে পাওয়া গেছে।
ফেসবুকে উত্তরপত্র ছড়ানোর ঘটনায় চাকরিপ্রার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, পরীক্ষা চারটার সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০০টি প্রশ্নের ‘সঠিক উত্তর’ ফেসবুকে পাওয়া সম্ভব নয়—তাই এটা প্রশ্নপত্র ফাঁস।

এরপর গতকাল এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা সংবাদ সম্মেলন করে জানায় পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির টেকনিশিয়ান মো. মোক্তারুজ্জামান ওরফে রয়েল (২৬), রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানে আলম ওরফে মিলন (৩০), পূবালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মিলন (৩৮), রাইসুল ইসলাম ওরফে স্বপন (৩৬) ও মো. শামসুল হক ওরফে শ্যামল (৩৪)।

রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্তি কমিশনার (ডিবি-গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মোক্তারুজ্জাম ও ব্যাংক কর্মকর্তারা মিলে ব্যাংকে নিয়োগ প্রশ্নপত্র ও এর উত্তর ফাঁস চক্র গড়ে তুলেছেন। আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি পরীক্ষাটি সম্পাদন করে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে প্রতিষ্ঠানটি ৬০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে।

সরকারি ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কাছে ব্যাখা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন কালো তালিকাভুক্ত করা হবে না, তা জানতে গতকাল বিকেলে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে থাকা ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি।