বিসিএসের বিনা মূল্যে কোচিং

প্রতীকী ছবি

বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরিপ্রার্থী, উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুকদের জন্য শুরু হচ্ছে ‘মার্চ ফরোয়ার্ড ফ্রি কোচিং ফর বিসিএস অ্যান্ড আদার্স’ নামক কার্যক্রম। ফেসবুকভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন পে ইট ফরোয়ার্ড, বাংলাদেশের উদ্যোগ এটি। এ কার্যক্রমের খরচ বহন করবেন সংগঠনের সদস্যরা। এতে সহায়তা করবে পে ইট ফরোয়ার্ডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘অনেস্ট’। ২০১৬ সাল থেকেই পে ইট ফরোয়ার্ড দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে।

চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে এ ধরনের কোচিং শুরু করার বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন পে ইট ফরোয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রামের কর কমিশনার বাদল সৈয়দ। তিনি বললেন, প্রার্থীরা যাতে না ভাবেন যে তাঁদের দয়া দেখানো হচ্ছে, তাঁরা বিনা মূল্যে কোচিং করার সুযোগ পাচ্ছেন, সে জন্য ইচ্ছুকদের কাছ থেকে মাসে মাত্র ১০০ টাকা করে নেওয়া হবে। যাঁরা দিতে পারবেন না, তাঁদের কাছ থেকে এ টাকাও নেওয়া হবে না।

২৫ আগস্ট অনলাইনে এ কোচিং কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। আর মূল ক্লাস শুরু হবে ২ সেপ্টেম্বর থেকে। সপ্তাহে পাঁচ দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ক্লাস হবে। রেজিস্ট্রেশন করা প্রার্থীদের পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকবে, কেউ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ওই দিনের শিক্ষা উপকরণগুলো পিডিএফ ফাইলে সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রার্থীদের নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফেসবুকে দুটি পেজ খোলা হয়েছে। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি প্রার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছেন, এতে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা প্রায় সমান।

বাদল সৈয়দ জানালেন, বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের ন্যূনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হতে হবে। অন্য প্রার্থীদের চাকরির ধরন অনুযায়ী যোগ্যতা চাওয়া হবে। ক্লাসগুলোও আলাদা হবে।

বাদল সৈয়দ বললেন, জোর করে এক ঘণ্টার ক্লাস বুঝে না–বুঝে সিলেবাস শেষ করার ইচ্ছা নেই। পর্যাপ্ত ক্লাস করার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞতা আছে এমন শিক্ষকেরাই পড়াবেন। বিসিএস পর্যায়ে পড়ানো অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখানে প্রথম ছয় মাস বিনা সম্মানীতে ক্লাস পরিচালনা করবেন।

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ক্লাসগুলো পরিচালনা করা হবে। অনলাইনেই ক্লাস হবে। শুধু শেষ পর্যায়ে বাছাই করা প্রার্থীদের স্বল্প সময়ের জন্য সংগঠনের খরচে ইন হাইজ (আবাসিক) কোর্স করানো হবে। শিক্ষা উপকরণ (রিডিং ম্যাটেরিয়াল) যেদিন ক্লাস, সেদিনই পিডিএফ ফাইল বানিয়ে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। এর জন্য কোনো দাম নেওয়া হবে না।

বাদল সৈয়দ বললেন, ৪১তম ‘বিসিএস’–এর জন্য বিষয়ভিত্তিক, পর্যালোচনামূলক ও মক পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে। পরীক্ষার রেজাল্ট কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। ৪২তম বিসিএস থেকে আরও সৃজনশীল কিছু চিন্তাভাবনা যুক্ত করা হবে।

দেশীয় বিভিন্ন বিশিষ্ট আইটি উদ্যোক্তা বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অ্যাপ তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছেন। আনলিমিটেড প্রার্থীকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করার পাশাপাশি ইচ্ছেমতো পরীক্ষার শিডিউল তৈরি, প্রশ্নপত্র তৈরি করা যাবে। অ্যাপটিতে প্রায় ৩০ হাজার প্রশ্নের একটি ব্যাংক তৈরি করা আছে। এটা আরও বাড়ানো যাবে।

কোচিং কার্যক্রমে চিফ অব অপারেশনস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এম ওবায়দুল্লাহ চৌধুরী। তিনি প্রায় ১৪ বছর ধরে বিসিএস প্রার্থীদের কনসালট্যান্সি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কাছ থেকে প্রায় দুই হাজার বিসিএস প্রার্থী গাইডলাইন নিয়ে ক্যাডার অফিসার হয়েছেন। বিসিএসের জন্য তাঁর কয়েকটি প্রকাশনাও আছে। দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা ও করপোরেট ব্যক্তিরা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

বাদল সৈয়দ বললেন, ‘কোচিং শব্দটার একটা ব্যাপক অর্থ আছে। পড়ানোর পর কেউ সফল বা ব্যর্থ হলো। এর চেয়েও আমরা শিক্ষার্থীদের “ভালো মানুষ” হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের সামনে ভালো উদাহরণ তুলে ধরা, ক্যারিয়ার গ্রুমিং, প্রথমবার সুযোগ না পেলে তাঁদের আবার সুযোগ দেওয়া, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা, ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়েই গুরুত্ব দেওয়া হবে। মূল উদ্দেশ্য, চৌকস একটি তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা। আর এটা কোনোভাবেই সংগঠনের আয় বা বাণিজ্যিক কোনো কার্যক্রম নয়।’

বাদল সৈয়দ বললেন, প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকার জন্য কোচিংয়ের পেছনে চাকরিপ্রার্থীদের মাসে হাজার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অনলাইনে এ ধরনের উদ্যোগের ফলে প্রার্থীদের এ খাতে খরচ এবং সময়—দুটোই কমানো সম্ভব হবে।

বাদল সৈয়দ জানালেন, কোচিংয়ের জন্য পুরো কার্যক্রমকে সাজাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম ছয় মাসে খরচ করতে হবে ৩৬ লাখ টাকা। এরপরের ছয় মাসে খরচ কিছুটা কমে ১৮ লাখে নামবে। শিক্ষক এবং কোচিং কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে যুক্তরা প্রথম ছয় মাস কোনো সম্মানী না নিলেও পরে সম্মানীর ব্যবস্থা করা হবে। কেননা এই কর্মযজ্ঞের পেছনে সবাইকে প্রচুর শ্রম ও সময় দিতে হচ্ছে।

পেজ লিংক: