ভারতে আংশিক লকডাউনে কর্মহীন ৭৫ লাখ

কোভিড-১৯–এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে আগামী কয়েক মাস ভারতের চাকরির বাজার এমনই টালমাটাল থাকবে
ছবি: সংগৃহীত

করোনায় ভারতের অবস্থা জেরবার। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন। গতকাল মঙ্গলবার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। এদিন করোনায় মারা গেছেন রেকর্ড ৩ হাজার ৭৮০ জন। আগের দিন সোমবার ভারতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২২৯ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গত রোববার শনাক্ত ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী। শনিবার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৯২ হাজারের বেশি রোগী। সোমবার মৃত্যু ৩ হাজার ৪৪৯ জনের, রোববার ৩ হাজার ৪৫৫ জন। এরই মধ্যে ভারতের বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) জানায়, গত এক মাসে (এপ্রিল) ৭৫ লাখ মানুষ ভারতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে বেকারত্বের হার গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

গত বছরে করোনায় দীর্ঘ লকডাউন ছিল ভারতে। এর জেরে কয়েক লাখ হয়ে গিয়েছিল কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেকারত্বের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত সোমবার সিএমআইই জানিয়েছে, গত বছরের মতো সরকারিভাবে দেশে এখনো লকডাউন জারি না হলেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রাজ্যে লকডাউন এবং একাধিক রাজ্যে আংশিক এবং স্থানীয় লকডাউন ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এরই মধ্যে গত এক মাসে (এপ্রিল) ৭৫ লাখ মানুষ ভারতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে বেকারত্বের হার গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

ভারতে করোনাকালে শহরে কর্মহীনতার হার গ্রাম থেকে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। যেখানে শহরে বেকারত্বের হার গত ১ মাসে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে, সেখানে গ্রামে এ হার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ
ছবি: সংগৃহীত

এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিএমআইই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহেশ ব্যাস জানান, গত বছর লকডাউনের প্রভাবে বেকারত্ব ২৪ শতাংশে পৌঁছে ছিল। পরিস্থিতি ততটা মারাত্মক না হলেও বেকারত্বের সংখ্যা যে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তা এবারের পরিসংখ্যান বলছে।

মার্চে বেকারত্বের হার ৬ দমশিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশিমক ৯৭ শতাংশ হয়েছে। এপ্রিলে ৭০ লাখের বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।

করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হারে আগের সব রেকর্ড পেছনে ফেলছে ভারত। লকডাউন ঘোষণা হলে আগামী দিনে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে, আবার নতুন করে নিয়োগও বন্ধ থাকবে। এ অবস্থায় শহরে কাজ হারানোর হার গ্রাম থেকে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। শহরে বেকারত্বের হার যেখানে গত ১ মাসে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে, সেখানে গ্রামে এ হার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। কোভিড-১৯–এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে আগামী কয়েক মাস দেশের চাকরির বাজার এ রকমই থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন মহেশ ব্যাস।

মহেশ ব্যাসের মতে, করোনার জন্য হঠাৎ অনেকে বেকার হয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়বে তাঁদের মানসিক অবস্থাতেও। তাঁরা পরবর্তীকালে চাকরির জন্য কম বেতনেও কাজ করতে রাজি হয়ে যাবেন। ফলে চাকরিজীবীদের জন্য লকডাউন সব দিক থেকেই ক্ষতিকারক। করোনার সংক্রমণ কমার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অর্থনীতির চাকা চালু রাখাই হবে সবার জন্য মঙ্গলজনক। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি