সৌদি আরবে চাকরি বদলাতে মানতে হবে ৮ শর্ত

চাকরি বদলে সৌদিতে নিয়োগদাতার অনুমতি না লাগলেও মানতে হবে আটটি শর্তছবি: এএফপি

সৌদি আরব চলতি নভেম্বর মাসে শ্রম আইন সংশোধন করেছে। সংশোধনে কাফালাভিত্তিক বাধ্যতামূলক নিয়োগ চুক্তি শিথিলের কথা জানানো হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তিতে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে, সেগুলোর কিছু কিছু তারা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব চুক্তির বলে প্রায় এক কোটি বিদেশি শ্রমিকের জীবনের নানা সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ ছিল নিয়োগদাতাদের হাতে। যেসব সংস্কার আনা হচ্ছে, তাতে করে বেসরকারি খাতে কর্মরত বিদেশি কর্মীরা তাঁদের চাকরি পরিবর্তন এবং নিয়োগদাতার অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব ছেড়ে যাওয়ার স্বাধীনতা পাবেন কর্মীরা।

সৌদি সরকার বলছে, এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে তারা কাজের পরিবেশের উন্নয়ন ও দক্ষতা বাড়াতে চায়। দেশটিতে বিদেশি কর্মীর সঙ্গে এ চুক্তি ‘কাফালা’ নামে পরিচিত।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সম্পর্ক উন্নয়নে এ উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সংশোধনী যেসব শর্তের আওতায় কর্মীদের জন্য কার্যকর হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে দেশটির মানবসম্পদ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চাকরিদাতাদেরও বর্তমান কর্মীকে ভিসা ফেরত দেওয়াসহ কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বৃহত্তম বাজার।

সৌদি আরব সরকারের বরাত দিয়ে গালফ নিউজ জানিয়েছে, কর্মস্থল বদলাতে বিদেশি কর্মীদের বাড়তি কোনো অর্থ দিতে হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথম চুক্তির আওতায় থাকা নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করা থাকলেই চলবে। পাশপাশি কর্মীর ভিসাতেও এর ফলে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না।

সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন
ছবি: এএফপি

নিয়োগদাতার অনুমতি ছাড়াই যেসব শর্তের আওতায় কর্মীরা চাকরি বদলানোর সুবিধা নিতে পারবেন, সেগুলো হলো—

১. সৌদি আরবে যাওয়ার তিন মাস পরও নিয়োগদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাজের চুক্তিপত্র দিতে ব্যর্থ হলে
২. টানা তিন মাস কোনো কর্মীকে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত বেতন-ভাতা প্রদান না করা হলে
৩. ভ্রমণ, কারাবাস, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে যদি নিয়োগদাতা অনুপস্থিত থাকেন
৪. ইকামা বা কর্ম-ভিসার আওতায় সৌদিতে অবস্থানের সময় পেরিয়ে গেলে মালিকের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব ত্যাগ করতে পারবেন কর্মীরা
৫. মালিকের অসাধুতা অবলম্বনের অভিযোগ যদি প্রবাসী কর্মী করেন এবং তিনি যদি সেই অন্যায়ে জড়িত না হন, সে ক্ষেত্রেও তাঁর নিরাপত্তা বিবেচনায় কর্মস্থল বদলের সুযোগ থাকবে
৬. নিয়োগদাতা অবৈধ মানব পাচারে জড়িত, কর্মীর কাছে এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকলে
৭. শ্রমপরিবেশ নিয়ে মালিকের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে এবং অনুরোধ সত্ত্বেও নিয়োগদাতার প্রতিনিধি সেই বিরোধ অবসানের শুনানি গ্রহণ করতে পরপর দুবার ব্যর্থ হলে বা শান্তিপূর্ণ সমাধান না করতে পারলে
৮. বর্তমান নিয়োগদাতা যদি কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রেও চাকরি বদলানো যাবে।

নিয়োগদাতাদের জন্য শর্ত

বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে চাওয়া চাকরিদাতারাও এসব সংশোধনীর আওতায় পড়বেন।

তবে এ ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান কর্মীকে ভিসা ফেরত দেওয়াসহ চারটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এসব শর্তের মধ্যে আছে সৌদি আরবের ভিসা আইন অনুসারে কর্মী ভিসা সংগ্রহ ও হস্তান্তর, বেতন-ভাতা সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রণীত শর্ত মেনে চলাসহ ইত্যাদি।

অতিরিক্ত কিছু শর্তের আলোকে শ্রমিকদের চুক্তির দলিল আইনি প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত কর্মপরিবেশ মূল্যায়নে নিজস্ব উদ্যোগও রাখতে হবে তাদের।