৪৬তম বিসিএসে নির্ভুলভাবে আবেদন ফরম পূরণ যেভাবে

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)ফাইল ছবি

সর্বশেষ ১০টি বিসিএসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাডার পদ রেখে ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। গতকাল রোববার (১০ ডিসেম্বর) আবেদন শুরু হয়েছে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রথম ধাপ নির্ভুলভাবে আবেদন ফরম পূরণ করা। সঠিক নিয়মে আবেদন ফরম পূরণের পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন।

আবেদনপ্রক্রিয়া

আগ্রহী প্রার্থীদের প্রথমে (bpsc.teletalk.com.bd) ওয়েবসাইটে গিয়ে ৪৬তম বিসিএসের অনলাইনে আবেদন অংশে ক্লিক করতে হবে। সেখানে তিনটি অপশন পাবেন। সাধারণ ক্যাডার, উভয় ক্যাডার (সাধারণ ও কারিগরি ক্যাডার) এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার। আপনার স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয়ে যদি কোনো কারিগরি পদ না থাকে, তাহলে সাধারণ ক্যাডার অপশনে ক্লিক করুন। আর যদি কারিগরি পদ থাকে, তাহলে উভয় ক্যাডার কিংবা শুধু কারিগরি ক্যাডার অপশন বাছাই করে আবেদন বাটনে ক্লিক করুন। এরপরই বিপিএসসি ফরম-১ সামনে আসবে। সেখানে তিনটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশে ব্যক্তিগত তথ্য, দ্বিতীয় অংশে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য এবং তৃতীয় অংশে ক্যাডার চয়েজ-সংক্রান্ত তথ্য পূরণ করতে বলা হবে।

প্রথম অংশে ব্যক্তিগত তথ্য

প্রার্থীকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে। নিজের নাম, পিতার নাম এবং মাতার নাম মাধ্যমিক (এসএসসি বা সমমান) সনদে যেভাবে দেওয়া আছে, ঠিক সেভাবেই বড় হাতের অক্ষরে লিখবেন। মাধ্যমিক সার্টিফিকেটে যে জন্মতারিখ দেওয়া আছে, ঠিক সেটাই পূরণ করুন। জন্মতারিখের সঙ্গে বয়স গণনার সম্পর্ক থাকে। বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত বয়সসীমার মধ্যে আপনার বয়স বিবেচনাযোগ্য কি না, তা যাচাই করে নেবেন। বয়স কম বা বেশি হলে আপনার প্রার্থিতা বাতিল হবে। পুরুষ, নারী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গ যেকোনো একটা অপশন বাছাই করুন। এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যাটাসে প্রার্থী বেকার হলে নট এমপ্লয়েড, রাজস্ব খাতের সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকলে রেগুলার বেসিস আন্ডার রেভিনিউ বাজেট, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে অটোনোমাস বা সেমি-অটোনোমাস অর্গানাইজেশন, বেসরকারি হলে প্রাইভেট সিলেক্ট করতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রার্থী চাকরিরত থাকলে মৌখিক পরীক্ষার আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিভাগীয় ছাড়পত্র নিতে হবে এবং তা মৌখিক পরীক্ষায় দেখাতে করতে হবে। প্রার্থী উপজাতি বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হলে ইয়েস বাটন ক্লিক করবেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনি হলে সংশ্লিষ্ট অপশন ক্লিক করুন। অন্যথায় নন ফ্রিডম ফাইটার অপশন সিলেক্ট করবেন। কোনো ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকলে সংশ্লিষ্ট অপশন সিলেক্ট করুন। বিসিএস নিয়োগে বর্তমানে কোনো কোটা নেই। তবে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার প্রার্থীর জন্য বয়স ২১ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত।

এ ছাড়া বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) এবং বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা) ক্যাডারের জন্য শুধু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীর ক্ষেত্রে বয়স ২১ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়। তাই বয়স প্রমাণের জন্য মৌখিক পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা সনদ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সনদ কিংবা প্রতিবন্ধী সনদ দেখাতে হবে। বিবাহিত হলে ম্যারিড অপশন সিলেক্ট করুন। নির্দিষ্ট স্থানে স্বামী বা স্ত্রীর নাম লিখুন। অবিবাহিত হলে সিঙ্গেল অপশন সিলেক্ট করবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সঠিকভাবে লিখুন। জাতীয়তা বাংলাদেশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ করা থাকে। আপনার উচ্চতা অবশ্যই সেন্টিমিটার এককে লিখবেন। যেকোনো ওজন মেশিনে ওজন মেপে ওজন কিলোগ্রামে লিখুন। সাধারণ অবস্থায় বুকের মাপ সেন্টিমিটার এককে লিখুন।

আরও পড়ুন

বর্তমানে যে ঠিকানায় অবস্থান করছেন, সেই ঠিকানার গ্রাম, ডাকঘর, ডাকঘরের কোড, উপজেলা এবং জেলা ক্যাপিটাল লেটারে লিখুন। স্থায়ী ঠিকানার গ্রাম, ডাকঘর, ডাকঘরের কোড, উপজেলা এবং জেলা ক্যাপিটাল লেটারে লিখুন। যেহেতু বর্তমান ও স্থায়ী উভয় ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়, তাই বর্তমান ঠিকানা আর স্থায়ী ঠিকানা অভিন্ন হওয়া ভালো। পরীক্ষা-সংক্রান্ত খুদে বার্তা যে মুঠোফোন নম্বরে পেতে চান, সেই নম্বর নির্ভুলভাবে লিখুন। আপনি কোন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে চান, তা বাছাই করুন। এখানে যে কেন্দ্র দেবেন, সেই কেন্দ্রেই প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্র পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ থাকবে না। আপনি যদি প্রিলিমিনারিতে ইংরেজি প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে চান, তাহলে সংশ্লিষ্ট ঘরে টিক চিহ্ন দিন। তবে লিখিত পরীক্ষায় বাংলা কিংবা ইংরেজি, যেকোনো একটি ভাষায় উত্তর দিতে পারবেন। এই তথ্যগুলো পূরণ হয়ে গেলে আবার ভালো করে যাচাই করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে ওপরের সব তথ্য সঠিক দিয়েছেন, মর্মে প্রত্যয়ন দিয়ে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় অংশে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য

প্রার্থীকে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রোল, রেজিস্ট্রেশন, বোর্ড, পরীক্ষার নাম, রেজাল্ট, গ্রুপ, পাসের সাল ইত্যাদি সনদ অনুযায়ী নির্ভুলভাবে লিখুন। মনে রাখবেন, এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রে বোর্ড ও গ্রুপের ঘরে যদি কেউ Others অপশন পূরণ করেন, তাহলে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে (ক্যাডার) লিখিতভাবে জানাতে হবে। স্নাতকের রোল, রেজিস্ট্রেশন, বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, ডিগ্রির নাম, ফলাফল, পাসের সাল, কোর্সের মেয়াদ, ফলাফল প্রকাশের তারিখ ইত্যাদি আপনার সনদ অনুযায়ী উল্লেখ করতে হবে।

অ্যাপিয়ার্ড প্রার্থী; অর্থাৎ যাঁদের স্নাতক পর্যায়ের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো ফলাফল প্রকাশ হয়নি, তাঁরা বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন। তবে তাঁদের আবেদন করার সময় স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা শুরু ও শেষের তারিখ লিখতে হবে। এ পরীক্ষা অবশ্যই আবেদন করার সর্বশেষ তারিখের আগেই সম্পূর্ণরূপে শেষ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সময় বিভাগীয় প্রধানের প্রত্যয়নপত্র অবশ্যই ভাইভা বোর্ডে জমা দিতে হবে। আপনার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা থাকলে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো নির্ভুলভাবে লিখুন। তবে স্নাতকোত্তর করা না থাকলে ক্যাডার কিংবা নন-ক্যাডারের যেকোনো চাকরি পেতে কোনো সমস্যা হবে না। পিএসসি সম্প্রতি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিকে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমতুল্য বিবেচনা করা হবে। মনে রাখবেন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে বিষয়ের ঘরে যদি কেউ Others পূরণ করেন, তাহলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে (ক্যাডার) লিখিতভাবে জানাতে হবে। কেউ যদি স্নাতক পর্যায়ে বিদেশি ডিগ্রিধারী হয়ে থাকেন, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়/বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে সমমানের সনদ সংগ্রহ করে নেবেন। প্রার্থীকে সমমানের সনদের মূল কপি অবশ্যই মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে উপস্থাপন করতে হবে।

শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোর জন্য কিছু অতিরিক্ত তথ্য প্রয়োজন হতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে এ ঘর প্রযোজ্য না হলে কিছু করার দরকার নেই। আর প্রযোজ্য হলে সনদ অনুসারে রোল, রেজিস্ট্রেশনসহ সব প্রয়োজনীয় ঘর পূরণ করবেন। এ অংশের সর্বশেষ ধাপে আপনার পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয় বাছাই করতে হবে। আপনি যদি উভয় ক্যাডার কিংবা শুধু কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের প্রার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয়টি বাছাই করুন। সাধারণ ক্যাডারের প্রার্থী হলে কিছুই করতে হবে না। ওপরের সব তথ্য সঠিক দিয়েছেন মর্মে প্রত্যয়ন দিয়ে পরবর্তী বাটন চাপুন।

আরও পড়ুন

তৃতীয় অংশে ক্যাডার নির্বাচন

ক্যাডার তালিকা থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পছন্দক্রম সাজাবেন। প্রতিটি ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা, পদোন্নতি এবং কাজের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত আগে জেনে নেবেন। সব ক্যাডার পদই নবম গ্রেডের। তবে প্রতিটি ক্যাডারের কাজের পরিধি আলাদা। তাই আপনার ব্যক্তিত্ব, পড়াশোনা, পরিবারের পছন্দ এবং ভালো লাগাকে প্রাধান্য দেবেন। আবেদনের সময় যে ক্যাডারে পছন্দ দেবেন, পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না।

ক্যাডার পছন্দক্রম সাজানো হয়ে গেলে পরের পেজে যাবেন। সেখানে রিভিউ করার জন্য একটি পেজ আসবে। সম্পূর্ণ আবেদন ফরমটি ধৈর্য ধরে আবার পড়ুন এবং কোনো ভুল থাকলে সংশোধন করে নেবেন। এরপর যথাযথভাবে ভ্যালিডেশন কোড, নিজের ছবি এবং স্বাক্ষর আপলোড করুন। সব ঘর সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে সাবমিট করতে হবে। আবেদন চূড়ান্তভাবে সাবমিট করার পর ইউজার আইডি-সংবলিত একটি অ্যাপ্লিকেন্টস (আবেদনকারী) কপি পাবেন। অ্যাপ্লিকেন্টস কপি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে।