চাকরির সাক্ষাৎকারে যা এড়াবেন, যা বলবেন

আপনি যে পদের জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তার সুযোগ এবং পেশা বা শিল্পের বাইরে কোনো লক্ষ্য তালিকাভুক্ত করবেন না
ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া

চাকরি পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার পর্বটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় নিয়োগকারী সরাসরি মূল প্রশ্নটি করে ফেলেন। তাঁরা জানতে চান, আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্নের জুতসই জবাবের ওপর নির্ভর করে চাকরি পাওয়া, না-পাওয়া। তাই সাক্ষাৎকার পর্বে যাওয়ার আগে স্পষ্টভাবে প্রত্যাশা ও পছন্দসই ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্য চিহ্নিত করতে হবে। অবশ্যই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ারের লক্ষ্যগুলোও স্পষ্ট করতে হবে। তাহলে সহজেই নিয়োগকারীদের কাছে জুতসই প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন। এতে চাকরি পাওয়া অনেক সহজ হবে।

নিয়োগকারী আসলে যা জানতে চান

নিয়োগকারী যখন কর্মজীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তখন প্রশ্নগুলোর পরিপ্রেক্ষিত চিন্তা করুন—আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান বা কেন আপনি এখানে কাজ করতে চান?

আরও পড়ুন

সাক্ষাত্কারকারী ব্যক্তি আপনার পেশাগত লক্ষ্য বর্তমান কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁরা দেখতে চান, আপনি যা অর্জন করতে চান এবং কোম্পানি আপনাকে কী দিতে পারে, তার মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র আছে কি না।
যেহেতু নতুন নিয়োগ দিলে কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়, যা ব্যয়বহুল। তাই নিয়োগকর্তারা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরই নিয়োগ দিতে চান। তাঁরা নিশ্চিত হতে চান, আপনি শুধু আপনার উন্নতির সিঁড়ি হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজছেন না। বরং প্রতিষ্ঠানকেও সর্বোচ্চ দিতে চান।

আপনি জবাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নকারীও মূল্যায়ন করেন যে আপনি এই প্রতিষ্ঠানকে কী দিতে পারবেন।

প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলো এড়ানো উচিত

সাক্ষাত্কারে ক্যারিয়ারের লক্ষ্য প্রকাশ করার সময় টাইমলাইন, প্রচার বা আপনি নিজেকে ঠিক কোথায় দেখেন, সে সম্পর্কে খুব নির্দিষ্ট হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। এতে ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, ঠিক ওই সময় যদি ওই পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে আপনি ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

কোনো নিয়োগকারী পরিচালককে কখনোই বলবেন না, আপনি তাঁদের প্রতিষ্ঠানে শুধু নিজের দক্ষতা বাড়াতে চান। যা শিখেছেন তা নিতে এবং আপনার দক্ষতা অন্য কোথাও ব্যবহার করতে চান, এটাও বলবেন না। যদি প্রশ্নকারী এই বিষয়ে জেনে যান, তাহলে আপনার চাকরির হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

আরও পড়ুন

আমার লক্ষ্য দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া এবং এর মাধ্যমে ছয় সংখ্যার বেতন অর্জন করা—এসব বিষয় বলবেন না। কারণ, এটি বলার মাধ্যমে আপনি বোঝাচ্ছেন যে এই প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কাজটি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যদি শুধু পদোন্নতির ওপর জোর দেন, তাহলে নিয়োগকারী বোঝেন আপনার এই প্রতিষ্ঠানে লেগে থাকার মানসিকতা নেই। আপনি কেবল নিজের উন্নতির সুযোগ খুঁজতে থাকবেন। এ ছাড়া প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বেতন প্রসঙ্গ আনবেন না। বরং বলতে পারেন, এই চাকরি আপনি চান।

আপনি যে পদের জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তার সুযোগ এবং পেশা বা শিল্পের বাইরে কোনো লক্ষ্য তালিকাভুক্ত করবেন না। এতে আপনার সময় নষ্ট হবে, সেই বিরক্ত হবেন প্রশ্নকারীও।

লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন

প্রশ্নের উত্তর তৈরি করার সময় আপনার আগের ভূমিকা সম্পর্কে চিন্তা করুন। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে নিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সম্ভাব্য নিয়োগকর্তা কীভাবে আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার কাছ থেকে উপকৃত হবেন।
ক্যারিয়ারের লক্ষ্যগুলো কী? কীভাবে উত্তর দিতে হয়, এর জন্য নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো—

আরও পড়ুন

স্বল্পমেয়াদি ক্যারিয়ারের লক্ষ্য

ভূমিকা: প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি এই সংস্থায় অবদান রাখার সুযোগ নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত। আগামী কয়েক বছরে এই সংস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারব।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য: আমি [ওপেন জব টাইটেল] ভূমিকা আয়ত্ত্ব এবং [নির্দিষ্ট দক্ষতা] দক্ষতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমি টিমে আরও দায়িত্ব নিতে আগ্রহী।
উন্নতি ও শেখা: ক্রমাগত শেখা ও উন্নতির বিষয়ে আমি বেশ উত্সাহী। সক্রিয়ভাবে জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়িয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিতে আগ্রহী। আমি বিশ্বাস করি, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা এবং শিল্প সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলে দক্ষতা আরও বাড়বে।

আরও পড়ুন

কোম্পানির লক্ষ্যের সঙ্গে সমন্বয়: আমার লক্ষ্য হলো এই প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান সম্পদ হয়ে ওঠা এবং এর ধারাবাহিক সাফল্যে অবদান রাখা। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলোকে কোম্পানির কৌশলগত উদ্দেশ্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং সেগুলো অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সংক্ষিপ্ত সংস্করণ: আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে আমি কোম্পানির কার্যক্রম বুঝে নিজেকে একজন অত্যন্ত দক্ষ কর্মী হতে দেখছি। আমি প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখতে আগ্রহী। আমি আমার নেতৃত্বের দক্ষতা বাড়াতে এবং দলের মধ্যে সম্ভাব্য ভবিষ্যতের সুযোগের জন্য প্রস্তুত করতে আগ্রহী।

দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ারের লক্ষ্য

ভূমিকা: আমি নিজেকে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে এই সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার কল্পনা করি। আমি কোম্পানির লক্ষ্য ও মূল্যবোধ সম্পর্কে উত্সাহী। বিশ্বাস করি, এর দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যে আমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা: আমি নিজের নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশে এবং অন্যদের তাঁদের লক্ষ্য অর্জনে অনুপ্রাণিত করতে বিশেষভাবে আগ্রহী।

আরও পড়ুন

উন্নতি ও শেখা: আমি সাম্প্রতিক শিল্প প্রবণতা ও প্রযুক্তি বিষয়ে শেখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অব্যাহত শিক্ষা, সম্মেলন ও দক্ষতাবিকাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমি সক্রিয়ভাবে নতুন দক্ষতা শেখার এবং উন্নতি করার সুযোগ খুঁজব।

সংক্ষিপ্ত সংস্করণ: আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে নিজেকে [নির্দিষ্ট ক্ষেত্র] সংশ্লিষ্ট বিভাগে নেতৃত্বের ভূমিকায় রূপান্তরিত হতে দেখছি। আমি নিশ্চিত, এই নেতৃত্বের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আমাকে কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করে তুলবে। দল ও বিভাগের কৌশলগত লক্ষ্যে অবদান রাখব। প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাসঙ্গিক থাকতে আমি ক্রমাগত শিখতে ও শিল্প প্রবণতা সম্পর্কে আপডেট থাকার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।