৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ডিসেম্বরে, যেভাবে নেবেন প্রস্তুতি

৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৩ হাজার প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কম সময়ের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শেষ সময় ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তে কীভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে, অভিজ্ঞতা থেকে সেসব পরামর্শ দিয়েছেন ৩৫তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মাহবুব হাসান

মৌখিক পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা পড়ুন। প্রতীকী ছবি। মডেল: ইয়াসফি, সিফাত, নুসরাত ও রিয়া
ছবি: খালেদ সরকার

শেষ সময়ের প্রস্তুতি

এত দিন লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা ছিল। যখন লিখিতের ফল হাতে এল তখন অদ্ভুত একধরনের অনুভূতি কাজ করে। এটা খুব স্বাভাবিক, প্রায় সবারই হয়। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পরীক্ষা যেহেতু এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে, তাই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। 

নিজেকে মনে মনে মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে কল্পনা করুন। মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। মৌখিক পরীক্ষাবিষয়ক বাজারের যেকোনো একটি বই হাতে রাখুন। প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ুন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়তে হবে। কমপক্ষে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা পড়ুন। প্রায় সব পত্রিকার ই-পেপার সংস্করণ আছে। তাই চাইলে অনলাইনেও পড়তে পারেন।

প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ১০ মিনিট একান্তে নিজেকে সময় দিন। যাঁরা পারেন, মেডিটেশন করুন। বিরক্তিকর লোকদের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। অন্যের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন কিন্তু তুলনা করবেন না। প্রতিটি মানুষের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা আলাদা। কোনো তদবির করবেন না, অযথা সময় নষ্ট হবে।

পারলে কিছু মডেল ভাইভা দিন। সামর্থ্য না থাকলে আপনজনের কাছেই দিন। আয়নার সামনেও দিতে পারেন। অনলাইনে অনেক ফ্রি কোর্স পাওয়া যায়। সেগুলোও করতে পারেন। নিজের নাম, জন্মস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিষয়, সবলতা ও দুর্বলতা জানুন। প্রয়োজনে কাছের মানুষের সাহায্য নিন। নিজের জন্মস্থান সম্পর্কে জানতে বাংলা একাডেমির জেলা–সম্পর্কিত বই পড়তে পারেন।

ক্যাডার চয়েজ ও চয়েজের কারণ সম্পর্কে জোরালো যুক্তি তৈরি করুন। আপনার বিষয় ও ক্যাডার মিলে যায় এমন কোনো বিসিএস ক্যাডারের সঙ্গে কথা বলুন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানুন। বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পারেন। মনে রাখতে সুবিধা হবে।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থাকুন। পছন্দের গান শুনুন, সিনেমা দেখুন ও বই পড়ুন। চাপমুক্ত থাকতে হবে। কিছু কমন প্রশ্ন যেমন নিজের সম্পর্কে বলা, প্রথম পছন্দ ও বিষয় এসব উত্তর প্রস্তুত করে অনুশীলন করুন। এমনভাবে উত্তর প্রস্তুত করুন যেন বাক্য সরল হয় এবং মুখস্থ মনে না হয়।

সর্বোপরি নিজেকে ভাইভা বোর্ডের প্রশ্নকর্তাদের স্থানে বসিয়ে ভাবার চেষ্টা করুন। একজন হবু ক্যাডার কর্মকর্তার কোন কোন বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি, সে বিষয়গুলো ভাবুন। এটি আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে ও বোর্ডের মনোভাব বুঝতে সাহায্য করবে।

মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে করণীয়

মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে করণীয় আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়। রাতে ভালো ঘুমাতে হবে। আপনার শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি দেয় এমন কিছু করুন। তবে ভুলেও নতুন বিষয় পড়তে যাবেন না। বিশ্রাম নিন। মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়ক হবে। কীভাবে যাবেন, কখন ঘুম থেকে উঠবেন ও কী পরবেন, তা রাতেই ঠিক করে রাখতে হবে। সকালে একটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ে যাবেন। পরীক্ষার দিনের বাংলা ও ইংরেজি তারিখ, সাল ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মাথায় রাখবেন।

নতুন কোনো পোশাক বা অনুষঙ্গ চেষ্টা করতে যাবেন না। যা আপনার কাছে স্বস্তিদায়ক নয়, তা বোর্ডে অবশ্যই প্রকাশ পেয়ে যাবে। আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুষঙ্গ নেবেন এবং অবশ্যই অতি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে ভুলবেন না। পরীক্ষা দিতে একা যাবেন। এটা আপনার আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। চাকরিটা কিন্তু একাই করতে হবে। বোর্ডের বাইরে সবার সঙ্গে বিনয়ী থাকুন। এগুলোও ভাইভার অংশ।

স্মিত হাসিমুখ ও সরলতা সব সময়ই আকর্ষণীয়। তাই অনুমতি নিয়ে ঢোকার সময় তা বজায় রাখুন। যথাযথ দূরত্বে গিয়ে সালাম দিন। বসতে বলার আগপর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকুন। বসতে বললে ন্যূনতম শব্দ করে বসে ধন্যবাদ দিন।

বোর্ডের কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে হাত মেলান। নিজে থেকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার অনেকের মধ্যে অন্য হাত দিয়ে হাত মেলানো অর্থাৎ দুই হাত দিয়ে অপর পক্ষের হাত ধরার অভ্যাস থাকতে পারে। কিন্তু এখানে তা করা যাবে না।

প্রশ্ন বাংলায় করলে বাংলায় আর ইংরেজিতে করলে ইংরেজিতে উত্তর দিন। যদি উত্তরের প্রস্তুতি ইংরেজিতে যথাযথভাবে না দিতে পারেন তাহলে বিনয়ের সঙ্গে অনুমতি নিয়ে বাংলায় উত্তর দিতে পারেন। অযথা চেষ্টা করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন না।

প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। উত্তর না জানলে বিনয়ের সঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করুন। ধারণা থেকে কিছু বলতে না যাওয়াই ভালো। নেতিবাচক প্রশ্নের উত্তরও ইতিবাচকভাবে দিন। ইতিবাচকতা আপনার উদ্যম প্রকাশ করে। প্রশ্ন ভালো করে শুনুন। পুরোটা না শুনে উত্তর দিতে যাবেন না। প্রশ্ন শুনে কোনো ধরনের আড়ষ্টতা ছাড়া উত্তর দিন। চেয়ারে হেলান দেওয়া অথবা বেশি ঝুঁকে না বসে পিঠ সোজা করে বসুন।

কখনো মেজাজ হারানো যাবে না। মেজাজ হারানোকে এখানে অযোগ্যতা হিসেবে দেখা হবে। মনে রাখবেন, আপনি যা না, তা প্রমাণ করতে যাবেন না। আপনি যেমন তেমনভাবেই তুলে ধরুন। ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা আপনার সততা ও অসততা বের করতে দক্ষ। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হবেন না, যা আপনার স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বোর্ডের অনুমতি পেলে হাসিমুখে ধন্যবাদ ও সালাম দিয়ে বিদায় নিন। সঙ্গে নিয়ে আসা কাগজপত্র নিতে ভুলবেন না। সবার জন্য শুভকামনা।