চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে দক্ষতার ধরন

চাকরি পাওয়া বা নিয়োগের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে ‘উপযুক্ত’ প্রার্থীর নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে নিয়োগকারীরা এই কঠোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আরও নমনীয় হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দক্ষতার নতুন সূচক খুঁজছে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারি বদলে দিয়েছে দুনিয়ার অনেক বিষয়কেই। হোম অফিস চালুর মাধ্যমে কাজ এবং কাজের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপুল পরিবর্তন। শুধু তা–ই নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্নতা। আগে একজন উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচিত করা হতো তাঁর পড়াশোনা, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, দক্ষতার প্রমাণ, প্রযুক্তিগত ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। এসব বিষয় যে প্রার্থীর মধ্যে বিশেষভাবে উপস্থিত থাকত, তাঁকে চাকরির জন্য মনোনীত করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতির বদল ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপযুক্ত প্রার্থীর যে পুরোনো ব্যাখ্যা, সেখান থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান বেরিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দক্ষতার নতুন সূচক খুঁজছে। কিছু ক্ষেত্রে তারা এককভাবে উপযুক্ত প্রার্থী খোঁজার ধারণাই বদলে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।

যদিও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা দীর্ঘদিন থেকেই প্রভাব বিস্তার করে আসছে, তবে কিছু প্রতিষ্ঠান শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য কর্মী নিয়োগ করা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে বাস্তব জ্ঞানের আর প্রয়োজন নেই—এমন ধারণাও অবান্তর। কিছু কাজে এখনো উচ্চমাত্রায় নির্দিষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন, যেমন স্প্রেডশিটের জন্য অধিকতর জ্ঞান বা ভিডিও সম্পাদনা সফটওয়্যারের মাস্টার হওয়ার ক্ষেত্রে এসব লাগবেই।

যদিও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা দীর্ঘদিন থেকেই প্রভাব বিস্তার করে আসছে, তবে কিছু প্রতিষ্ঠান শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য কর্মী নিয়োগ করা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে বাস্তব জ্ঞানের আর প্রয়োজন নেই—এমন ধারণাও অবান্তর।

তবে বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, কিছু কিছু কাজের বিবরণ প্রায় সময় কম স্পষ্ট মানদণ্ডকে সামনে নিয়ে আসছে। এতে প্রার্থীদের নেতৃত্ব বা দলগত কাজ করার মতো অল্প দক্ষতা প্রদর্শন করতে বলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিভিত্তিক ব্যাংক সেনলার এফএসবির আইটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ নিয়োগকর্তা এড হান বলেছেন, মহামারির তিন বছরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় এখন কর্মী নিয়োগে সফট স্কিলের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে।

চেক প্রজাতন্ত্রভিত্তিক প্রযুক্তি কর্মী নিয়োগকারী ও ‘জব সার্চ গাইড: বি ইওর ওন ক্যারিয়ার কোচ’ বইয়ের লেখক জান তেগজে বলেছেন, যাঁরা রিমোট বা হাইব্রিড কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন নিয়োগকর্তারা তাঁদের মনোনয়নের তালিকার উপরে রাখেন। তিনি বলেন, সহানুভূতি, প্রতিক্রিয়াশীলতা, সম্মান ও অন্যকে ভালো শোনার দক্ষতার মতো গুণাবলি অপরিহার্য। আদর্শ প্রার্থীদেরও অভিযোজনযোগ্যতা রয়েছে। এটি এমন একটি গুণ, যা ম্যাককিনসে ও কোম্পানির গবেষণায় দেখা গেছে, এটা কোম্পানিগুলোর অস্থিরতার সময় কর্মচারীদের দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
এড হান বলেন, করোনা মহামারি কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন এনেছে। কারণ, অনেক কর্মীই এ সময়ে পেশাদার বিকাশের সুযোগ হ্রাস করেছিল। এভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর দক্ষতার ওপর জোর না দেওয়ার কারণে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে তালিকায় সফট স্কিল ও হার্ড স্কিল উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করবে। কারণ, অনেক প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময় নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এখনো প্রস্তুত হতে পারেনি।
জান তেগজে, চেক প্রজাতন্ত্রভিত্তিক প্রযুক্তি কর্মী নিয়োগকারী ও লেখক

কিছু চাকরির বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলো মূলত একটি আনুষ্ঠানিকতা। আবেদন করার জন্য যেগুলোর সব মানদণ্ড পূরণ না করলেও চলে। যেসব প্রার্থী নিজেদের প্রথাগতভাবে উপযুক্ত মনে করেন না, এ ক্ষেত্রে সেসব প্রার্থীও আবেদন করার সুযোগ পান।

যা–ই হোক জান তেগজে এর উল্টো কথাও বলেছেন। তিনি প্রার্থীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এটি যতটা উন্মুক্ত মনে হয়, আসলে ততটা নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, কৌশলটি একটি শক্ত শ্রমবাজারে প্রতিষ্ঠানের সুবিধার জন্যও কাজ করে। কারণ, দক্ষতার এ ধরনের বিবরণ মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং প্রার্থীদের আবেদন করতে উত্সাহিত করে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডেটাবেজে অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী পেতে পারে। যখন প্রয়োজন হবে, তখন নির্দিষ্ট দক্ষতার মানদণ্ড দেখে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে সহজ হবে।

হান বলেছেন, এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের আবেদনকারীদের আবেদন করতে উৎসাহিত করছে এবং তাঁদের কঠোর দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছে। আবার অনেকে নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এখনো এমন প্রার্থী থাকবে, যারা দক্ষতায় অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি উপযুক্ত।

এখনো এমন প্রার্থী থাকবে, যারা দক্ষতায় অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি উপযুক্ত।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

তবে তেগজে উল্লেখ করেছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে তালিকায় সফট স্কিল ও হার্ড স্কিল উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করবে। কারণ, অনেক প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময় নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এখনো প্রস্তুত হতে পারেনি।

শেষ পর্যন্ত তিনি বলেছেন, একজন ‘উপযুক্ত’ প্রার্থীর সংজ্ঞা আগের চেয়ে অনেক বিস্তৃত। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই একজন প্রার্থীর স্কুলিং বা আগের প্রতিষ্ঠানে কাজের বিষয়ে চিন্তা করি না। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী, তাঁদের দক্ষতা, মানসিকতা ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই আছে কি না, সেটিই আমার কাছে মুখ্য বিষয়।’