চাকরির প্রস্তুতির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে ব্যবহার করবেন

ছবি: এআই/প্রথম আলো

বর্তমান যুগ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই দিনের বেশির ভাগ সময় ফেসবুক ও ইউটিউবে বুঁদ হয়ে থাকেন। তাই শুধু নিউজ ফিডে স্ক্রুল করে সময় নষ্ট না করে ফেসবুক ও ইউটিউবও হতে পারে চাকরির প্রস্তুতির জন্য ভালো প্ল্যাটফর্ম। চাকরির বাজার সব সময়ই প্রতিযোগিতামূলক। বদলে গেছে প্রস্তুতির ধরনও। আগে যেখানে লাইব্রেরিতে গিয়ে দল বেঁধে পড়তে যেত সবাই, এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক, টেলিগ্রাম, গুগল ড্রাইভ এবং আরও অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করছেন আপনি? প্ল্যাটফর্মগুলো অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যবহার করলে সময় নষ্ট হতে পারে। তবে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করলে এগুলো হয়ে উঠতে পারে সাফল্যের শক্তিশালী হাতিয়ার। চাকরির প্রস্তুতিতে কার্যকরভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ইউটিউব—

শিক্ষার অফুরন্ত উৎস বলা হয় ইউটিউবকে। এটি হলো চাকরির প্রস্তুতির জন্য একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। কনসেপ্ট ক্লিয়ার করার জন্য এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম। সাধারণ জ্ঞান, গণিত, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যকরণ থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ স্কিল পর্যন্ত সব ধরনের কনটেন্ট পাওয়া যায়।

কীভাবে ব্যবহার করবেন—

বিষয়ভিত্তিক ভিডিও: গণিতের শর্টকাট, ইংরেজি ব্যকরণ, বাংলা সাহিত্য বা সাধারণ জ্ঞানের সহজ ব্যাখ্যা পেতে জব চ্যানেলগুলো ফলো করুন।

প্রশ্ন সমাধান: অনেক চ্যানেলে বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের সমাধান বা মক টেস্টের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এটি পরীক্ষার ধরন বুঝতে সাহায্য করে।

ইন্টারভিউ প্রস্তুতি: ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রশ্নোত্তর, শরীরী ভাষা এবং সাধারণ টিপসের ভিডিও দেখে আত্মবিশ্বাস বাড়ান।

প্লে-লিস্ট তৈরি: নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক প্লে-লিস্ট তৈরি করে নিয়মিত পড়ুন।

মোটিভেশনাল কনটেন্ট: সফল প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা বা মোটিভেশনাল ভিডিও দেখে প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

আরও পড়ুন

সতর্কতা—

অপ্রাসঙ্গিক বিনোদনের ভিডিও এড়িয়ে শুধু শিক্ষামূলক কনটেন্টে ফোকাস করুন। ভিডিও দেখার সময় নোট নিন, অন্যথায় তথ্য ভুলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ফেসবুক—

ফেসবুক শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, এখানে রয়েছে হাজারো স্টাডি গ্রুপ ও পেজ, যেখানে শেয়ার করা হয় নোট, ভাইভা প্রশ্ন ও চাকরির নোটিশ। প্রিলি, লিখিত, ভাইভা—সব পরীক্ষার প্রশ্ন, পরীক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা, সাজেশন পোস্ট হয় এখানে। ফেসবুক চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তথ্য আদান-প্রদান ও বিভিন্ন আলোচনা হয়।

ছবি: প্রথম আলো

যেভাবে ব্যবহার করবেন—

গ্রুপে যোগ দিন: চাকরির বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দিন। গ্রুপে প্রশ্ন-উত্তর, নোট এবং পরীক্ষার টিপস শেয়ার করা হয়। এখানে সক্রিয় থাকুন এবং প্রশ্ন করে সন্দেহ দূর করুন।  চাকরির পেজগুলোতে চাকরির বিভিন্ন বিষয়ে আপডেট পাওয়া যায়। অনেক শিক্ষক ফেসবুকে লাইভ ক্লাস নেন। এগুলোতে অংশ নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করুন। গ্রুপে শেয়ার করা পিডিএফ, নোট সংগ্রহ করে নিজের প্রস্তুতিতে যোগ করুন। সফল প্রার্থীদের পোস্ট বা ভাইভা অভিজ্ঞতা পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি সমৃদ্ধ করুন। তবে অপ্রাসঙ্গিক পোস্ট, বিজ্ঞাপন, বা নেতিবাচক মন্তব্য এড়িয়ে চলুন।  তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন, কারণ গুজব ছড়াতে পারে।

টেলিগ্রাম—

বিসিএস/ব্যাংক/প্রাইমারি/বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি—সব সেকশনের জন্য নির্দিষ্ট গ্রুপ রয়েছে এখানে পিডিএফ বই, প্রশ্ন, মডেল টেস্ট, সমাধান নিয়মিত শেয়ার হয়। টেলিগ্রাম চাকরির প্রস্তুতির জন্য একটি দ্রুত এবং সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ফাইল শেয়ারিং এবং গোপনীয়তার সুবিধা রয়েছে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন—

চ্যানেলে যোগ দিন: চাকরির বিভিন্ন  চ্যানেলে পিডিএফ বই, নোট, কুইজ, এবং মডেল টেস্ট শেয়ার করা হয়।

গ্রুপ আলোচনা: ছোট গ্রুপে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্বলতা কাটান। নিজের প্রশ্ন শেয়ার করে সমাধান পাবেন।

কুইজ বট: কিছু চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয় কুইজ বট রয়েছে, যেখানে নিয়মিত প্রশ্নের প্র্যাকটিস করা যায়।

ফাইল সংরক্ষণ: টেলিগ্রামে ডাউনলোড করা ফাইল অফলাইনে পড়ার জন্য সংরক্ষণ করুন। বিষয়ভিত্তিক ফোল্ডারে সাজিয়ে রাখুন।

আপডেট ট্র্যাক: চ্যানেলের পিন পোস্ট বা নোটিফিকেশন চেক করে বিভিন্ন চাকরির আপডেট তথ্য জানুন।

ছবি: প্রথম আলো

সুবিধা—

বিজ্ঞাপনমুক্ত এবং দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান। বড় ফাইল শেয়ারিং এবং অফলাইন অ্যাক্সেসের সুবিধা।

সতর্কতা—

প্রতারণামূলক বা পেইড কোর্সের ফাঁদ এড়িয়ে ফ্রি রিসোর্সে ফোকাস করুন। অতিরিক্ত চ্যানেলে যোগ না দিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটিতে সক্রিয় থাকুন।

গুগল ড্রাইভ

ডাউনলোড করা পিডিএফ, নোট, বা প্রশ্নপত্র বিষয়ভিত্তিক ফোল্ডারে সংরক্ষণ করুন। যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেসযোগ্য এই প্ল্যাটফর্ম আপনার ডিজিটাল লাইব্রেরি হিসেবে কাজ করবে।

আরও পড়ুন

বিশেষভাবে লক্ষণীয়

প্রতিদিন অনলাইনে ১-২ ঘণ্টা নির্দিষ্ট করে প্রস্তুতির জন্য ব্যয় করুন। অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট এড়িয়ে চলুন। ফেসবুক ও ইউটিউবে শুধু পড়াশোনার জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করলে বেশি উপকৃত হবেন। অনলাইন থেকে শিখে খাতায় নোট করুন। এটি দীর্ঘ মেয়াদে মনে রাখতে সাহায্য করে। অনলাইনে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন। নির্ভরযোগ্য সোর্স বেছে নিন। গুরুত্বপূর্ণ নোট বা পিডিএফ প্রিন্ট করে রাখুন, যাতে ইন্টারনেট না থাকলেও পড়া যায়।

সমন্বয় করুন

ইউটিউব থেকে ভিডিও লেকচার, ফেসবুক থেকে আপডেট ও নেটওয়ার্কিং এবং টেলিগ্রাম থেকে দ্রুত স্টাডি ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করে একটি ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়। সঠিক পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলা থাকলে এই প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার চাকরির প্রস্তুতিকে করে তুলবে আরও সহজ ও কার্যকর। তবে মনে রাখবেন, এই প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল সহায়ক মাধ্যম। সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো নিয়মিত চর্চা, শৃঙ্খলা, এবং অটুট ইচ্ছাশক্তি। মোবাইলে আসক্তি নয়, মোবাইলকে আপনার চাকরির প্রস্তুতির কাজে লাগান।

আরও পড়ুন