৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

৪৫তম বিসিএসের আবেদন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন পরীক্ষার অপেক্ষা। যাঁর প্রস্তুতি যত ভালো থাকবে, পরীক্ষায় পাসের সম্ভাবনা তাঁর তত বেশি। প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতির বিকল্প নেই। প্রিলিমিনারিতে সফল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে চতুর্থ স্থান অধিকারী তারেক রহমান

প্রিলিমিনারিতে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিলে পাসের সম্ভাবনা বেশি থাকে। মডেল: সিফাত ও নুসরাত
ছবি: খালেদ সরকার।

বিসিএসের ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ধাপ প্রিলিমিনারি। কারণ, এখানে প্রতিযোগী বেশি। কিন্তু পাস করানো হয় কম। যেহেতু প্রিলিমিনারির নম্বর চূড়ান্ত ফলাফলে কাজে লাগে না, তাই প্রিলিতে পাস করাটাই মুখ্য। প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে হলে পড়ার চেয়ে মনে রাখা বেশি জরুরি। এ জন্য বারবার রিভিশন দিতে হবে। পরীক্ষার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে নতুন করে কোনো কিছু না পড়ে আগের পড়াগুলো বারবার রিভিশন দেওয়া জরুরি। পিএসসি সিলেবাসের বাইরে কোনো প্রশ্ন করে না। আমরা পড়তে পড়তে ভুলে যাই বলে মনে হয় সিলেবাসের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে। ভালোভাবে পরিকল্পনা করে, পড়ার কৌশল ঠিক করে ও নিয়মিত পড়াশোনা করলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য করণীয়

প্রিলিমিনারিতে একেক বিষয়ে নম্বর বণ্টন একেক রকম। নম্বরে ভিন্নতা থাকলেও গুরুত্বের দিক দিয়ে সব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পাস করতে হলে সব বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রিলিমিনারিতে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি ভালো থাকলে লিখিত পরীক্ষায়াও সুফল পাওয়া যায়।

ইংরেজি ব্যাকরণ ও সাহিত্য (৩৫ নম্বর)

ইংরেজি সাহিত্য যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় আসে না, তাই ইংরেজি সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখকের সাহিত্যকর্মগুলো পড়লেই হবে। একটু কৌশল অবলম্বন করলে ইংরেজি সাহিত্যে ৮/৯ নম্বর পাওয়া সম্ভব। ইংরেজি ব্যাকরণ ও শব্দ ভাণ্ডার যত বেশি জানা থাকবে, ফ্রি হ্যান্ডরাইটিং তত বেশি ভালো হবে।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (৩৫ নম্বর)

প্রিলিমিনারিতে বাংলায় ভালো প্রস্তুতি থাকলে লিখিত পরীক্ষায়ও সুবিধা পাওয়া যায়। ব্যাকরণের অনেক বিষয় থাকে, যেখান থেকে প্রশ্ন বেশি আসে, আবার অনেক বিষয় থেকে প্রশ্ন কম আসে। গত বছরের প্রশ্নগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাছাই করে সেগুলো জোর দিয়ে পড়তে হবে। যেমন সন্ধি, সমাস, বানান, সমার্থক শব্দ, পরিভাষা, ধ্বনি, বর্ণ, বাক্য শুদ্ধি, পদ ও প্রকৃতি-প্রত্যয় ইত্যাদি। সাহিত্য অংশে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রমথ চৌধুরী, বঙ্কিম, পঞ্চ পাণ্ডব, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্য বেশি পড়তে হবে।

গাণিতিক যুক্তি (১৫ নম্বর)

অষ্টম, নবম–দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বই থেকে সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায়গুলো শেষ করতে হবে। গণিতে অনুশীলনের বিকল্প নেই। যত বেশি অনুশীলন করবেন, তত ভালো করার সুযোগ রয়েছে।

মানসিক দক্ষতা (১৫ নম্বর)

মানসিক দক্ষতা অংশে প্রিলিমিনারি আর লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস একই। যাঁদের গণিতে দুর্বলতা আছে, তাঁরা মানসিক দক্ষতা অংশে জোর দিতে পারেন। এখানে প্রস্তুতি নিলে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি (৩০ নম্বর)

এই অংশে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং উচ্চমাধ্যমিকের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বই থেকে সিলেবাসের সঙ্গে মিল রেখে অধ্যায়গুলো পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি (৩০ নম্বর)

নবম–দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই এবং মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, অর্থনীতি, শিল্প, কৃষি, জনসংখ্যা, উপজাতি ও খেলাধুলা বিষয় পড়তে হবে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বিশ্বমণ্ডলে বাংলাদেশের অর্জন ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা বেশি করে পড়তে হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (২০ নম্বর)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা, স্নায়ুযুদ্ধ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক সংগঠনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলোর প্রতিষ্ঠার সাল, সদর দপ্তর ও সদস্য জানা জরুরি। এ ছাড়া জলবায়ু, সাম্প্রতিক বিভিন্ন যুদ্ধ, সংঘাত ও সংকট ইত্যাদি বিষয়ে জোর দিতে হবে।

ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (১০ নম্বর)

নবম–দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বই থেকে সিলেবাস দেখে পড়তে পারেন।

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন (১০ নম্বর)

অনেকেই নৈতিকতা ও সুশাসন পড়েন না। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আগের বিসিএসের প্রশ্ন এবং বিভিন্ন সংস্থার অর্থ, জাতিসংঘ, আইএমএফ, এডিবির সুশাসনের মানদণ্ড, উপাদান, সূচকগুলো পড়লেই চার-পাঁচটি কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুশাসন ও নৈতিকতা সম্পর্কে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি, সংজ্ঞা অনেক বেশি বলে আগের বিসিএসে যেসব এসেছে, সেগুলো পড়লেই মোটামুটি দু–একটি উক্তি বা সংজ্ঞা কমন পাওয়া সম্ভব।

বিশেষভাবে লক্ষণীয়

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয় নেগেটিভ মার্কিংয়ের ক্ষেত্রে। আপনি যদি একটি ভুল করেন আপনার ১.৫ মার্কস কাটা যাবে। আপনি যদি ১২৫/১৩০ মার্কস নিশ্চিত করতে পারেন। এরপর ঝুঁকি নিয়ে যত দাগাবেন, তত মার্কস কমার সম্ভাবনা তৈরি হবে। পিএসসি প্রশ্নে অনেক ফাঁদ ফেলে রাখে। পিএসসি চায়, আপনি তাদের ফাঁদে পা দেন। বিসিএসের আগের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে পাঁচ-ছয়টি। এসব প্রশ্ন পত্রিকা থেকেই আসে। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকলে এসব প্রশ্নের উত্তর করতে পারবেন। বেশি বেশি পরীক্ষা দেবেন। অনলাইনেও পরীক্ষা দেওয়া যায়। যত বেশি পরীক্ষা দেবেন, তত বেশি নিজেকে যাচাই করতে পারবেন। সবার জন্য শুভ কামনা।