দুদকে চাকরির প্রস্তুতির জন্য করণীয়

তরুণ-তরুণীদের কাছে অন্যতম পছন্দের চাকরি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক পদ। প্রায় প্রতিবছরই সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক ও কোর্ট পরিদর্শক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এসব পদের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় সফল হওয়া যাবে, অভিজ্ঞতা থেকে সেসব পরামর্শ দিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. আনোয়ার পারভেজ

দুদকের পরীক্ষায় পাস করতে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী রুটিনমাফিক পড়তে হবে
ছবি: প্রথম আলো

দুদকের চাকরিতে রয়েছে বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ। দুর্নীতির প্রতিকার ও প্রতিরোধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকায় দুদকের চাকরি তরুণদের কাছে আরও আকর্ষণীয়। সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক ও কোর্ট পরিদর্শক পদের পরীক্ষা পদ্ধতি একই। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের খুব কম সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা কার্যক্রম শেষে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরীক্ষার ধাপ

সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক ও কোর্ট পরিদর্শক পদের জন্য পাঁচ ধাপে প্রার্থী বাছাই করা হয়। ধাপগুলো হলো বাছাই পরীক্ষা (প্রিলিমিনারি), লিখিত পরীক্ষা, কম্পিউটার লিখিত, কম্পিউটার ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা। মোট ৪৫০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রিলিতে ১০০ নম্বর, লিখিত পরীক্ষায় ২০০, কম্পিউটার লিখিত ৫০, কম্পিউটার ব্যবহারিক ৫০ ও মৌখিক পরীক্ষায় ৫০ নম্বর। এই পাঁচ ধাপে উত্তীর্ণ হলে পুলিশ ও গোয়েন্দা ভেরিফিকেশনের পর দেওয়া হয় চূড়ান্ত নিয়োগ। প্রতিটি ধাপ পাস করার পর পুলিশ ও গোয়েন্দা ভেরিফিকেশন শেষে দুদকের ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত ১০০ থেকে ৮০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। ১০০টি প্রশ্ন থাকলে প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ আর ৮০টি প্রশ্ন থাকলে ১.২৫ নম্বর। সময় ৬০ মিনিট। সর্বশেষ সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক পদের পরীক্ষায় ১০০টি এমসিকিউ ছিল। নেগেটিভ মার্কিং থাকতে পারে, আবার না–ও পারে। তাই প্রশ্ন পাওয়ার পর প্রথম কাজ নির্দেশনা দেখা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যেদিন হয়, ওই দিন রাতেই বা পরের দিন ফলাফল প্রকাশিত হয়।

বাংলা

এই অংশ থেকে ২০টি এমসিকিউ থাকে। বিসিএস, ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের মতো এখানেও একই ধরনের প্রশ্ন থাকে। বাংলার প্রস্তুতি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ব্যাকরণ ও সাহিত্য। আগের বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলা ব্যাকরণ অংশে ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন, শব্দ, শব্দভান্ডার, ধাতু, প্রকৃতি-প্রত্যয়, সমাস, বাক্য, বাচ্য, সন্ধি, বানান, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, উপসর্গ, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান, বাগ্​ধারা ও এক কথায় প্রকাশ—এসব বিষয়ে বেশি প্রশ্ন আসে।

সাহিত্য অংশের জন্য ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যকর্ম, গুরুত্বপূর্ণ লেখকের উক্তি/ কবিতার লাইন, কবি-সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম/ উপাধি, গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের সম্পাদক, বাংলা একাডেমি, সংস্কৃত কলেজ, শ্রীরামপুর মিশন, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, শিখা পত্রিকা, মুসলিম সাহিত্য সমাজ, পিএসসির পুরোনো সিলেবাসের ১১ জন সাহিত্যিক, আধুনিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিক এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা কবি–সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম পড়তে পারেন। বাংলা অংশের প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বই হিসেবে নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বোর্ড বই এবং বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির বই পড়তে পারেন।

ইংরেজি

ইংরেজির প্রস্তুতি অনেকটা ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার মতো। এখানেও ২০টি এমসিকিউ থাকে। বিসিএসের সাহিত্য অংশ থেকে খুব বেশি প্রশ্ন আসতে দেখা যায়নি। বিগত পরীক্ষাগুলোয় গ্রামার ও ভোকাবুলারিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

গ্রামার, পার্টস অব স্পিচ, ভয়েস, ন্যারেশন, ডিগ্রি, প্রিপজিশন, সাবজেক্ট অ্যান্ড ভার্ভ এগ্রিমেন্ট, ফ্রেজ অ্যান্ড ইডিয়মস, ক্লোজ ও ট্রান্সফরমেশন বিষয়ে বেশি প্রশ্ন দেখা গেছে। ইংরেজি সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, বানান ও বাক্যের অর্থ—এসব বিষয় বেশি করে পড়তে হবে। ইংরেজি অংশে ভালো করতে ইংরেজির শব্দভান্ডার বাড়াতে হবে এবং বেসিক গ্রামারে দক্ষ হতে হবে। পাশাপাশি বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়মিত সমাধান করলে প্রস্তুতি ভালো হবে।

গণিত

গণিত অংশের জন্য বাস্তব সংখ্যা, বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, বহুপদী উৎপাদক, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, নৌকা ও স্রোত, ট্রেন–বেগ-দূরত্ব, ঐকিক নিয়ম, সূচক ও লগারিদম, ধারা, লসাগু ও গসাগু, অনুপাত ও সমানুপাত, বিন্যাস ও সমাবেশ, সেট ও সম্ভাব্যতার ওপর জোর দিতে হবে। জ্যামিতি ও পরিমিতি অংশের জন্য রেখা ও কোন, ত্রিভুজসংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, চতুর্ভুজসংক্রান্ত উপপাদ্য, বৃত্তসংক্রান্ত উপপাদ্য, বিভিন্ন ধরনের ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র, রম্বস, সামান্তরিক, বর্গ, আয়ত, আয়তাকার, ঘনবস্তু, সিলিন্ডার ও বহুভুজ ভালোভাবে পড়তে হবে।

সাধারণ জ্ঞান

বিসিএসের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বিষয়গুলো থেকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন আসে। তবে এখানে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকেও প্রশ্ন আসে অনেক। বাংলাদেশ অংশের জন্য ১৯৪৭-৭১ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪–এর নির্বাচন, আওয়ামী লীগ গঠন, ১৯৬২–এর শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণ–অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, প্রাচীন বাংলার জনপদ, সংবিধান, এসডিজি, ভিশন-২০৪১, ডেলটা প্ল্যান, আদমশুমারি, উন্নয়ন পরিকল্পনা, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পুরস্কার, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা, খেলাধুলা, বাংলাদেশের কৃষি ও বিভিন্ন স্থানের আদিনাম/ বৈশিষ্ট্যমূলক নাম জানা জরুরি।

আন্তর্জাতিক অংশের জন্য বৈশ্বিক ঘটনাবলি, বিভিন্ন সংগঠন, জাতিসংঘ, ভূরাজনীতি, বিভিন্ন দেশের/ রাজধানীর আদিনাম/ বৈশিষ্ট্যমূলক নাম পড়তে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা, যুদ্ধ-সংঘাত, খেলাধুলা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বাংলাদেশ সফর, নোবেল প্রাইজ, গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রপতি/ প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর, চলমান মেগা প্রকল্প ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাজেট, সমীক্ষা এবং বিভিন্ন সূচক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। বিসিএস প্রিলির বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির যেকোনো একটি ভালো বই ও সাম্প্রতিক অংশের জন্য দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে।

বিজ্ঞান ও কম্পিউটার

বিজ্ঞান অংশের জন্য বিসিএস প্রিলির আগের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। পদার্থের অবস্থা, পদার্থের গঠন, মানবদেহ, অ্যাসিড, ক্ষার, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, চিকিৎসা বিজ্ঞান, শব্দ, আলো, ধাতু ও অধাতু এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া বিষয়গুলো থেকে বেশি প্রশ্ন দেখা গেছে। কম্পিউটারের বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার পেরিফেরালস, কম্পিউটারে ইতিহাস, প্রকারভেদ, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, এএলইউ, ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস, প্রিন্টার, স্ক্যানার, অপারেটিং সিস্টেম, নম্বর ব্যবস্থা, লজিক গেট, বুলিয়ান অ্যালজেবরা, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও টপোলজি, ই-কমার্স, দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তির বড় বড় প্রতিষ্ঠান, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এবং সাইবার অপরাধ ইত্যাদি।

মূলত প্রতিটি বিষয়ে আপনার নিজের শক্ত অবস্থান/ দুর্বলতা বের করে সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী রুটিনমাফিক পড়তে হবে। সফল হতে এর বিকল্প নেই। প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার আগে দেখা যায় শুধু ওই নিয়োগকেন্দ্রিক বই বের হয়। যেমন শুধু দুদকের জন্য কোনো বই। অযথা এসব বই কিনে অর্থ ও সময় নষ্ট করবেন না। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির ওপর জোর দিন, শর্টকাটে সফল হওয়ার সুযোগ নেই।