ব্যাংক খাতে যাঁরা ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁদের কাছে সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদ আকর্ষণীয়। কারণ, এ পদে সুযোগ–সুবিধা বেশি। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯২২ জন সাধারণ সিনিয়র অফিসার নেওয়া হবে। গতবারের চেয়ে এবার পদসংখ্যা বেশি। ইতিমধ্যে আবেদনের সময় শেষ হয়েছে। এখন সময় প্রস্তুতির।
৯২২টি পদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ৩৯৩ জন, জনতা ব্যাংকে ৯৪, অগ্রণী ব্যাংকে ১৫০, রূপালী ব্যাংকে ২৫, বাংলাদেশে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ২৬, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ১৮৫, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে ১৭, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে ১১, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ১৫ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে ৬ জন নেওয়া হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি
অনেকের ধারণা একটি বা দুটি বিষয়ে ভালো হলেই প্রিলিমিনারিতে পাস করা যায়। কিন্তু এখন আর সেই কৌশলে কাজ হচ্ছে না। ভালো প্রস্তুতি নিতে বেশ বড় একটা সময় বিনিয়োগ করতে হয়, তাই শুরুটা হতে হবে এখন থেকেই। সিনিয়র অফিসার পদে প্রিলিমিনারিতে প্রশ্ন হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে।
কেমন প্রশ্ন আসে, কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ও কোথায় কত নম্বর এসব জানার সহজ উপায় আগের বছরের প্রশ্ন সমাধান করা। এ জন্য যেকোনো একটি ব্যাংক জব সল্যুশন কিনতে পারেন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সিনিয়র অফিসার পরীক্ষার প্রশ্ন, অফিসার পরীক্ষার প্রশ্ন, টেকনিক্যাল পদগুলোর প্রশ্নের (জেনারেলের সঙ্গে যতটুকু মিলে) ব্যাখ্যাসহ সমাধানগুলো অনুশীলন করলে প্রস্তুতি ভালো হবে।
বাংলা
যদি বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তাহলে বাংলার সিলেবাস সেটার সঙ্গে মিলিয়ে অল্প সময়ে শেষ হয়ে যাবে। সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাক্য সংকোচন, প্রয়োগজনিত ভুল ও বানান শুদ্ধিকরণ, বাগধারা, প্রবাদ প্রবচন, বাংলার শব্দভান্ডার, ব্যাকরণ অংশ, আধুনিক যুগের কয়েকজন সাহিত্যিকের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালো করে পড়তে থাকুন। এগুলো পড়তে ৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি চাকরির সহায়ক যেকোনো একটি বাংলা বই রাখতে পারেন।
গণিত
ব্যাংকের পরীক্ষায় ভালো করতে গণিতে আগে ভালো করতে হবে। আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় গণিত থেকে ৩০ শতাংশ প্রশ্ন থাকত, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি পরীক্ষায় গণিতের নম্বর কিছুটা কম থাকলেও তাতে গণিতের গুরুত্ব কমেনি।
আপনি গাণিতিক সমাধানে ভালো হলে এখানে শতভাগ নম্বর পেতে পারেন, যা অন্য কোনো বিষয়ে প্রায় অসম্ভব। গণিত প্রতিদিন অনুশীলন করে নিজের আয়ত্তে নিন। দ্রুততম সময়ে নির্ভুল সমাধান করতে পারলে অন্যদের চেয়ে সময় ও নম্বর দুই দিক দিয়েই এগিয়ে যাবেন। অনুপাত, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, সময়-কাজ-দূরত্ব, সেট, গড়, সম্ভাব্যতা ও বিন্যাস ইত্যাদি বিষয়ে বেশি জোর দিতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নের পাশাপাশি ৭ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বইয়ের সমাধান করা দরকার।
সাধারণ জ্ঞান
সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। বিশেষ করে ক্রীড়াজগৎ, বিখ্যাত পুরস্কার, বৈশ্বিক চুক্তি ও সম্মেলন, জাতিসংঘ, আলোচিত রাষ্ট্রপ্রধান, অর্থ ও বাণিজ্য, জলবায়ু, অস্ত্র, জ্বালানি, আলোচিত শহর, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, জিডিপি, সংবিধান, ব্যাংকিংসংক্রান্ত আলোচিত সংবাদ ও ব্যাংক সম্পর্কিত আলোচিত বিভিন্ন বিষয় ভালোভাবে পড়তে হবে। এতে আপনার প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার ফোকাস/আর্গুমেন্ট রাইটিংয়েরও ভালো প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
ইংরেজি
ব্যাংকের পরীক্ষায় ইংরেজি মানেই ব্যাকরণ আর শব্দভান্ডারের খেলা। ইংরেজি সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, অ্যানালজি, ন্যারেশন,অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রিপজিশন, আর্টিকেল, বাক্য সংশোধন, গ্রুপ ভার্ব ও ইংরেজি বাগধারা ইত্যাদি বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে। ইংরেজিতে ভালো করতে হলে নিয়মিত চর্চার কোনো বিকল্প নেই। অনেকে ইংরেজি ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে দেয়। এটা ঠিক নয়। নিয়মিত অনুশীলন করলে ইংরেজিতে অনেক বেশি নম্বর তোলা সম্ভব।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটার অংশে বরাদ্দকৃত নম্বর সবচেয়ে কম হলেও এতে গুরুত্ব দিতে হবে। কম্পিউটারে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব, যা অন্য কোনো বিষয়ে আপনার ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে। বিগত বছরের সব প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া কম্পিউটার মেমরি, ফাংশন কী, এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, মেমরি, সফটওয়্যার, সাইবার সিকিউরিটি, অপারেটিং সিস্টেম, কি–বোর্ড সর্টকাট, ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স, নেটওয়ার্ক টপোলজি, ল্যান, ম্যান, ডেটাবেজ, বাইনারি-ডেসিমাল কনভার্সন সিস্টেম, অ্যান্টিভাইরাস ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার টুকিটাকি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সময় ব্যবস্থাপনা
ব্যাংক নিয়োগের প্রায় সব প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এখন ১ ঘণ্টায় ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫
নম্বর কাটা হয়। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে ৩৬ সেকেন্ড করে সময় পেলেও গণিত ছাড়া বাকিগুলোতে গড়ে ২৭ সেকেন্ডের বেশি কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না। নিয়মিত সময় ধরে প্রশ্ন সমাধান ও বৃত্ত ভরাটের অনুশীলন করলে ভুলের পরিমাণ কমে যাবে।
আত্মঘাতী কাট মার্কস
পরীক্ষার্থীদের কাছে আলোচিত বিষয় কাট মার্কস। মনে রাখতে হবে যে প্রশ্ন যখন কঠিন হয়, সবার জন্যই কঠিন হয়, আবার যখন সহজ হয়, সবার জন্য সহজ হয়। অতএব প্রশ্ন যেমনই হোক নিজের সেরাটা দিয়ে আসুন। যে প্রশ্নের উত্তর পারেন, সে প্রশ্ন যেন ভুল না হয়। কাট মার্কস কত হতে পারে, তা নিয়ে পরীক্ষার হলে কোনো চিন্তা করবেন না। সর্বোচ্চসংখ্যক প্রশ্নের সঠিক উত্তর করাই আপনার একমাত্র লক্ষ্য
হতে হবে।
মো. নিয়ামত আলী খান
সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক