কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের প্রস্তুতির জন্য করণীয়

৪৩তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একযোগে শুরু হবে কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষা। সাধারণ ক্যাডারের পরীক্ষার পর নিজ নিজ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য সময় খুবই কম। কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় সফল হওয়া যাবে, অভিজ্ঞতা থেকে সেসব পরামর্শ দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসে (ফিশারিজ ক্যাডার, মেধাক্রম ৮ম) সুপারিশপ্রাপ্ত মিঠু মোকাররম

কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে স্নাতকের বিষয়গুলো আবার পড়ার বিকল্প নেই। মডেল: রবিউল হাসান ও নাহিদা আহমেদ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখের বেশি প্রার্থী। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ জন। আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষায় ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৮ জন অনুপস্থিত ছিলেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার হবেন ১ হাজার ৮১৪ জন। এর মধ্যে সাধারণ ক্যাডার ৫৫০টি, শিক্ষা ক্যাডার (সাধারণ সরকারি কলেজ) ৮৪৩টি, শিক্ষা ক্যাডার (শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ) ১২টি, কারিগরি শিক্ষা ক্যাডার ৯৯টি এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ক্যাডার (কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) ৩১০টি।

সাধারণ ক্যাডারের ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন যাঁরা সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত উভয় ক্যাডার চয়েস দিয়েছেন অথবা শুধু কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার চয়েস দিয়েছেন, তাঁদের ২০০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা হবে। সাধারণ ক্যাডারের পরীক্ষার পর নিজ বিষয়ের ওপর প্রস্তুতির জন্য মোটামুটি এক মাসের কিছু বেশি সময় পাচ্ছেন। সময়টুকু কাজে লাগালেই পূরণ হতে পারে ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন।

কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শুধু বিষয়ভিত্তিক ২০০ নম্বর গণ্য হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও সাধারণ বিজ্ঞানের ২০০ নম্বর বাদে বাকি ৭০০ ও বিষয়ভিত্তিক ২০০ নম্বর বিবেচিত হবে। তাই এই ২০০ নম্বরে যাঁরা এগিয়ে থাকবেন, কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারপ্রাপ্তিতে তাঁরা এগিয়ে থাকবেন বলে ধরা যায়। সাধারণ ক্যাডারের পরীক্ষায় অনেকের কাছাকাছি নম্বর থাকে। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক একটি পরীক্ষাতেই নম্বরের পার্থক্য অনেক থাকে। কারণ, অনেক আগে যাঁরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন, তাঁরা চাকরির পড়াশোনা করতে গিয়ে একাডেমিক পড়াশোনা ভুলে যান বা অনেকের অনীহা চলে আসে। তাই যাঁরা সদ্য পাস করে লিখিত পরীক্ষায় বসছেন, তাঁরা তুলনামূলক এগিয়ে থাকবেন।

স্নাতক পর্যায়ে পড়া টপিকগুলো আবার পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা বই বা শিট সরবরাহ করে থাকেন। আবার অনেকের হ্যান্ডনোট করে পড়ার অভ্যাস থাকে। এখন সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে পড়াই উত্তম। পুরোনো সেই বই, শিট বা হ্যান্ডনোটগুলো গুছিয়ে নেওয়া মানে অর্ধেক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলা। অনেকে কয়েক বছর আগে পাস করেছেন, তাঁরা হয়তো সেগুলো কোথাও বস্তাবন্দী করে রেখেছেন বা হারিয়ে ফেলেছেন, সে ক্ষেত্রে বস্তা থেকে বেছে বেছে বের করুন বা বিভাগের জুনিয়রদের কাছ থেকে সংগ্রহ করুন। তারপর আপনার দাগানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই পড়তে থাকু

কেউ যদি কোনোভাবে আগের নোটগুলো সংগ্রহ করতে না পারেন, তাহলে প্রতিটি বিষয়ের জন্য বাজারে কিছু বই বা শিট পাওয়া যায়, সেগুলো সংগ্রহ করুন। আপনার বিষয়ে আগে যাঁরা ক্যাডার হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেও উপকৃত হতে পারেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি আপনার বিভাগে যে মাধ্যমে (ইংরেজি অথবা বাংলা) পড়েছেন, সেই মাধ্যমেই পরীক্ষা দিন, তাতে নম্বর ভালো আসবে এবং আপনি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। সাধারণত বেশি গভীর থেকে প্রশ্ন হয় না, কোনো একটা বিষয়ের সাধারণ বা বেসিক যেগুলো টপিক বা যেগুলোর মানবকল্যাণে ব্যবহার আছে, সেসব বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। তাই বেশি গভীর থেকে পড়ে সময় নষ্ট না করাই ভালো। প্রশ্ন কঠিন হলেও পরীক্ষার হলে সব প্রশ্নের উত্তর করে আসাই শ্রেয়। সবার জন্য শুভকামনা।