৪৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের পর্যালোচনা

৪৩তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা গত রোববার শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্যমতে, এবার লিখিত পরীক্ষায় ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৮ জন অনুপস্থিত ছিলেন। প্রতিবছর লিখিত পরীক্ষা শেষে প্রশ্নগুলো নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রশ্ন সহজ না কঠিন হলো, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে অনেক আলোচনা। ৪৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়ের সব প্রশ্ন নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন ৪০তম বিসিএসে (প্রশাসন ক্যাডার, মেধাক্রম চতুর্থ) সুপারিশপ্রাপ্ত তারেক রহমান

ছবি: প্রথম আলো

ইংরেজি

৪১তম এবং ৪৩তম বিসিএসের প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইংরেজি প্যাসেজ সাম্প্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে এসেছে। ৪১তম বিসিএসে ইংরেজি প্যাসেজ ছিল জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত এবং ৪৩তম বিসিএসে কোভিড-১৯–সম্পর্কিত। কমন টপিক থেকে প্যাসেজ আসায় যাদের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ এবং বেসিক ইংলিশ ভালো, তাঁরা ইংরেজি প্রথম অংশে আশা করি ভালো নম্বর পাবেন। যাঁদের ইংরেজিতে একটু দুর্বলতা রয়েছে, তাঁরাও প্যাসেজটি সহজ এবং কমন হওয়ার কারণে এই অংশে অ্যাভারেজ মার্কস পাবেন।

গত বিসিএসগুলোর ইংরেজি রচনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রচনা সাধারণত সৃজনশীল বিষয় থেকে আসে। ৪৩তম বিসিএসে ‘মুজিব বর্ষ’ রচনা হিসেবে আসায় অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় রচনা ভালো লিখেছেন বলে আশা করা যায়। অনুবাদ ‘পদ্মা সেতু’ এবং ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’–সম্পর্কিত হওয়ায় মোটামুটি কমন টপিক ছিল। এখানে আশা করি সবাই ভালো লিখেছেন।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসের ভূগোল, অর্থনীতি, জনসংখ্যা, কৃষি, পরিবেশ, সরকার ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচন, সংবিধান, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন এসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আশায় খুবই মানসম্মত প্রশ্ন হয়েছে। প্রশ্ন সিলেবাসভিত্তিক হওয়ায় আশা করি সবাই ভালো লিখেছেন এবং ভালো নম্বর পাবেন। ধারণা করা যায়, সামনেরও বিসিএসগুলোতেও লিখিত পরীক্ষায় এমন সিলেবাসভিত্তিক প্রশ্ন হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে কনসেপচুয়াল এবং ইম্পেরিক্যাল অংশে সিলেবাস অনুসরণ করা হলেও প্রবলেম সলভিং অংশটি আগের বিসিএসগুলোর মতো গতানুগতিক হয়নি। পিএসসি যেহেতু প্রবলেম সলভিং অংশে গতানুগতিক কোনো সমস্যার সমাধান বা নীতিপত্র দেয়নি, তবু এটাই সঠিক। এটা নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য বা সমালোচনা করার অবকাশ নেই।

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা

যাঁরা নিয়মিত গণিত অনুশীলন করেন, তাঁদের পক্ষে এই প্রশ্নে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। ২ বা ৩টা প্রশ্ন ছাড়া অধিকাংশ প্রশ্নই নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ এবং উচ্চতর গণিত বই থেকে এসেছে। অনুশীলনের অভাবে অনেকেরই গণিত অংশ আশানুরূপ হয়নি। এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। কারণ, মানসিক দক্ষতা অংশের প্রশ্ন সহজ হওয়ায় এই গ্যাপটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। ৪১তম বিসিএস থেকে ৪৩তম বিসিএসের গণিত প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন হয়েছে।

সাধারণ বিজ্ঞান

আগের বিসিএসের সাধারণ বিজ্ঞান প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রশ্নগুলো সিলেবাসকেন্দ্রিক হয় এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কম্পিউটার অংশে খুবই কমন এবং সিলেবাসকেন্দ্রিক প্রশ্ন হয়েছে। কিছু প্রশ্ন রিপিট হয়েছে। নন-সায়েন্স শিক্ষার্থীদের জন্য ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস অংশের ভীতি থাকলেও এবারের প্রশ্ন সহজ হয়েছে। এখানে সবাই ভালো উত্তর করেছেন বলে আশা করি।

বাংলা

বাংলা ব্যাকরণ অংশ, সম্প্রসারণ, সারমর্ম বা সারাংশ কমন এবং গতানুগতিক হয়েছে। সাহিত্যের ১০টির মধ্যে ৬টি প্রশ্ন কমন এবং বাকি ৪টি প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন হয়েছে। এই চারটি প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় তেমন ভালোভাবে কেউই উত্তর করতে পারেননি। অনুবাদ সহজ হয়েছে। রোমান মিথলোজি থেকে অনুবাদ আসায় যাঁরা ভাবানুবাদ করেছেন, তাঁরা ভালো নম্বর পাবেন।

কাল্পনিক সংলাপ এবং চিঠি খুবই সাম্প্রতিক ইস্যুভিত্তিক হয়েছে। যাঁরা নিয়মিত পত্রিকা পড়েছেন, তাঁরা এই অংশে ভালো করেছেন বলে আশা করি। বিসিএসের প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলার রচনা সৃজনশীল আসে। এখানে ‘আমার ছেলেবেলা’ কমন বিষয় হওয়ায় যাঁরা লিখেছেন, তাঁরা সৃজনশীলতার সাক্ষর রাখতে পেরেছেন বলে আশা করি।

যাঁদের ৪৩তম লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বয়স শেষ, তাঁরা যদি মনে করেন পরীক্ষা ভালো হয়েছে, তাহলে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন। আর যাঁরা সামনে ৪৪তম লিখিত পরীক্ষা দেবেন, তাঁরা এই লিখিত পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও ভালো করতে পারবেন। সবার জন্য শুভকামনা।