কানাডা ইমিগ্রেশনের তথ্য নিয়ে প্রতারণা হচ্ছে, সতর্কতার পরামর্শ

কানাডা ইমিগ্রেশনের মনগড়া তথ্য দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে—এ জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা
ছবি: সংগৃহীত

মনগড়া, ভুয়া তথ্য দিয়ে কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে একটি চক্র। ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা, চাকরি পাইয়ে দেওয়া বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এরা সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে বলে জানিয়েছেন এ খাতে কাজ করা তিনজন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা জনসাধারণকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে ইমিগ্রেশন বিষয়ে সঠিত তথ্য তুলে ধরার তাগিদ দিয়ে বলেন, ইমিগ্রেশনের সুযোগ–সুবিধাসংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’–এর প্রধান সম্পাদক ‘শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালানায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ তাঁরা এই মত দেন। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ‘কানাডা ইমিগ্রেশনের মিথগুলো’ শিরোনামে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

ভুল তথ্য কিংবা বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে প্রতারণার নানা চিত্র তুলে ধরে আলোচনা করেন এডুকেশন কনসাল্টিং এজেন্ট কায়েসুর রহমান, ইউটিউব ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সিদ্দিকুর রহমান এবং ইমিগ্রেশন নিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক ও প্রকাশক উজ্জ্বল দাশ। আলোচনায় বক্তারা কানাডায় ইমিগ্রেশনের যেকোনো তথ্যের জন্য কানাডা সরকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের  (https://www.canada.ca/en/services/immigration-citizenship.html) ওপর  নির্ভর করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তাঁরা কানাডা সরকারের অনুমোদিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইমিগ্রেশনবিষয়ক কোনো সেবা না নেওয়ার পরামর্শ দেন।

কায়েসুর রহমান বলেন, সন্তানদের কানাডায় ভর্তি করা হলেই মা–বাবা কানাডায় চলে এসে কাজ শুরু করতে পারেন, এমনকি ইমিগ্রেশন পেয়ে যাবেন—এমন একটি কথা বাংলাদেশে প্রচার পেয়েছে। এটি সঠিক তথ্য নয়। বিদেশি শিক্ষার্থীরা কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে নির্দিষ্ট শর্তাবলি পূরণ করা সাপেক্ষে ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর মা–বাবা এসে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট পান না। তিনি বলেন, অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের মা–বাবা একজনকে ভিসা দেওয়া হয় সন্তানের সঙ্গে থাকার জন্য এবং তিনি এখানে ভিজিটর হিসেবেই অবস্থান করেন।

কানাডায় আবেদন করতে ডকুমেন্টগুলো যথাযথ হতে হবে
ছবি সংগৃহীত

কানাডায় শিক্ষার্থী হিসেবে আসতে আগ্রহীদের আগেভাগে প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করার পরামর্শ দিয়ে কায়েসুর রহমান বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভর্তির বিভিন্ন নিয়মাবলি আছে, ভিসার জন্য আলাদা শর্তাবলি আছে। এগুলো সম্পর্কে যথাযথ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ না করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

সিদ্দিকুর রহমান ওয়ার্ক পারমিট এবং কানাডায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার নানা চিত্র তুলে ধরে বলেন, কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই বিদেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসতে পারে না। ‘কানাডায় পাওয়া যাচ্ছে না’ এটি প্রমাণ করতে পারার পরই সরকার বিদেশ থেকে লোক আনার অনুমতি দেয়। কাজেই যারা ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলে বা ওয়ার্ক পারমিট পাইয়ে দেয়—তারা আসলে ভুয়া কাগজ দিয়ে প্রতারণা করে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

কানাডায় ইমিগ্রেশনের অনেকগুলো খাত আছে বলে উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইমিগ্রেশনের শর্তাবলি এবং নিজের যোগ্যতা মিলিয়েই ইমিগ্রেশনের চেষ্টা করা উচিত।

কানাডার ইমিগ্রেশনের জন্য বিস্তারিত সবকিছু সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে
ছবি: সংগৃহীত

উজ্জ্বল দাশ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করতে যাওয়ার সঙ্গে অনেকে কানাডায় ইমিগ্রেশনকে মিলিয়ে ফেলেন। কোনো দালাল বা আইনজীবী, ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট কাউকে কানাডায় ভিসা বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দিতে পারে না—এটি অনেকেই বিবেচনায় রাখেন না। ফলে প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে কানাডা ইমিগ্রেশনের খবর বা তথ্য পরিবেশনে অনেক সময় মূল তথ্য পাশ কাটিয়ে বাড়তি তথ্য বা ভুল ব্যাখ্যা যোগ করে দেওয়া হয়। এতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং প্রতারকেরা এই সুযোগটি কাজে লাগায়। ইমিগ্রেশনসংক্রান্ত সংবাদ এবং বিজ্ঞাপন প্রচার বা প্রকাশের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন

শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডায় ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি ইমিগ্র্যান্ট ও শিক্ষার্থী কানাডায় আসুক। সে কারণেই প্রতারণা ও ভুল প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে।’

সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্য যাচাই–বাচাই করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ নয়। গণমাধ্যমের জন্য সেটি আরও সহজ। পত্রিকাগুলো এখন প্রবাস থেকে অনেক ফ্রিল্যান্সারদের লেখা প্রকাশ করে। সেই সব লেখার তথ্যের, বিশেষ করে ইমিগ্রেশনসংক্রান্ত লেখার তথ্যের যথার্থতা সম্পর্কে বাড়তি মনোযোগ না দিলে ইমিগ্রেশনকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রতারক চক্র সুবিধা নিতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন