বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতির বাকি কথা

৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করেছে পিএসসি। ২৯ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে এই পরীক্ষা নেওয়া শুরু হবে। এই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ধারাবাহিক পরামর্শ থাকছে এবারও।

গত পর্বে বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি নিয়ে যে আলোচনা করেছিলাম, তার বাকি অংশ আজকে নিচে আলোকপাত করা হলো।

ক. সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, খসড়া অবস্থা, উপস্থাপনের তারিখ, গৃহীত হওয়ার তারিখ, স্বাক্ষরকারীরা, অধ্যাদেশ জারি, কমিটি গঠনের প্রেক্ষাপট, কে স্বাক্ষর করল না, মহিলা ছিল কি না, অঙ্গসজ্জা কে করল, কে হাতে লিখল, কোন দেশের সংবিধান অনুসরণ করল ইত্যাদি সব জেনে নিতে হবে।

খ. সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে নিচের অনুচ্ছেদগুলো ভালো করে পড়তে হবে। যথা-২ (ক), ৩, ৪, ৪ (ক), ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭,১৮, ১৮ (ক) ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৩ (ক), ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৯, ৫২, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬০, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭৬, ৭৭, ৮১, ৮৭, ৯১, ৯৩, ৯৪, ১০২, ১০৬, ১০৮, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৭, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪১ (ক), ১৪১ (খ), ১৪১ (গ), ১৪২, ১৪৮,১৫৩।

গ. সংবিধানের আলোচিত বিষয়গুলো একটু সাজিয়ে নেবেন। যেমন ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ থাকা উচিত কি না, রাষ্ট্রধর্ম কীভাবে দেখেন, কিছু বিষয় সংশোধন অযোগ্য কেন ইত্যাদি।

ঘ. সংবিধানের সাতটি তফসিলের মধ্যে তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল ভালো করে পড়বেন।

ঙ. বাংলাদেশ সংবিধান এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। এটি পরিবর্তনযোগ্য। তাই খেয়াল রাখতে হবে। এই সংশোধনীর কিছু আবার বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ (বাতিল), চতুর্দশ, পঞ্চদশ, ষোড়শ সংশোধনী ভালো করে পড়বেন। সালটা আর মূল বিষয়বস্তু মনে রাখবেন। তবেই হবে।

চ. উচ্চ আদালত মাঝেমধ্যে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ বা সংশোধনী নিয়ে মন্তব্য বা রায় দেন, তা মনে রাখবেন। এগুলোই ভাইভায় বেশি জিজ্ঞাসা করা হয়।

ছ. নিজ বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিষয়গুলোই বেশি জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। তাই এ জন্য প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের বইগুলো একটু দেখবেন। সম্ভব হলে শিক্ষক নিবন্ধনের প্রযোজ্য গাইডটি সংগ্রহ করবেন।

জ. অর্জিত জ্ঞান ও বলার সাহসিকতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। তত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, অনেক কিছুই আপনার হাতে নেই।

ঝ. পররাষ্ট্র ক্যাডার যাঁদের পছন্দ, তাঁরা বাজারে প্রচলিত গাইডের পাশাপাশি মো. শামীম আহসানের ‘কূটনৈতিক শব্দকোষ’ বইটি পড়ে নেবেন।

ঞ. ভাইভা বোর্ড হলো বিনয়ের চারণভূমি। অর্থাৎ, সারা জীবন এর সব বিনয় এখানে এসে ঢেলে দেবেন। অহেতুক তর্ক করবেন না। কারণ, বোর্ডকে খ্যাপালে আপনি শেষ!

ট. এখন থেকেই নিয়মিত জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে।

ঠ. দৈনিক পত্রিকা থেকে যা অধিক মনোযোগ দিয়ে পড়বেন—সড়ক দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা, শিক্ষা প্রতিবেদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিকল্পনা, বিশ্ব ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, ঢাকার যানজট চিত্র, দুর্নীতি ও নগর চিত্র, পোশাক/ চামড়া/ পর্যটনশিল্প, বিনিয়োগ/ পরিবেশ/ আইসিটির তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ দিবসের প্রতিপাদ্য, মাদক পরিস্থিতি, নারীর ক্ষমতায়নসংক্রান্ত তথ্য, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সরকারের মেগা কোনো প্রকল্পের সংবাদ, রেমিট্যান্স ও বিদেশে কর্মী প্রেরণের চিত্র, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসংক্রান্ত আলোচনা, রপ্তানি ও চিকিৎসাসেবা চিত্র, জিডিপি, আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সম্মেলনের তারিখ, স্থান ও প্রতিপাদ্য যেমন ইউএনও, ডব্লিউটিও, হু, এআইআইবি, ব্রিকস, ইইউ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি, শিশু কিশোরদের প্রতি সহিংসতা, রাশিয়া/ ইরান/ ইউকে/ ইউএসএ/ ইসরায়েল/ চীন/ ভারত/ ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের সংবাদ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ইত্যাদি।

ড. যেদিন ভাইভা, সেদিনের পত্রিকা অবশ্যই পড়ে যাবেন। সম্ভব হলে তিনটা পড়বেন এবং ওই দিনের বাংলা, ইংরেজি ও আরবি তারিখ জেনে নেবেন।

ঢ. কিছু টপিকস ভালো করে দেখবেন। যেমন প্রশাসনসংক্রান্ত প্রশ্ন, অর্থনীতিসংক্রান্ত প্রশ্ন, মুক্তিযুদ্ধসম্পর্কিত কবিতা ও গান, বাংলা ও ইংরেজি বানান, স্থানীয় সরকার, কিছু আইনের প্রাথমিক তথ্য, রাজনৈতিক কিছু তথ্য ইত্যাদি।

ণ. বাংলাদেশ ও বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যাবেন। বিশেষ করে যার আয়তন যত ছোট, তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বুঝতেই পারছেন কেন! //////////এ ছাড়া প্রাণীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ।//////////

ত. প্রশাসন ও পুলিশ যাঁদের প্রথম পছন্দ, তাঁরা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮, পেনাল কোড ১৮৬০, মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯, পিআরবি ১৯৪৩ ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে যাবেন।

থ. ক্যাডার চয়েজের তালিকার ক্রম মনে রাখবেন। অনেক সময় কত নম্বরে কোন ক্যাডার চয়েজ দিয়েছেন, জিজ্ঞেস করা হয়।

দ. যেকোনো উত্তরের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। নেতিবাচকতা অনেকেরই পছন্দ নয়।

ধ. প্রশ্নের উত্তরে কখনো এমন টার্ম ব্যবহার করবেন না, যার সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। কারণ, বোর্ড আপনার উত্তর থেকেও প্রশ্ন বের করবে।

ন. অনেক সময় বোর্ড বাংলা ও ইংরেজি বানান বা বাক্য লিখতে দেয়। সঙ্গে কাগজ ও কলম দিয়ে থাকে। তা–ই ব্যবহার করুন।

প. ম্যাপে কিছু দেখাতে বললে ম্যাপ পয়েন্টার ব্যবহার করে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যাতে বোর্ডের চেয়ারম্যান আপনার পেছনে পড়ে না যান।

ফ. সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য বাজারে প্রচলিত যেকোনো একটি ম্যাগাজিন নিয়মিত পড়বেন।

ব. ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৯ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা নিয়ে যাবেন।

ভ. সাম্প্রতিক সময়ে শিশু ও নারীদের প্রতি যেসব আলোচিত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তার একটা ধারণা নিয়ে যাওয়া ভালো। একজন ক্যাডার কর্মকর্তা হলে এসব থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে আপনি মনে করেন, তা ঠিক করে নেবেন।

ম. ভাইভা শেষ হয়ে গেলে মনে করে আপনার কাগজগুলো ফেরত নিয়ে আসবেন। উঠে হাঁটা শুরু করবেন না।

এভাবে পড়াশোনা ও নিজেকে প্রস্তুত করুন। আশা করি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আর তাতেই ভাইভা ভালো হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, ক্যাডার পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো আপনার হাতে অনেক কিছু করার আছে, যেটা আপনার জীবনের মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই আন্তরিকভাবে প্রস্তুতি নিন। আগামী পর্বে একটা মডেল ভাইভা উপস্থাপন করা হবে।

লেখক: প্রশাসন ক্যাডার (দ্বিতীয় স্থান), ৩৪তম বিসিএস।