যেমন হওয়া চাই লিখিত বাংলার পড়াশোনা ও কৌশল

৪১তম বিসিএসের ধারাবাহিক প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে
ছবি: চাকরি-বাকরি

১ আগস্ট ২০২১ খ্রি. তারিখে প্রকাশিত ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে ২১ হাজার ৫৬ জন প্রতিযোগী লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। ফলাফলের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে নভেম্বর/২০২১ এ লিখিত পরীক্ষা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা। কারণ, এতে সর্বোচ্চ নম্বর অর্থাৎ ৯০০ বা বোথ ক্যাডার হলে ১১০০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এটি খুবই সাধারণ কথা, নম্বর বেশি হলে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। তা ছাড়া লিখিত পরীক্ষায় সবার জন্য সমান মানের প্রশ্ন করা হয়, যাতে অসমতা হওয়ার সুযোগ থাকে না। প্রার্থীকে নিজের মতো চিন্তা ও লেখার স্বাধীনতা দেওয়া হয় এই লিখিত পরীক্ষায়। কেউ যদি কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে, তবে সে তার নিজের মতো করে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়, যেখানে প্রিলি ও ভাইভায় খুব অতিরিক্ত চিন্তা করার অবকাশ নেই। একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর না তুলতে পারলে ক্যাডার বা ভালো ক্যাডার কিংবা কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়া সম্ভব হবে না অথবা কঠিন হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কোনো সাধারণ পরীক্ষা নয়। তাই এতে নম্বর তুলতে হলে কৌশলপূর্ণ পরিশ্রম করতে হবে। অন্যের চেয়ে এগিয়ে থেকেই টিকে থাকতে হবে।

একটা বিষয় না বললেই নয়, সবাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং লিখেও আসে। কিন্তু নম্বর কম বা বেশি হয় এবং ফেল করে। এর কারণ কী? আমার কাছে মনে হয়, লিখিত পরীক্ষায় ফেল বা কম নম্বর পাওয়ার ১০টি কারণ আছে। যথা ক) তথ্য কম থাকা বা না থাকা; খ) ভুল তথ্য থাকা; গ) বানান ও বাক্য ভুল এবং যতিচিহ্নের সঠিক ব্যবহার না থাকা; ঘ) লেখায় অতিরিক্ত কাটাকাটি; ঙ) হাতের লেখা অতিরিক্ত বড় বা ছোট; চ) একই কথার পুনরাবৃত্তি; ছ) রেফারেন্স না থাকা বা কম থাকা অথবা ভুল থাকা; জ) নম্বরের সঙ্গে উত্তরের পরিধির সামঞ্জস্য না থাকা; ঝ) আপডেট তথ্য না থাকা; ঞ) অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা বেশি।

শাহ মো. সজীব প্রশাসন ক্যাডার (২য় স্থান) ৩৪তম বিসিএস

তাই শুধু পড়লেই হবে না, সতর্কভাবে তথ্য সংগ্রহ করার মানস থাকতে হবে। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, এই ১০টি লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ারও উপায়। শুধু উল্টো করে নিন।

মনে রাখবেন, লিখিত পরীক্ষাই আপনার স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। তাই সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিন এবং উপস্থাপন করুন।

মনে রাখবেন, লিখিত পরীক্ষা হলো তথ্য উপস্থাপন করার পরীক্ষা। সাদামাটা লিখে আপনি কখনোই ভালো নম্বর পাবেন না। প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় সব তথ্যই লেখায় থাকতে হবে। অন্যথায় সামান্য নম্বর আসবে। কঠিন কথা। কিন্তু মানতে হবে।

লিখিত পরীক্ষায় দুই ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। একটি হলো ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন, যাতে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায় না। যেমন রচনা। অন্যটি হলো সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন যেখানে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়। যেমন ব্যাকরণ, সাহিত্য অংশ। তাই পূর্ণ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরগুলো ভালো করে করতে হবে। এতে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যায়।

এভাবে বাংলার জন্য প্রস্তুতি নিন। আশা করি ভালো কিছু সম্ভব হবে। লিখিত পরীক্ষায় না পড়েও কিছু জিনিস ভালো লিখে আসা যায়। তাই এত চাপ নেওয়ার বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। স্বাভাবিকভাবে প্রস্তুতি নিন। আর সামনের দিনগুলো নিজেকে ও পড়ার কাজে দিন। সবার জন্য শুভকামনা

আজকে বাংলা নিয়ে আলোচনা করব। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে বিভক্ত হয়ে মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। সময় থাকে ৪ ঘণ্টা। প্রথম পত্রে ব্যাকরণ ৩০, ভাব-সম্প্রসারণে ২০, সারমর্মে ২০, সাহিত্যে ৩০ এবং দ্বিতীয় পত্রে ইংরেজি অনুবাদে ১৫, কাল্পনিক সংলাপে ১৫, পত্রলিখনে ১৫, গ্রন্থ সমালোচনায় ১৫ ও রচনায় ৪০। এই ২০০ নম্বরের প্রস্তুতির জন্য কী করা যায় বলা যাক।

অ) ১০ম থেকে ৪০তম বিসিএসের শুধু ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশ পড়ে নেবেন। বাকিগুলো আপাতত বাদ।

আ) নম্বর বিভাজনের দিকে ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, ৭০ নম্বর পড়ার তেমন কিছুই নেই (সারমর্ম, ভাব-সম্প্রসারণ, কাল্পনিক সংলাপ ও পত্র)। এগুলো না পড়লেও আপনি ভালো লিখতে পারবেন। কারণ, তা কমন পড়বে না। আর কমন পড়ারও কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে যেটা করবেন তা হলো, এগুলো লেখার সাধারণ নিয়মগুলো জেনে যাবেন। তাতেই হয়ে যাবে। সাত রকমের পত্র থাকলেও আবেদনপত্র, ব্যক্তিগতপত্র ও সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য পত্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর গঠন ও কাঠামো মনে রাখা জরুরি।

ই) অনুবাদে যে ১৫ নম্বর বরাদ্দ আছে, তা মূলত ইংরেজির পড়া। এটি আপনি ইংরেজি অনুবাদ অংশ থেকে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। আর কারও যদি ইংরেজির মৌলিক জ্ঞান ভালো থাকে, তবে সে এই অনুবাদ এমনিই পারবে। আর অনুবাদ কখনোই কমন পড়বে না। তবে বাসায় যেকোনো বই থেকে প্রতিদিন অনুবাদ চর্চা করতে পারেন।

ঈ) ব্যাকরণ অংশে কিছু টপিক নির্দিষ্ট আছে। যেমন শব্দগঠন, বানান ও বানানের নিয়ম, বাক্যশুদ্ধি ও প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, প্রবাদের নিহিতার্থ ব্যাখ্যা ও বাক্যগঠন। মনোযোগ দিয়ে পড়লে অল্প সময়ে এর জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়। ব্যাকরণে বর্ণনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন শব্দগঠনের উপায় কী কী? এ ক্ষেত্রে উত্তর হতে হবে খুবই সুনির্দিষ্ট। অপ্রয়োজনীয় বর্ণনার কোনো প্রয়োজন নেই।

উ) সাহিত্য অংশটির পরিধি বেশ বড়। তাই যেটা করবেন, বিপিএসসি নির্ধারিত ১১ জন লেখক সম্পর্কে প্রথমে ভালো করে পড়বেন। তারপর বাছাই করে অন্য লেখকদের সাহিত্যকর্ম দেখবেন। পিএসসি–নির্ধারিত ১১ জন কবি-সাহিত্যিক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মীর মশাররফ হোসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনবন্ধু মিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্​দীন, ফররুখ আহমদ, কায়কোবাদ এবং বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

ঊ) সাহিত্য অংশ পড়ার জন্য ড. সৌমিত্র শেখরের ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ বইটি অনুসরণ করতে পারেন। অনেকে হয়তো এটি প্রিলিতেও পড়েছেন।

ঋ) গ্রন্থ সমালোচনা একটি কঠিন বিষয়। কারণ, গ্রন্থ সম্পর্কে না জানলে বা বইটি না পড়ে থাকলে তা আপনি লিখতে পারবেন না। তাই এই অংশে সময় দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুপরিচিত গ্রন্থগুলোই পড়বেন। যদিও সুপরিচিত গ্রন্থের সংখ্যাও প্রচুর। তবে আশার কথা হলো, বিগত কয়েকটি বিসিএসে গ্রন্থের নাম সরাসরি উল্লেখ করেনি। থিম উল্লেখ করে প্রশ্ন করেছিল। গ্রন্থের নাম উল্লেখ করে দিলে বিপদে পড়বেন, যদি ভালো করে না পড়েন। তাই ভালো করে গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। তবে নিম্নোক্ত থিমের ওপর অন্তত একটি করে বই সম্পর্কে জেনে যাবেন—ক) ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক; খ) মুক্তিযুদ্ধের ওপর; গ) ভাষা আন্দোলনভিত্তিক; ঘ) আঞ্চলিক উপন্যাস; ঙ) মহাকাব্য, চ) বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বই; ছ) গ্রামীণ জীবন নিয়ে লেখা বই; জ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে রচিত বই; ঝ) রাজনৈতিক উপন্যাস; ঞ) রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্​দীন, জীবনানন্দ দাশের লেখা কিছু গ্রন্থ ইত্যাদি।

এ) মোহসীনা নাজিলার ‘শীকর গ্রন্থ সমালোচনা’ বইটি এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

ঐ) রচনার জন্য আপনাকে বাংলার চেয়ে বেশি জানতে হবে সাধারণ জ্ঞান। ধরুন, রচনা এল ‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও বিশ্ব’। এটি লিখতে হলে জলবায়ুর সব প্রয়োজনীয় তথ্যই লাগবে, যা মূলত সাধারণ জ্ঞান। তথ্য, পয়েন্ট, উক্তি ছাড়া রচনা লিখে খুব বেশি লাভ হবে না। ২০টি রচনা বাছাই করে পড়বেন। প্রয়োজন হলে ইংরেজি রচনার সাথে সমন্বয় করে পড়বেন।

ও) বাজার থেকে যেকোনো একটি লিখিত গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। সেখান থেকে বিগত প্রশ্ন, ব্যাকরণ, রচনা ও প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে নেবেন। বেশি বই কম পড়া নয়; কম বই বেশি পড়াই উত্তম।

ঔ) মাঝে মাঝে নিজে নিজে পরীক্ষা দিয়ে যাচাই করে দেখবেন, ঠিক সময়ে সব শেষ করতে পারছেন কি না। লিখিত পরীক্ষায় সব লিখে আসাও একটা বিরাট সাফল্য।