৪১তম বিসিএস নিয়ে গুজবে কান না দিতে আহ্বান পিএসসির

রাজধানীর একটি কেন্দ্রে বিসিএস পরীক্ষা চলছে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

৪১তম বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে কোন ধরনের গুজবে কান না দিতে পরীক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন পিএসসি। পিএসসি বলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামীকাল শুক্রবার যথা সময়ে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নূর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে যে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে না। এসব গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি  বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথা সময়ে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

আগামীকাল শুক্রবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এতে অংশ নেওয়ার কথা আছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থীর। পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, কোনো কেন্দ্রে যদি কোনো প্রার্থীর তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাহলে তাঁকে অন্য হলে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে।

পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন গতকাল বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। কেন্দ্রে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছি আমরা। সব মিলে আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি আছে।’

গত মঙ্গলবার পিএসসির ৪১তম বিসিএস কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় থাকা সংশ্লিষ্টদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষার হলে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষার হলের বাইরে পরীক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা বা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য নন-কন্ট্যাক্ট ইনফ্রারেট থার্মোমিটার থাকতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষার হলে এবং কন্ট্রোল রুমে জীবাণুনাশক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
ছবি: সংগৃহীত

পিএসসির ১১টি নির্দেশনায় বলা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব এলাকা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালনের বার্তাসংবলিত পোস্টার ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। অপেক্ষমাণ জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনে গোল চিহ্ন দিয়ে দাঁড়ানোর স্থান নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। আসন ব্যবস্থায় দুজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব থাকতে হবে। পরীক্ষার হলের বাইরে জনসমাবেশ পরিহার করতে হবে।

আরও পড়ুন

৪১তম বিসিএস: পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা

পিএসসির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষার হলে কোনো পরীক্ষার্থীর কাছে বর্ণিত নিষিদ্ধসামগ্রী পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্তসহ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪-এর বিধিভঙ্গের কারণে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর প্রার্থিতা বাতিলসহ ভবিষ্যতে কর্ম কমিশন কর্তৃক গৃহীতব্য সব নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

পরীক্ষার দিন (১৯ মার্চ) বই-পুস্তক, সব রকম ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডসদৃশ কোনো ডিভাইস, গয়না ও ব্যাগ না আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষার্থীকে পুনরায় বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।

৪১তম বিসিএসে কত পদ

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এতে বিভিন্ন পদে ২ হাজার ১৩৫ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। এই ক্যাডারে ৯১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে বিসিএস শিক্ষায় প্রভাষক ৯০৫ জন, কারিগরি শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক ১০ জন নেওয়া হবে। শিক্ষার পর বেশি নিয়োগ হবে প্রশাসন ক্যাডারে।প্রশাসনে ৩২৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। পুলিশে ১০০ জন, বিসিএস স্বাস্থ্যে সহকারী সার্জন ১১০ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন ৩০ জন নেওয়া হবে।

পররাষ্ট্রে ২৫ জন, আনসারে ২৩ জন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী মহাহিসাবরক্ষক (নিরীক্ষা ও হিসাব) ২৫ জন, সহকারী কর কমিশনার (কর) ৬০ জন, সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) ২৩ জন ও সহকারী নিবন্ধক হিসেবে ৮ জন নেওয়া হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১২ জন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ৪ জন, সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট ১ জন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ১ জন, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০ জন, সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হিসেবে ৩ জনকে নেওয়া হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক বা তথ্য কর্মকর্তা বা গবেষণা কর্মকর্তা ২২ জন, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) ১১ জন, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক ৫ জন, সহকারী বেতার প্রকৌশলী ৯ জন, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে সহকারী প্রকৌশলী ৩৬ জন, সহকারী বন সংরক্ষক ২০ জন।

সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল পদে ২ জন, বিসিএস মৎস্যে ১৫ জন, পশুসম্পদে ৭৬ জন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৩ জন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৬ জন, বিসিএস বাণিজ্যে সহকারী নিয়ন্ত্রক ৪ জন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৪ জন, বিসিএস খাদ্যে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৬ জন ও সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী ২ জন, বিসিএস গণপূর্তে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৩৬ জন ও সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) হিসেবে ১৫ জন কর্মকর্তাকে এই বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া হবে।