বিসিএস কর ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব ও কাজ, পদায়ন ও প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করা হচ্ছে চাকরি-বাকরি পাতায়। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বিসিএস (কর) ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএসের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

ছবি: প্রথম আলো

বিসিএস (কর) ক্যাডার

বিসিএস (কর) ক্যাডারের কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন। 

পরিচিতি, দায়িত্ব ও কাজ

কর বা ট্যাকসেশন সার্ভিসের মূল কাজগুলো হলো—করনীতি প্রণয়ন, অফিস ম্যানেজমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন রিসিভ করা, ট্যাক্স রিটার্নের সঠিকতা যাচাই করা, ট্যাক্স রিটার্ন অডিট করে কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটন করা ও যথাযথ কর নির্ধারণ করা, কর জরিপ করা, উৎসে কর কর্তন মনিটরিং করা, চলতি কর, বকেয়া কর ও অগ্রিম কর আদায় করা ইত্যাদি। আয়করের পাশাপাশি এই উইং ভ্রমণ কর ও দানকরও সংগ্রহ করে থাকে। বিসিএস কর ক্যাডারের মূল পদসোপান হলো—সহকারী কর কমিশনার, উপ-কর কমিশনার, যুগ্ম কর কমিশনার, অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর কমিশনার ও সদস্য।

আরও পড়ুন

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান (ইনকাম ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট প্রভৃতি উইংয়ের প্রধান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এনবিআর চেয়ারম্যান সাধারণত সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার হয়ে থাকেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে মোট ১৫ জন সদস্য আছেন। এর মধ্যে আটজন কর ক্যাডার থেকে এবং সাতজন শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার থেকে হয়ে থাকেন। ট্যাক্স ক্যাডারের আটজনের মধ্যে তিনজন গ্রেড–১ পদমর্যাদার সদস্য এবং পাঁচজন গ্রেড–২ পদমর্যাদার সদস্য।

আরও পড়ুন

কর বিভাগের সারা বাংলাদেশে ৩১টি টেরিটরিয়াল জোন আছে (ঢাকায় ১৬টি ও বাইরে ১৫টি)। প্রতিটি জোনে একজন করে কমিশনার, দুজন অতিরিক্ত কমিশনার, দুজন করে যুগ্ম কমিশনার, আটজন উপকমিশনার, নয়জন সহকারী কমিশনার এবং পাঁচ-ছয়জন অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ট্যাক্সের ১০-১২টি আপিলিয়েট জোন আছে যেখানে কমিশনার অফিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার, উপকমিশনার এবং সহকারী কমিশনাররা কমিশনারের অধীন কাজ করে থাকেন। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিইসি), কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল, কর পরিবীক্ষণ পরিদপ্তর, বিসিএস ট্যাক্স একাডেমি ইত্যাদির প্রধান হিসেবে ট্যাক্স কমিশনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া ট্যাক্স এপিলিয়েট ট্রাইব্যুনালে ডেপুটেশন পোস্টিংয়ের সুযোগ আছে। প্রতিটি জোন বা কমিশনারেটের অধীন চারটি রেঞ্জ এবং চারটি রেঞ্জের অধীন ২২টি সার্কেল থাকে (রেঞ্জ–১ ও ২ এ ৬টি করে এবং রেঞ্জ–৩ ও ৪ এ ৫টি করে সার্কেল)। অতিরিক্ত কমিশনার এবং যুগ্ম কমিশনার রেঞ্জপ্রধান এবং উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার ও অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার সার্কেলপ্রধান (কোম্পানি, বিজনেস ও স্যালারি সার্কেল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। 

আরও পড়ুন

প্রশিক্ষণ

যোগদানের পর কর ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ছয় মাস মেয়াদি বনিয়াদি প্রশিক্ষণ (ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স—এফটিসি) সম্পন্ন করে। এরপর প্রফেশনাল দক্ষতা অর্জনের জন্য ঢাকার বিসিএস কর একাডেমিতে ছয় মাস মেয়াদি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ নিতে হয়। বিভাগীয় প্রশিক্ষণে ফলাফলের ভিত্তিতে ভারতের নাগপুরে ন্যাশনাল একাডেমি অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (এনএডিটি)-তে ১-২ সপ্তাহব্যাপী ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। 

বেতন ও ভাতা

সরকারি বেতন স্কেল–২০১৫ অনুসারে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২ হাজার টাকা মূল বেতনে চাকরি জীবন শুরু করেনা। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩ হাজার ১০০ টাকা। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্যান্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ), ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। 

সুযোগ-সুবিধা

এই ক্যাডারের পদোন্নতি অনেকটাই ভালো। সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো সরকারি কোয়ার্টারে আবাসন সুবিধা রয়েছে। ৯ম এবং ৬ষ্ঠ গ্রেডে শেয়ারড ট্রান্সপোর্ট এবং গ্রেড–৫ থেকে ওপরের পর্যায়ে গাড়ি সুবিধা রয়েছে। কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর ফাঁকি প্রতিরোধ করতে পারলে প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত পুরস্কারও পেয়ে থাকেন। সব সরকারি চাকরিজীবীসহ যাঁদের ট্যাক্স প্রদান করতে হয়, তাঁদের বিভিন্ন তথ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে আলাদা গুরুত্ব তো পাবেনই। এই ক্যাডারে নিজের জেলায় প্রথম পদায়নের সুযোগ নেই। তবে আশপাশের জেলায় পদায়ন পেতে পারেন। অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে সারা বছর কাজ করতে হয়। অন্য সময় মোটামুটি হলেও নভেম্বর মাসে কাজের চাপ বেশি।