৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা
ফল বিলম্বে দায়ী ৩১৮ পরীক্ষক
পিএসসির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, কোনো কোনো পরীক্ষক কিছু প্রশ্নের উত্তরের জন্য নম্বরই দেননি। নম্বর যোগ করতেও ভুল করেছেন কেউ কেউ।
৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর।
এই বিসিএসে বিভিন্ন পদে ২ হাজার ১৩৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা।
৯ মাস আগে শেষ হয়েছে ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। তবে এখনো ফলাফল পাননি চাকরিপ্রার্থীরা। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, তিন শতাধিক পরীক্ষকের অবহেলার জন্য ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে।
পিএসসির একাধিক সূত্র জানায়, ফল প্রকাশে দেরির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ৩১৮ জন পরীক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গুরুতর অবহেলাকারী পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। এত দিনেও ফল প্রকাশ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী চাকরিপ্রার্থীরা।
পিএসসি সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশের লক্ষ্যে পিএসসির বিশেষ সভায় আলোচনা হয়েছে। এমন তিনটি সভায় ফল প্রকাশে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ দেরি হবে বলে জানায়। পরে দেরির কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করে পিএসসি। কমিটি তদন্ত শেষ করে ফল দেরির বেশ কিছু কারণ তুলে ধরে।
‘যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা কারও নাম উল্লেখ করছি না। কিন্তু এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য আমি পরীক্ষকদের অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে বলছি।’সোহরাব হোসাইন, পিএসসির চেয়ারম্যান
কমিটি সম্প্রতি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে ফল প্রকাশে দেরি হওয়ার জন্য পরীক্ষকদের দায়িত্বে গুরুতর অবহেলার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘ভয়াবহ দায়িত্বে অবহেলা’ হিসেবে।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন পরীক্ষককে আমরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি। এ জন্য তাঁদের উপযুক্ত সম্মানীও দেওয়া হচ্ছে। অথচ এমন অবহেলার সঙ্গে খাতা দেখেছেন, যা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। ফল দিতে দেরি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ পরীক্ষকদের গুরুতর অবহেলা।’
লিখিত পরীক্ষার খাতা যেসব পরীক্ষককে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অনেকে ঠিক সময়ের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করতে পারেননি উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছয় মাসে ১০০ খাতার মধ্যে মাত্র ১৫টি দেখেছিলেন। কয়েক দফা সময় নিয়ে যখন খাতা জমা দিয়েছেন, তাতেও অনেক ত্রুটি থেকে যায়। এসব ত্রুটিপূর্ণ খাতা যাচাই করে কমিটি দেখেছে, ৩১৮ জন পরীক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেউ কেউ পরীক্ষার্থীর কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য নম্বরই দেননি। অনেকে খাতার শেষে থাকা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। কোনো কোনো খাতায় পরীক্ষক নম্বরের যোগফলে ভুল করেছেন। অনেকে আবার এমনভাবে নম্বর দিয়েছেন, যা পুনর্মূল্যায়নের জন্য তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হয়েছে।
ত্রুটিপূর্ণ খাতার ব্যাপারে পিএসসির করণীয় জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো খাতায় ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষককে ডেকে এনে সংশোধন করিয়ে তাঁর স্বাক্ষর নেওয়ার নিয়ম। এখন একে একে ৩১৮ জন পরীক্ষককে ডাকতে হচ্ছে।’
এরই মধ্যে কয়েকজন এসে ভুল সংশোধন করেছেন উল্লেখ করে এই সদস্য বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা ২০–২৫ জন পরীক্ষককে পিএসসিতে ডেকে এনে ভুল সংশোধন করছি। অনেক পরীক্ষক ঢাকার বাইরে থাকেন। এ ছাড়া অনেকে ফোন ধরেন না। এভাবে ৩১৮ জনকে পিএসসিতে নিয়ে আসা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই পরীক্ষকদের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বে ‘চরম অবহেলা’ করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে পিএসসি কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁদের আর খাতা দেখতে দেওয়া হবে না। কাউকে কাউকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যতে তাঁদের খাতা দিলে যদি একই ভুল আবার করেন, তাহলে তাঁরাও বাদ পড়বেন। এভাবে পিএসসি যে শুধু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে তা নয়, যাঁরা ভালোভাবে খাতা দেখছেন এবং সময়মতো জমা দিচ্ছেন, তাঁদের তালিকাও করছে। তাঁদের আরও বেশি খাতা দেওয়া যায় কি না, সেটি ভাবছে।
সার্বিক বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা কারও নাম উল্লেখ করছি না। কিন্তু এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য আমি পরীক্ষকদের অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে বলছি।’