চাইলেই সম্ভব: হোম অফিস

বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই মানেই যে জীবন থমকে যাওয়া নয়, সে বার্তা দিচ্ছে করোনা অতিমারি। গোটা বিশ্বের মানুষ এখন অভ্যস্ত হচ্ছে নিউ নরমাল জীবনে। নতুন অভ্যস্ততায় তাকে গ্রহণ করতে হয়েছে অনেক কিছু, যা হয়তো কিছুদিন আগেও ছিল কল্পনাতীত।

জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থা-প্রতিষ্ঠান ছাড়া ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ অফিস। কিন্তু জীবন মানেই থেমে না যাওয়া, থমকে না দাঁড়ানো। তাই বিকল্প পন্থায় হলেও শুরু হয় কাজ চালিয়ে নেওয়ার অভ্যাস। তবে উন্নত বিশ্বে এমন অভ্যাসগুলো আরও বহু আগেই রপ্ত।

আরিফ রাব্বানি কাজ করেন আইটি বিভাগে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে সহকর্মীদের হোম অফিস শুরু হলে তাঁর দায়িত্ব হয় সবার সংযোগ নিশ্চিত করা। বাড়িতে বসেও অফিসের বিভিন্ন নেটওয়ার্কে এক্সেস নেওয়ার তদারকির মতো দায়িত্বটি পালন করেন তিনি। আরিফ রাব্বানি বলছিলেন, থ্রি–জি, ফোর–জি নেটওয়ার্কের জন্যই সম্ভব হয়েছে বাড়িতে বসে কাজ করা। হোম অফিসে মানুষ অভ্যস্ত হয়েছে জুম বা স্ট্রিমইয়ার্ড মিটিং করায়, স্ক্রিন শেয়ারিংয়ে, উইট্রান্সফার ব্যবহারে, ড্রাইভ ব্যবহারে, ব্যক্তিগত এবং নেটওয়ার্কিং করায়।

কয়েক মাসের হোম অফিসে অভ্যস্ত হয়েছেন অনামিকা মণ্ডল। তিনি কাজ করেন একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগে। অনামিকা বলছিলেন, কয়েক মাস ধরে ঘরে বসে কাজ করার ফলে চলাচল কম হয়েছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার অফিসে কাজ শুরু করলে নতুন করে অভ্যস্ত হওয়ার ভয়টা কাজ করছে। তবে এত দিন যে পরিবারকে সময় দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তা হোম অফিসের সুবিধা ছিল বলেই। হোম অফিসে মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে ছিল নিরাপদ। দক্ষতা বেড়েছে নানা কাজের। নিয়মিত কাজ ছাড়াও অন্যান্য আগ্রহের বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে মানুষ। একই সঙ্গে সে বুঝতে শিখেছে, একাও ভালো থাকা সম্ভব। আবার সশরীরে উপস্থিত না থেকেও মানসিকভাবে সংযোগের পদ্ধতি আয়ত্ত হয়েছে। তবে বাড়িতে বসে কাজের ক্ষেত্রে কতটা সময় একজন মানুষ কাজ করবে, তা নিয়ে আছে নানা মতামত। অনেকেই অভিযোগ করছেন, পরিশ্রম বেশি হচ্ছে।

হোম অফিস নিয়ে নতুন আইনের খসড়ার ঘোষণা দিয়েছে জার্মান শ্রমমন্ত্রী। ডয়েচে ভেলের অনলাইন প্রতিবেদন জানাচ্ছে, হোম অফিসের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ।

বাংলাদেশে যাঁরা গত কয়েক মাস ধরে হোম অফিস করছেন তাঁরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ থেকে তাঁরা অনেকটা সুরক্ষিত ছিলেন শুধু এ সুবিধার কারণে। গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়নি, বাইরে থেকে ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফেরার বিষয় ছিল না। তবে এর সবই সম্ভব হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ততায়। নতুন স্বাভাবিক জীবনে হোম অফিস এখন বাংলাদেশেও পরিচিত অভ্যস্ততা। প্রথমে নতুন এই সুযোগে সবাই ভীত হলেও, অনলাইনে চিকিৎসাসেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, অনলাইন ক্লাস বা ই-কমার্সের সঙ্গে যেমন সবাই অভ্যস্ত হয়েছেন, তেমনি অফিসের কর্মকর্তারা এখন জানেন নেটয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে জীবনটাকে এই সময়ে আরও সুরক্ষিত রাখার উপায়। তবে প্রত্যাশা যে ঘরে বসে কাজ করা মানুষেরা নিশ্চয়ই কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েই ভুলে যাবেন না এ সময়ের কথা। যেকোনো পরিস্থিতিতেই নিশ্চিত করতে হবে নিজের ও অন্যের সুরক্ষা। রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব।