সময় কম, কীভাবে চাকরির ভাইভার প্রস্তুতি নেবেন

দিনকে দিন চাকরির প্রতিযোগিতা বেড়ে চলেছে। একটি পদের চাকরির জন্য অনেকেই যোগ্য থাকেন। প্রতিযোগিতাও হয় যোগ্যদের মধ্যেই। যাপিত জীবনে পরিবার, কাজসহ নানা কারণে অনেক সময় চলে যায়। প্রস্তুতি সেভাবে নেওয়া হয় না। আর তাই অনেকের মধ্য একজন হওয়ার লড়াইয়ে নিজেকে তুলে ধরতে হয় একটু আলাদাভাবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাকরির ভাইভা হয় অল্প সময়ের নোটিশে। সে ক্ষেত্রে কীভাবে ভাইভা দেবেন বা প্রস্তুতি নেবেন, তার একটি ধারণা দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ক্যারিয়ার পরামর্শক জেটা ওয়ারউড।

প্রস্তুতি হলো সব সময়ের জন্য নিজেকে তৈরির অন্যতম পন্থা। সফলতার জন্য প্রস্তুতি আর প্রস্তুতির জন্যই সফলতা। এখনই সময় নিজেকে তৈরির। গাড়িতে কিংবা কোনো অন্য কাজে আছেন সব সময় প্রস্তুতির। সময়কে ফোকাস করে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। আর এ জন্য সব সময় সঙ্গে রাখতে হবে একটি নোটবুক ও কলম। যা কিছু শিখবেন, দেখবেন টুকে রাখবেন নোটবুকে। এ পরামর্শ জেটার। আর ভাইভা বোর্ডের প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবেন—

নিজেকে নিয়ে বলতে হলে

চাকরির ভাইভায় যদি নিজেকে নিয়ে বলতে হয়, তাহলে পূর্বের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে কাজে দেবে। এ প্রশ্নের জন্য আপনি কত দিন ধরে পড়েছেন অর্থাৎ শেষ অর্জিত ডিগ্রি পর্যন্ত নিয়ে বলাই ভালো। আর যদি সাম্প্রতিক কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তা–ও বলতে হবে। আর কেন আপনি এ চাকরি বা পেশাকে বেছে নিতে চান এবং কাজটি কেমন, তারও দু–চার কথা বলা ভালো। আর যে চাকরির জন্য ভাইভা দিচ্ছেন, ওই চাকরিসংক্রান্ত কোনো অর্জন বা অর্জিত জ্ঞান, আপনার কোনো আলাদা যোগ্যতা থাকলে তা–ও বলতে হবে সংক্ষিপ্তভাবে। আর শেষের আগে নিজের বর্তমান অবস্থা বা কী করছেন, তা বলতে পারেন। আর শেষে কেন এ চাকরি করতে চান, তা বলে শেষ করতে পারেন এ প্রশ্নের উত্তর।

কেন আপনার পছন্দ এ চাকরি

যে কাজ বা চাকরির জন্য ভাইভা দিতে যাচ্ছেন তার আগে ওই প্রতিষ্ঠান ও কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। আর এখন তো সব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ওয়েবসাইট আছে, সেখান থেকেও বিস্তারিত জানা যেতে পারে। ওই ওয়েবসাইট থেকে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, নিজের সম্পর্কে সেরা ও সঠিক তথ্যই সেখানে (ওয়েবসাইটে) থাকার কথা। প্রতিষ্ঠানের অর্জনের কথাও জেনে নিতে হবে ওয়েবসাইট থেকে। আর যদি ওয়েবসাইটে বিস্তারিত না পাওয়া যায়, তবে শেষ ভরসা গুগল আর কোনো ডকুমেন্ট।

আসলে সম্প্রতি ভারতের একটি রেলওয়ের চাকরিতে হাজারো আবেদন পড়েছিল। পদ কম, কিন্তু বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করায় সেটা নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছিল। আর এমন ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রশ্ন বেশি করা হয়ে থাকে।

কেন আপনাকে বেছে নেওয়া হবে

যদি ভাইভা বোর্ডে আপনার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন আমরা এ পদে আপনাকে বেছে নেব বা কেন আপনি এ পদের জন্য নিজেকে যোগ্য বলে মনে করেন।
এমন প্রশ্ন যেকোনো ভাইভার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রার্থীর উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনি হয়তো এরই মধ্যে অনেক চাকরির জন্য ভাইভা দিয়েছেন। তাঁরা মূলত আপনার কাছে জানতে চাইছেন কেন আপনি অন্যদের চেয়ে এ কাজের জন্য সেরা। আপনি কাজটি এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কতটুকু জানেন, তা–ও আসলে জানতে চাওয়া হয় এমন প্রশ্নে।

উত্তরের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত, তবে অল্প কথায় বলা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের নানা পণ্য, তাদের কাজ, সেলস বা মার্কেটিং, ভোক্তা নিয়েও বলা যেতে পারে। তাদের ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে হবে। এরপরই এ–সম্পর্কিত কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তা বলতে হবে। আর যে পদের জন্য ভাইভা দিচ্ছেন তা যে আপনি ভালো বোঝেন, জানেন তা প্রতি পদে পদে কথা বলার মধ্য তুলে ধরতে হবে। আর কাজের অভিজ্ঞতা বলার সময় দু–একটি উদাহরণও দিতে হবে। তবে উদাহরণ অনেক থাকতে হবে। কারণ, ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা আরও কিছু জানতে চাইতে পারেন। তাই নিজেকে সেভাবেই তৈরি করতে হবে।

যে পদের জন্য ভাইভা বোর্ড উপস্থিত হয়েছেন, সে পদ–সংক্রান্ত কোনো অর্জন থাকলে তা বলতে হবে নির্দ্বিধায়। এ–সংক্রান্ত উত্তরটি খুবই টার্নিং। কারণ, আপনার অভিজ্ঞতা এ পদের কাজে কোনো বাড়তি কিছু যোগ করবে কি না, সেটাই আসলে জানতে চান ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা। আপনার কথা তাঁদের মনে হওয়া চাই যে সেরা লোকটিকে তাঁরা বেছে নিতে যাচ্ছেন। কারণ, আপনাকে নিয়োগ দেওয়া মানেই হলো আপনার পেছনে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মতো। তাই অর্জনের কীভাবে আগের প্রতিষ্ঠানের বিক্রি–ব্যবসা বাড়িয়েছেন, আপনার কারণে কতটুকু বেড়ে, তার ধারণা দিতে হবে। বা আপনার নেওয়া পদক্ষেপে কীভাবে এগিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি, তা–ও তুলে ধরতে পারেন।

আর যাঁরা নতুন, প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য কীভাবে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবেন, তার একটি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দু–তিনটি উদাহরণ দিতে হবে।

নিজের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো কী

নিজের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গা নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরগুলোর ক্ষেত্রে সত্যটা বলাই ভালো। কারণ, এ প্রশ্ন আসলে একটু কৌশলী প্রশ্ন। আর এ জন্য করাও হয় এমন প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে শক্তির কথা বলতে গেলে কমপক্ষে তিনটির কথা উল্লেখ করবেন বিস্তারিতভাবে। আর দুর্বলতার একটি কথা বলতে হবে। আসলে এ প্রশ্নের উত্তর অনেকটা ওই আগের প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে কিছুটা মিলে যাবে। আসলে এর উত্তর দেওয়ার সময় উত্তরটি হতে পারে, ‘যখন আমি নতুন কোনো প্রজেক্টের কাজ শুরু করি, তখন বেশ উৎসাহ নিয়েই শুরু করি। আমি শিখিও অনেক কিছুই। দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যেতে চাই।’

চাকরি কেন ছাড়লেন

এ প্রশ্ন মূলত যাঁরা নতুন, তাঁদের করা হয় না। যাঁরা এর আগে নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, তাঁদের জন্য। এমনও হতে পারে ভালো ও প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনি গেলেন। তখন আপনার কাছে জানতে চাওয়া হবে, কেন সেই চাকরি ছাড়লেন। বেশি বেতনের আশা, স্বাস্থ্যসেবা, ইনস্যুরেন্স, বস ভালো ছিল না—জাতীয় কথা না বলাই ভালো। যদিও এগুলো হয়তো কারণ, তবে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে সব সময় ইতিবাচক থাকাটাই ভালো। এ ধরনের প্রশ্নের ফোকাস হওয়া উচিত এ কাজের আপনার উৎসাহ, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ এবং ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার কারণটি। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে আসলে এ প্রশ্নের জন্য যে উত্তর সাক্ষাৎকার বোর্ড জানতে চায়, তা হলো নতুন কিছু যোগ করতে, এখানে আসা বেতন নয়।

জেটা ওয়ারউড মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এ ছাড়া তিনি মধ্যপ্রাচ্যের এনএলপি লাইফ কোচিংয়ে পড়ান। এই ক্যারিয়ার পরামর্শকের অনেক ছাত্র বিশ্বের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি ১০ বছরে ধরে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মনোবিজ্ঞানের স্নাতক জেটা ওয়ারউড এর আগে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। জেটার পরিচয় বলতে গিয়ে বলা হয়, মূলত মানুষের সুপ্ত প্রতিভা তিনি বের করে আনতে জানেন। মানুষের শক্তি ও দুর্বলতার দিক চিহ্নিত করে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রশিক্ষণ দেন। আর তিনি সাফল্যর সূত্র হিসেবে বলে থাকেন, চর্চা, চর্চা এবং চর্চা। তথ্যসূত্র: আরব নিউজ

আরও পড়ুন