ভালোবাসা

.
.

এই শোনো, কাঁচাবাজারের টাকা রেখে যাও! মুনির অফিসে যাওয়ার আগে পথ আটকাল নাদিয়া। মুনির বিরক্ত। সাড়ে আটটায় অফিসের বাস ধরবে সে। ঘড়ি দেখে সময়টা আঁচ করে দাঁড়ায় মুনির,
কেন তোমারে না কালকে এক হাজার দিলাম?
সব শেষ। হিসাব দেব? গরুর মাংস চার শ। ডিম এক শ। ফার্মের মুরগি পাঁচ শ।
গরু আর মুরগি একসঙ্গে কিনছ? দরকার কী? আস্তে আস্তে খরচ করো।
আচ্ছা আজকে পাঁচ শ দিলে হবে।
মুনির বিরক্ত হয়ে পকেটে হাত দেয়। সাবধানে খরচ করতে হবে।
মু​ি্নরের মনে পড়ে দুপুরে অফিসের কলিগ সাবরিনার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ। মুনির দুটো এক শ টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বলে,
খুচরা নেই। রাতে নিয়ো। নাদিয়া ম্লান মুখে টাকাটা নেয়। মুনিরকে বিদায় দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। একটু পরেই বাবুন ঘুম থেকে উঠবে। তার স্কুলের নাশতা রেডি করতে হবে। চুলায় গরম পানি চড়িয়ে দেয় সে। বাবুনকে গোসল, খাওয়ানো, নিজের রেডি হওয়া, তারপর রিকশায় করে বাবুনের স্কুল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্লিপ্ত বসে থাকা। অন্য মায়েদের সঙ্গে রুটিন গল্পগুজব। ‘আচ্ছা ভাবি, আপনার ছেলেটা খুব শুকিয়ে যাচ্ছে। কেন হরলিকস দেন না?’ ‘কিচ্ছু খায় না, ভাবি। ওকে নিয়ে যে কী করি!’ এ-জাতীয় কথাবার্তা শেষ করে বাবুনকে নিয়ে আবার রিকশায় উঠে বসা। আফসোস এই জীবনে কোনো রোমাঞ্চকর কিছু হলো না। না করা হলো চাকরি। না ব্যবসা। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ যেন সংসারের চার দেয়ালে বন্দী থাকল। আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। নিজেকেই প্রশ্ন করে নাদিয়া। আচ্ছা, তুমি কি সুখী?
দরজা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে পায়চারি করে নাদিয়া। অযথাই টেনশন। মুনিরের ওপর ভীষণ রাগ হয় তার। এত ভালো একটা চাকরি করে অথচ বউয়ের সঙ্গেই যত হিসাব!
একবার ভাবে, এই অভিমান নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবে সে। প্রতিদিন এত অপমান যে আর সহ্য হয় না! পরক্ষণেই বাবুনের মুখটা দেখে চুপচাপ বসে থাকে নাদিয়া। ঠিক তখন ফোন দেয় রুমু আপা। বাবুনের বন্ধু রূপকের মা। ভাবি, আজকে কিন্তু ওদের স্কুলে দিয়ে গ্রিনরোড যাব। তুমি যাবা?

গ্রিনরোড কেন? কী ব্যাপার? রুমু আপা ফোনে বিদঘুটে টাইপের হাসি দিয়ে বলে, তোমাকে না সেদিন বললাম! আছে একজন। চাইলে একটু সেজেগুজে এসো। দেখা হলে বলব। ফোনটা রেখে ছটফটানি আরও বাড়ে নাদিয়ার। রুমু আপার কথাগুলো মাথার ভেতর ঘুরপাক খায় তার। আলমারি খুলে চমৎকার একটা শাড়ি বের করে নাদিয়া। ম্যাচিং করা ব্লাউজ বের করে। আয়নার সঙ্গে লাগানো টিপটা তুলে নেয়। স্মিত হেসে মুনিরের ছবিটার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, স্যরি মুনির। স্যরি!

এরই মধ্যে ঘুম থেকে ওঠে বাবুন। হাত-পা ছড়িয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে, মা, তুমি কোথায়? একা একা আমার ভয় করে।

নাদিয়া কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকে। তারপর সবকিছু ফেলে দ্রুত বাবুনের ঘরের দিকে পা বাড়ায়!