করোনায় ম্লান ইরানীদের নওরোজ উৎসব
গতকাল শুক্রবার ছিল ইরানে নওরোজ বা নববর্ষ। ইরান, ইরাক, তুরস্ক, আজারবাইজান, তুর্কমিনিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তানসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বসন্ত-পারস্য সৌরবর্ষের প্রথম দিন ‘নওরোজ’ পালিত হয়। নওরোজ ইউনেসকো কর্তৃক তালিকাভুক্ত অন্যতম প্রাচীন উৎসব।
নওরোজ ইরানিদের মূল উৎসব। নওরোজকে কেন্দ্র করে গোটা ইরানে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বছর শেষ হওয়ার আগেই সবার বাড়িঘর ধোঁয়া-মোছা অর্থাৎ পরিষ্কারের আয়োজন চলে। কেউ কেউ বাড়িতে চুনকাম-রং পর্যন্ত করেন। নওরোজ উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ থেকে ২০ দিন বন্ধ থাকে।
নওরোজের ছুটিতে ইরানিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। বছরের এ সময়েই তাঁরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে বেড়ানো, খোঁজখবর নেওয়ার পর্বটা সারেন। কেউ কেউ ছুটে যান মাশহাদ শহরে অবস্থিত হজরত আলী রেজার মাজারে। সেখানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নওরোজের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিগত বছরে ইরানের অবস্থা ও নতুন বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে অবগত করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। ইরানিদের কেউবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাগুলোয় বেড়াতে যান। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগই উত্তরের সবুজ, বনজঙ্গলে ভরা কাস্পিয়ান সমুদ্রের উপকূলকে বেছে নেন।
এ বছর দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে ম্লান হয়ে গেছে নওরোজ উৎসব। গত ফারসি বছরের শুরুতেও ইরানের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ বিপাকে পড়েছিল। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি মাশহাদ শহরের বক্তব্য বাতিল করেছেন। ইরানিরা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছেন।
নওরোজ পালিত হয়েছে ছোট্ট পরিসরে। কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যেতে চেয়েও ভাইরাসের কারণে নিজ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যেতে পারেননি। পালন করতে পারেননি নওরোজের অনেক রসম-রেওয়াজ। করোনাভাইরাসের কারণে ইরানিরা কোনো বাজার-সদাই করতে পারেনি। এ বছর ইরানের শিশুরা নওরোজ পালন করেছে পুরোনো জামাকাপড় দিয়ে। নওরোজ উপলক্ষে দাদা-নানার বাড়িতে গিয়ে নাতি-নাতনিদের বকশিশ নেওয়ার সংস্কৃতি, এ ক্ষেত্রে এ বছর তারা সেটা থেকে পুরোই বঞ্চিত হয়েছে। প্রতিবছর নওরোজ উপলক্ষে ইরানের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের দেশের বৈশাখী মেলার মতো হস্ত ও কুটিরশিল্প মেলা বসে। কিন্তু এবার কোথাও কোনো মেলা বসেনি। প্রতিবছরের মতো ধুমধামের সঙ্গে এ বছর নওরোজ উদযাপিত হওয়া তো দূরের কথা বরং করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। প্রিয়জনের বিচ্ছেদে কান্নার আওয়াজ এসেছে সহস্রাধিক পরিবার থেকে।
*লেখক: শিক্ষার্থী, আল-মোস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, মাশহাদ, ইরান