করোনা-বন্ড ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনৈক্য, ইউরো ছাড়ার হুমকি ইতালির

করোনা-বন্ড ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমত নয়। ছবি: সংগৃহীত
করোনা-বন্ড ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমত নয়। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মোকাবিলায় ক্লান্ত ইউরোপ। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি কোথায় হানা দেয়নি করোনা। লন্ডভন্ড ইতালিতে জরুরি অবস্থায় ভেঙে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনপ্রক্রিয়া। জরুরি অবস্থায় ব্যাহত সমগ্র ইউরোপের জনজীবন। প্রতিদিনই ইউরোপের বাসিন্দারা যেন গুনছে একটি মুক্তির প্রহর।

এর মধ্যেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে চরম মিত্র ইইউতে। ইতালি তো বলেই বসেছে, ইউরোপের হেডকোয়ার্টার ব্রাসেলস মৃত। এমনকি তারা ঐক্য ছাড়ার হুমকিও দিয়েছে। আরেক মিত্র পর্তুগালও সমালোচনায় মুখর ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর ওপর। স্পেনের গণমাধ্যমে ইউরোপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।

২৭ সদস্যের ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর প্রায় সবাই করোনায় পরাস্ত। দুর্যোগকালে ইউরোপের অর্থনৈতিক বণ্টন নিয়ে এবার পরম মিত্রদের মধ্যে বৈরিতা। করোনা মোকাবিলায় ইউরোপের যৌথ অর্থ সহায়তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর সম্মতি না থাকায় ইতালি, পর্তুগাল ও স্পেনে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

মহামারি করোনা মোকাবিলায় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে ৯টি ইউরোপীয় সদস্য দেশের উত্থাপিত দাবি আপৎকালীন বিশেষ করোনা-বন্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের উন্নত দেশগুলো অসম্মতি জানায়। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস ও অন্য উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলো বিপরীত অবস্থান নেয়। এতেই খেপেছে ইতালি, পর্তুগাল ও স্পেনের মতো দেশগুলো।

ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর প্রকাশ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইতালির ছয় ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে তীব্র মতবিরোধ এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে ইইউর উদ্দেশে বলেন, ইউরোপ কি সত্যিই আজ যুদ্ধক্ষেত্রে আছে? সেটা আমার উপলব্ধি হয় না। স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইইউর বর্তমান উদ্যোগকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দেন। শেষে ঐক্যে না পৌঁছে শেষ হয় কনফারেন্স।

ফরাসি কিছু গণমাধ্যমের দাবি, এমনকি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল স্বীকার করেছেন যে ইউরোপের স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ইউরো জোনের অর্থমন্ত্রীদের একটি কার্যত সমাধান নিয়ে আসতে দুই সপ্তাহের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার মাধ্যমে সম্মেলনটি শেষ হয়।

এদিকে ইউরোপের প্রত্যাখ্যানের জবাবে পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা নেদারল্যান্ডসের প্রস্তাবটি পাস না হওয়ার প্রধান বাধা হিসেবে দেখছেন। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ডাচদের অস্বীকারকারী হিসেবে বর্ণনা করেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী।

কট্টরপন্থী ন্যাশনালিস্ট ইতালির বর্তমান বিরোধী নেতা মাত্তেও সালভেনি অবশ্য দ্বিধাহীন কঠোরতার কথা শুনিয়েছেন। তাঁর মতে, আগে ইতালি করোনা জয় করে উঠুক তারপর আসবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত। এমনকি কোনো দ্বিধা ছাড়াই ইতালি ইউরো ছাড়তে প্রস্তুত। করোনা পরিস্থিতিতে ইউরোপের নেতাদের এমন অনৈক্য আর সিদ্ধান্তে না পৌঁছাতে পারা আরও বহু মানুষের প্রাণহানির কারণ হবে।

ইতালির কিছু গণমাধ্যম ইউরোপের সঙ্গে আলোচনাকে কুৎসিত আখ্যা দিয়ে বলেন, কার্যত প্রমাণ হলো ইউরোপ এখন মৃত।

এর আগে ইউরোপ থেকে সহায়তা চেয়েও না পেয়ে অবশেষে রাশিয়া ও চীন থেকে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ায় ইতালির প্রতি অসন্তোষ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো। তাঁর দাবি, ফ্রান্স নিজেও করোনা মোকাবিলায় সমস্যার মধ্যে রয়েছে, যেমনটা রয়েছেন ইউরোপের সব দেশ। ইতালির আরও ধৈর্যশীল হওয়ার দরকার ছিল।

এদিকে করোনা মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলো থেকে কার্যত ভিন্নপথ নিয়েছে সুইডেন। ইউরোপের সঙ্গে যৌথ কোনো পন্থা এড়িয়ে চলেছে তারা। সমগ্র ইউরোপ কার্যত লকডাউন হলেও ইউরোপ সুইডেন এখনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বজায় রেখে চলেছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটের নেতৃত্বদানকারী নেতা নাইজেল ফারাজ মনে করেন, এখানেই ইউরোপের শেষ। জার্মানি যখন ইতালির কাছে চিকিৎসা সরঞ্জাম দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখনই ইতালি অনুভব করেছে ইউরোপের থাকার অর্থ কী। ইউরোপ খুব দ্রুতই ভেঙে পড়বে বলে ফারাজ মনে করছেন।

এর আগে অভিবাসী সংকটে ইউরোপের ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে গ্রিস।

করোনা-বন্ড ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনৈক্য, ইউরো ছাড়ার হুমকি ইতালির। ছবি: সংগৃহীত
করোনা-বন্ড ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনৈক্য, ইউরো ছাড়ার হুমকি ইতালির। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রশ্নে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সম্মতিরও সমালোচনা করেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তিনি মনে করেন, ইউরোপ যদি এখন এই অর্থনৈতিক বন্ড ছাড়ে এটি ইউরোপের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখছেন তিনি। এই নিয়ে সবাইকে সতর্ক করেন তিনি।

এখন দেখার বিষয়, ইউরো জোনের অর্থমন্ত্রীদের বেঁধে দেওয়া দুই সপ্তাহের সময়ে কী সমাধান বেরিয়ে আসে। না হয় শঙ্কা শেষ পর্যন্ত কোথাই গিয়ে ঠেকছে এই বিরোধ। দেশে দেশে ঐক্য রাখা সম্ভব হবে? টিকবে তো ইউরোপ শেষ পর্যন্ত?