নকশার বৈচিত্র্যে কুমিল্লার খাদি পোশাকের বিক্রি ভালো

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি পোশাক পছন্দ করছেন ক্রেতারা। ছবিটি গতকাল শহরের রাজগঞ্জ এলাকা থেকে তোলা l এমদাদুল হক
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি পোশাক পছন্দ করছেন ক্রেতারা। ছবিটি গতকাল শহরের রাজগঞ্জ এলাকা থেকে তোলা l এমদাদুল হক

পবিত্র ঈদুল ফিতর যত ঘনিয়ে আসছে, কুমিল্লায় ঐতিহ্যবাহী খাদি পোশাক ও কাপড়ের বাজার তত জমে উঠছে। প্রতিটি দোকানেই দিনরাত ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

বিক্রেতারা বলেন, দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় নানা শ্রেণির মানুষের কাছে খাদি কাপড় ও পোশাকের কদর বেশি। পুরুষেরা কিনছেন পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। মহিলাদের প্রিয় থ্রিপিস ও শাড়ি। সেই সঙ্গে ‘ধুমছে’ বিক্রি হচ্ছে খাদি কাপড়ে তৈরি বিছানার চাদর ও নকশিকাঁথা। তাঁরা জানান, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে এ বছর নানা ধরনের নকশায় তৈরি করা হয়েছে খাদি কাপড়ের পোশাক।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের কান্দিরপাড়ে লাকসাম সড়কের দুপাশে ১৯টি খাদি দোকানে গিয়ে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কেউ একা, কেউবা দল বেঁধে আবার অনেকেই সপরিবারে কেনাকাটা করছেন।

কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, মনোহরপুর ও রাজগঞ্জে বর্তমানে অর্ধশতাধিক খাদি দোকান রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক রুচিশীল পোশাক তৈরি করে আনা হয়েছে। মিহি সুতার সঙ্গে মোটা সুতার ব্র্যান্ড এবং খাদির সঙ্গে রকমারি সুতার চেক বুনে কাপড়েও বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। আবার ব্লক দিয়েও তৈরি করা হয়েছে সুন্দর পোশাক। দামও ধরা হয়েছে মোটামুটি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।

এবারে খাদি পোশাকগুলোর মধ্যে সাদা ও রঙিন পাঞ্জাবি সর্বনিম্ন ৫৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা, মেয়েদের থ্রিপিস ৪৩০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, শর্ট ফতুয়া ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা, শাড়ি ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, জামা (শার্ট) ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দামে মিলছে। এ ছাড়া বিছানার চাদর ৩০০ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং নকশিকাঁথা ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কান্দিরপাড়ের কুমিল্লা খদ্দর নামের দোকানে কথা হয় বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার পরিবারের পাঁচ সদস্যের সবার জন্যই খাদি কাপড় কেনা হয়েছে। দামও নাগালের মধ্যে আছে।

জেলা শহরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকার কাউসার হাবিব ৯০০ টাকায় একটি ফতুয়া কিনে সন্তুষ্ট বলে জানান।

কান্দিরপাড় খাদি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ও কুমিল্লা খদ্দরের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঈদে এ পোশাকের চাহিদা বেশি। কুমিল্লা জেলার বাইরে থেকেও প্রচুর ক্রেতা আসে।

রাজগঞ্জ এলাকার খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, একসময় খাদি কাপড় অনেক ভারী ছিল। এখন ওই কাপড় প্রতিনিয়ত মিহি করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম এখন খদ্দর নিয়ে ভাবছে, গবেষণা করছে। এদের হাত ধরেই খাদি কাপড় এবং এ কাপড়ের পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার নকশায় বৈচিত্র্য আসছে।

প্রদীপ রাহা আরও বলেন, বর্তমানে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খদ্দরের কাপড়ের চাহিদা রয়েছে।

কুমিল্লার তিন নদী পরিষদের সভাপতি আবুল হাসানাত প্রথম আলোকে বলেন, খাদি কাপড়ের বুননে বৈচিত্র্য আসার ফলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার কাছে যুগের পর যুগ ধরে এই পোশাকের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রয়েছে।

ভারত উপমহাদেশজুড়ে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২১ সালে কুমিল্লায় খাদি কাপড় ও পোশাকের যাত্রা শুরু হয়। তখন সর্বত্র বিদেশি পণ্য বর্জনের আওয়াজ ওঠায় খাদি কাপড় ও পোশাক খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় খাদি। জেলা সদর ছাড়াও চান্দিনা, দেবীদ্বার এবং আদর্শ সদর উপজেলায় খাদি কাপড় তৈরি হয়।

কান্দিরপাড় এলাকার উল্লেখযোগ্য দোকানগুলো হচ্ছে খাদি মিউজিয়াম, নিপুণ খাদি ফ্যাশন, খাদি বিপণি, কুমিল্লা খাদি ভান্ডার, খাদি প্রিয়াঙ্গন, খাদি কুটির শিল্প ভবন, খাদি ইয়াছিন বস্ত্রালয়, কুমিল্লা খদ্দর, খাদি শিল্প ভবন, খাদি কটেজ, শিল্পী খাদি বিতান, খাদি বস্ত্র বিতান, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি-১, জ্যোৎস্না স্টোর, খাদি বসুন্ধরা, শুভেচ্ছা খাদি বিতান, আল আমিন খাদি ঘর, খাদি বস্ত্রালয় ও খাদি বস্ত্র বিতান। মনোহরপুরে রয়েছে পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি-২, রাজগঞ্জের আবরণী, প্রসিদ্ধ খাদি ভান্ডার ও খাদিঘর নামের দোকানগুলো।