কারসাজি করে কেউ সূচক নিয়ন্ত্রণ করছে

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী

বাজারের সাম্প্রতিক উত্থান-পতন দেখে আমার মনে হচ্ছে, কেউ বাজারের সূচক নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা যদি দেখি গত বছরের শেষের দিকে একনাগাড়ে সূচক প্রায় ৫০০-৬০০ পয়েন্ট বেড়েছিল। আবার ঠিক একইভাবে এখন এসে সূচক টানা কমেছে। অর্থাৎ উত্থানের সময় যেটুকু সূচক বেড়েছিল সাম্প্রতিক দরপতনে তার প্রায় সমপরিমাণ সূচক কমে গেছে। এর ফলে আমার ধারণা হচ্ছে কারসাজির মাধ্যমে কেউ সূচকটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাজারে একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেসব কোম্পানির মৌলভিত্তি বেশ ভালো সূচক কমলে সেসব কোম্পানিরও দরপতন ঘটছে। আবার সূচক যখন বাড়ে তখন বাছবিচার ছাড়া সব ধরনের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে সূচক বাড়লে সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে আর কমলে ভালো কোম্পানিরও শেয়ারের বেশি দরপতন ঘটছে। এটি কোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। এতে মনে হচ্ছে, বড় বড় মূলধনি কোম্পানির দাম কমিয়ে কেউ সূচক কমাচ্ছেন। একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে সংঘবদ্ধভাবে বাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুব দ্রুততার সঙ্গে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। বিনিয়োগকারীদের বলব, দাম বাড়লেই বাছবিচার ছাড়া যেকোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন এ প্রবণতা থেকে তাঁদের বেরিয়ে আসা উচিত। আবার দেখা যাচ্ছে, দরপতনের মধ্যেও কিছু মানহীন কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। কখনো কখনো এসব শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে বাজারে স্বচ্ছতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্য সব খাতের মতো পুঁজিবাজারেও সুশাসনের বড় ঘাটতি আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের যে আস্থা থাকা দরকার ছিল, সেখানেও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। নানা কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের এখন আস্থা কম। বাজার তদারকিতেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখনো বেশ দুর্বলতা রয়েছে। 

আমরা দেখলাম গত ৫-৭ বছরে কিছু নিম্নমানের কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদন করা হয়েছে। এসব কোম্পানি বাজারের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা তো রাখেইনি বরং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাতে মনে হচ্ছে আইপিও অনুমোদনের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি যেখানে আর্থিক খাতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। ঋণের নামে ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারেও আইপিও মাধ্যমে এ ধরনের লুটপাটের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। 
এ ছাড়া আমরা প্রায়ই দেখি ‘নন ইস্যু’কে ‘ইস্যু’ বানিয়ে কেউ কেউ বাজারে একধরনের প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়। প্রতিবছর বাজেট সামনে রেখে বাজারে একধরনের প্রত্যাশা তৈরি করা হয়। এটি মোটেই ঠিক না। এ ধরনের প্রত্যাশা তৈরি করে মূলত একটি গোষ্ঠী শেয়ারের দামের উত্থানপতন ঘটায়। অথচ বাজেটের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সরাসরি সম্পর্ক খুবই নগণ্য। পুঁজিবাজারে বাজেটের প্রভাব পড়ার মতো যৌক্তিক কোনো কারণও আমি দেখি না। তবুও বাজেট সামনে রেখে প্রতিবছর বাজারে গুজব ছড়ানো হয়। আমাদের বাজারের গভীরতা খুবই কম। তার ওপর তদারকি ও সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। তাই গুজব ছড়িয়ে এ বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়।

 সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি